Image description

বগুড়া সদরের গোকুল উত্তরপাড়ার একটি বাড়িতে গত তিন বছর ধরে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই বসবাস করছেন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটু বঞ্জেনজি বুলে। 

 

তিনি দাবি করছেন, আতিকুর রহমান পলাশ নামে পাখি ব্যবসায়ী তার পাসপোর্ট ও কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে তাকে জিম্মি করে রেখেছেন। থানায় লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। 

তবে পুলিশ ও ব্যবসায়ী বলছেন, তাকে কেউ জিম্মি করেননি। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের জেরে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সদর থানার ওসি হাসান বাসির জানান, এ ব্যাপারে করণীয় জানতে বিষয়টি পুলিশের বিশেষ শাখায় অবহিত করা হয়েছে।

অভিযোগ পাওয়ার পর গণমাধ্যম কর্মীরা বগুড়া সদরের গোকুল উত্তরপাড়ায় মো. আক্তারুজ্জামানের ছেলে আতিকুর রহমান পলাশের বাড়িতে যান। তিনতলা বাড়ির নিচতলায় পাখি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান পলাশ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ওপরে নেট টানিয়ে পাখির ব্যবসা করা হয়। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে পলাশ, তার স্ত্রী রোকসানা ও অন্যরা বাড়ি থেকে সরে যান। ফোন করেও তাদের সাড়া মেলেনি। বোন পলি বেগম জানান, পলাশ এ বাড়িতে থাকেন না। কোথায় থাকেন তাও তিনি জানেন না।

নিচতলার একটি কক্ষে দেখা মেলে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটু বঞ্জেনজি বুলের। তিনি নিজের নাম বলার পর জানান, তার বাড়ি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের এভিগামার কিউ/ইলোসুড কালামু কিনসাশা গ্রামে। বাবার নাম বঞ্জে জেনই। তার পাসপোর্ট নং: ওপি-১১৩৪৪৩২। তিনি বৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের পাখির ব্যবসা ও রপ্তানি করেন। গত ২০২২ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের বগুড়া জেলা সদরের গোকুল এলাকার শৌখিন পাখি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান পলাশের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে পলাশ তার কাছে পাখি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর তিনি ওই বছরের ১ নভেম্বর ভ্রমণ ভিসা নিয়ে পলাশের বাড়িতে আসেন। লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় পলাশ তার পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্র কেড়ে নেন। ইতোমধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি বাধ্য হয়ে তার বাড়িতেই আছেন। এটা এক ধরনের জিম্মি অবস্থা।

ভিটু বঞ্জেনজি বুলে অভিযোগ করেন, তিনি জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে পলাশের দাবিকৃত টাকার কথা দেশে তার স্ত্রী গ্লোরিয়া এনটাঙ্গা মুটোম্বোকে জানান। স্ত্রী গত ২০২৪ সালে কঙ্গোতে তার বাড়ি বিক্রি করে পলাশের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন। কয়েক দফায় অনলাইন ব্যাংকিং ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ডলার নিয়েছেন। এরপরও তিনি মুক্তি পাননি। এখন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ভিটু নিজ দেশে বাড়িতে ফিরতে পুলিশের সহযোগিতা চান। 

তিনি আরও জানান, স্থানীয় পাখি ব্যবসায়ী সোহেল রানার সহযোগিতায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনেক গোপনে পলাশের বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তাকে নিয়ে বগুড়া সদর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। থানার ওসি হাসান বাসির এ ব্যাপারে তদন্ত করতে এসআই মেহেদী হাসানকে নির্দেশ দেন। কিন্তু কয়েক দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ তার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পাখি ব্যবসায়ী সোহেল রানা অভিযোগ করেন, পলাশ তার কাছেও প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন।

পরবর্তীতে অভিযোগ প্রসঙ্গে পাখি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান পলাশ সাংবাদিকদের জানান, ভিটু বঞ্জেনজি বুলে গত ২০২২ সালের নভেম্বরে এক মাসের ট্যুরিস্ট ভিসায় তার বাড়িতে আসেন। ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে তিনি তার বাড়িতে থেকে পাখির ব্যবসা শুরু করেন। বিদেশ থেকে পাখি আমদানির চুক্তি হয় দুজনের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী কঙ্গোর ইটিএস এমবয়ো অ্যান্ড ফ্রেরেসেতে ১০ হাজার ডলার পাঠানোর বিনিময়ে ২০০ বিদেশি পাখি বাংলাদেশে পাঠানোর কথা ছিল; কিন্তু মাত্র ৬০টি জার্ডিন প্যারোট ও ১৫টি গ্রেড বুল টরাকো বুঝিয়ে দেন। পরের দফায় ২০২৩ সালের জুনে আরও ২০০ পাখি আমদানির জন্য ভিটুর মাধ্যমে আরও ১৫ হাজার ডলার পাঠানো হয়; কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে মাত্র ৯০টি পাখি বুঝিয়ে দেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন করে ২০০ পাখি আমদানির জন্য তার মাধ্যমে আরও ১২ হাজার ডলার পাঠানো হয়; কিন্তু ভিটু একটি পাখিও বুঝিয়ে দেননি। এখন ভিসা ও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরকারি সহযোগিতায় দেশে ফেরার কৌশল হিসেবে নিজেকে জিম্মি করে রাখার দাবি করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহফুজ আলম বলেন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটু বঞ্জেনজি বুলে গত ২০২২ সাল থেকে অবৈধভাবে বগুড়ায় অবস্থান করছেন। তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বগুড়ার কোনো ব্যবসায়ীর কাছে টাকা পাওয়ার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বরং অনেকে তার বিরুদ্ধে টাকা পাওয়ার দাবি করেছেন। ভিটুকে কেউ জিম্মি করে রাখেননি। তবে টাকা লেনদেনের জেরে পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভিটু সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন; বিষয়টি নোট করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এছাড়া অবৈধভাবে দেশে অবস্থানের বিষয়টি আলাদা প্রসঙ্গ।

তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মেহেদী হাসান জানান, আসামি ধরার জন্য তিনি রওনা দিয়েছিলেন। পথিমধ্যে শুনতে পারেন, বাদী ও বিবাদীর মাঝে মীমাংসা হয়ে গেছে। এ কারণে তিনি আর যাননি। বাদীপক্ষও যোগাযোগ করেননি। এলাকাবাসী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটু বঞ্জেনজি বুলেকে দেশে ফেরত পাঠাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।