
ষষ্ঠী থেকে আজকের দশমী, টানা পাঁচ দিনের পূজা-অর্চনা ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের। আজ (বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর) সকালে বিজয়া দশমীর বিহিত পূজা সম্পন্ন করে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি ও শান্তির জল ছিটানোর পর দর্পণ বিসর্জন হয়।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় আনন্দময়ীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় শুরু হয়েছিল এবারের উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা শেষে মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। আজ দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সেই দুর্গোৎসব আয়োজন।
দুর্গার বিসর্জন উপলক্ষে দশমীর দিনজুড়ে বিষাদের ছায়া ছিল ভক্তদের মাঝে। দেবী দুর্গার বিদায়ে নেয়া হয় নানা প্রস্তুতি। বিকেলে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে হাজার হাজার ভক্ত উপস্থিত হন। বিকেল ৩টায় পল্টন বদির স্কুলের আয়োজিত পূজামণ্ডপের বিসর্জনের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজ ঘাট দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট এবং বিভিন্ন এলাকার পুকুরেও দেয়া হয়েছে বিসর্জন।
দুপুরের পর থেকে ট্রাকে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বিসর্জন দেখতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষেরও ভিড় দেখা যায়।
রাজশাহীতে সিটি করপোরেশন ও নগর পূজা উদযাপন কমিটির আয়োজনে শহর ঘেঁষে বয়ে চলা পদ্মা নদীর তিনটি ঘাটে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়। বিকেল ৪টা থেকে নগরের বিভিন্ন মণ্ডপ মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে ঘাটে ঘাটে প্রতিমা নিয়ে আসেন ভক্তরা।
নিরাপদে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঘাটগুলোয় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়। নিরাপত্তার রাখা হয়েছে পুলিশ ও বিশেষ বাহিনী। পাশাপাশি নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে ঘাটে উপস্থিত রাখা হয়।
সারাদেশের মত সিলেটেও ব্যস্ততা দেখা যায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। বিকেল ৪টার পর থেকে শহরের ঐতিহ্যবাহী চাঁদনী ঘাটে শুরু হয় দেবী দুর্গার বিসর্জন।
দশমীর দিনে ময়মনসিংহে নেচে গেয়ে, সিঁদুর খেলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা। মণ্ডপগুলো পূর্ণ হয়ে যায় ভক্ত-পূণ্যার্থীদের পদচারণায়। বিকেল সাড়ে ৩টায় ময়মনসিংহ নগরীর দুর্গাবাড়ি মন্দির থেকে বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা বের হয়। নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাচারি ঘাটে গিয়ে শেষ হয়। পরে ব্রহ্মপুত্র নদে দেয়া হয় প্রতিমা বিসর্জন।
দেশব্যাপী প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর, নৌপুলিশ ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন টিম ও সোয়াট দলের সদস্য, সাদা পোশাকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।