Image description

কৃষিবিদ শেখ মুহাম্মদ মাসউদ 

আড়চোখে দেখা

ফেব্রুয়ারি ২০২৬ ইলেকশন হবে কিনা,  হলে কোন দল ক্ষমতায় আসবে এসব নিয়ে মিডিয়ায়  নানাধরণের বিশ্লেষণ চলছে। ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার পলায়নের পর আমাদের বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মোটামুটিঃ  নিশ্চিত ছিলেন যে, বিএনপি ২৬০-৭০ সিট নিয়ে ক্ষমতায় আসছে। কিছুদিন পর তারা ধারণা দিলেন ২৬০-৭০ না হলেও দুই  তৃতীয়াংশ মেজরিটি নিয়ে বিএনপির ক্ষমতা আসা কেউ ঠেকাতে পারবে না। অবশ্য ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের পর এখন কেউ কেউ বলছেন বিএনপি সিম্পল মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসবে।  আবার কেউ কেউ ভিন্ন কিছু ঘটার আশংকাও ব্যক্ত করছেন। 

যাহোক, হরেক জরীপ-বিশ্লেষণ আর বক্তৃতা-বিবৃতির তোড়ে প্রতীয়মান যে, হিসাব-নিকাশ কেচেগন্ডুষ করতে হবে। অংক সরল কিন্ত যোগ-বিয়োগ গুণ- ভাগ লম্বা। 

প্রথম প্রশ্ন,  ক্ষমতায় কে যায়,  দল নাকি ব্যক্তি? 
ধর্ম এবং ইতিহাস পরিক্রমা থেকে প্রতীয়মান যে, ক্ষমতায় ব্যক্তির প্রাধান্য বেশি। দল সেখানে সহযোগী মাত্র।

আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন,  "আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন আর যার থেকে চান ক্ষমতা কেড়ে নেন"। 

এখানে কোনো দলের কথা বলা হয়নি। ব্যক্তির কথাই এসেছে। বনী ইসরাইল তাদের জন্য একজন রাজার আবেদন করলে  আল্লাহ তালুতকে তাদের রাজা বানিয়েছিলেন। ইউসুফ আ. বা দাউদ আ. প্রমুখ নবী ব্যক্তিগত ক্যারিশমা দিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন। কুরআন হাদিসে আল্লাহ ব্যক্তির ক্ষমতা লাভের কথাই বলেছেন।

ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যায়,  ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিরাই তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন বা দল বানিয়ে ক্ষমতা দখল করেছেন। গণনেতৃত্বের অযোগ্যতা ও নানাবিধ ব্যর্থতার কারণে বৃহৎ সেনাবাহিনী বা দল থাকা সত্বেও ক্ষমতা থেকে অনেককে ছিটকে পড়তে হয়েছে। আমাদের দেশের নিকট ইতিহাসের দৃষ্টান্তকেও স্মরণ করা যেতে পারে। ১৯৯১ সনে দল হিসাবে বিএনপির তেমন কোনো অবস্থানই ছিলো না।  শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্যারিশমাতে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছিলেন। আজ যে ড. ইউনুস ক্ষমতায় সেটার পেছনেও  উনার অসামান্য ব্যক্তি অবস্থান ও সুনাম-সুখ্যাতি। জুলাই বিপ্লবে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

এ কারণে আগামীতে কোন দল ক্ষমতায় যাবে সে হিসাব না করে কে প্রধানমন্ত্রী/নির্বাহী প্রধান হতে পারেন সেটা আলোচনা করা অধিকতর বাস্তবানুগ  হবে বলে মনে হয়।
 
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে শীর্ষ ক্ষমতালাভের জন্য মোটাদাগে আলোচিত সম্ভাব্য চারজনের নাম বিবেচনায় আনা যেতে পারে। তারা হলেন -  জনাব তারেক রহমান,  ডা. শফিকুর রহমান,  জনাব মাহমুদুর রহমান এবং জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান। 

নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান বিবেচনায় আসবেন না।   

নির্বাচন হলে জনাব তারেক রহমান এবং ডা. শফিকুর রহমান এই দুজনের মধ্য থেকে একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দুজনের মধ্যে প্রতিযোগিতায় কে এগিয়ে সেটা নিয়ে আলোচনা তাই খুবই প্রাসঙ্গিক।  

জনাব তারেক রহমান হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান এবং দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রধান। এ দল তিন  তিনবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। দল হিসাবেও বিএনপি বেশ জনপ্রিয়।  সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, মেইনস্ট্রীম মিডিয়া, অলিগার্ক ব্যবসায়ী গ্রুপ, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বাম রাজনীতিক, এবং ইন্ডিয়া চাইবে মন্দের ভালো হিসাবে  তারেক রহমান ক্ষমতায় আসুক। 

তবে তার ক্ষেত্রে যেটি প্রণিধানযোগ্য সেটা হলো তিনি অনেকগুলো বছর দেশের বাইরে এবং জুলাই বিপ্লবের পর এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো তিনি দেশে আসেননি।  সাধারণ জনতা, রাজনৈতিক পরিমন্ডল এমনকি যারা তাকে মন্দের ভালো হিসাবে চাচ্ছেন তাদেরকেও তিনি এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত আস্থায়  আনতে বা নিতে পারেননি। একাডেমিক পারফরমেন্সেও তিনি খানিকটা পিছিয়ে আছেন। আর্থিক বিষয়ে তাঁর ব্যাপারে আওয়ামী- ভারতীয় মিডিয়া যে অস্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল তা দূর করতে পারননি। সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রমাণক কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই বললেই চলে। 

দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার কারণে গণমানুষের সান্নিধ্য থেকে তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। কেবল ডিজিটাল সংযোগ দিয়ে প্রত্যাশিত গণআস্থা কাঙ্খিত মাত্রায় উজ্জীবিত  হচ্ছে  না। গণ আকাঙ্খাকে যথাযথ উপলব্ধি  করার ক্ষেত্রে এটি প্রধান সমস্যা। কম্যুনিকেশন গ্যাপ কাটেনি। উপরন্তু, কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির সাহচর্যবলয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলেও তার নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের ইমেজ এখনো সাড়া জাগানো পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। তার ফিজিকাল অনুপস্থিতির কারণে মাঠ পর্যায়ে তাকে ঘিরে আলোড়ন গড়ে ওঠেনি। মিডিয়ায় প্রত্যক্ষ  অনুপস্থিতির কারণে তার কনফিডেন্স লেভেল সম্পর্কে সন্দেহের  অবকাশ রয়েই গেছে।

অধিকন্তু দলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ বেশ দুর্বল বলেই প্রতীয়মান।  প্রতিনিয়তই দলের নেতা-কর্মীদের লাগামহীন কথা ও কাজ ভোটারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং দল সমর্থন হারাচ্ছে। সুযোগসন্ধানীরা দলে ভিড়ে আপত্তিকর ভূমিকা পালন করায় পরিস্থতি সামাল দেয়া কঠিন হচ্ছে। বহিষ্কার করে এবং সতর্কীকরণ নোটিস দিয়েও আশানুরূপ সংশোধন সম্ভব হচ্ছে না।

সবকিছুর পরও এটা অনস্বীকার্য যে, তারেক রহমান দেশে এসে শক্তহাতে হাল ধরলে অবস্থা তার জন্য অনুকূল হবে। খালেদা জিয়া সামনে আসলে জনগণের আবেগ অনেক অনিশ্চয়তাকে দূর করে দেবে। তাই বিএনপি জোটের বিরুদ্ধে যদি কোনো শক্তিশালী জোট গঠিত না হয় তাহলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন বলাই যায়।  

এরপরের আলোচনায় আছেন ডা. শফিকুর রহমান। এটুকু  নির্দ্বিধায় বলা যায় যে,  ডা. শফিকুর রহমান স্বল্প সময়ে নিজেকে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছেন। জামায়াতের বাইরেও তিনি দলমত নির্বিশেষে অনেকের কাছে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম  হয়েছেন। ইন্ডিয়া বিরোধী এবং বিএনপির ইসলামপন্থী  সমর্থকরাও ব্যক্তি ডা. শফিকুর রহমানের লিডারশীপকে মূল্যায়ন করছেন। ডা. শফিকুর রহমানের হাতে আছে উল্লেখযোগ্য এক সুশৃঙ্খল জনশক্তি। পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের একটা বড় অংশ এমনটি ভাবছেন যে,  আওয়ামী লীগ-বিএনপি তো দেখলাম, এবার জামায়াতকে দেখব। 

ব্যক্তি হিসাবে ডা. শফিকুর রহমান বেশ স্মার্ট। একইসাথে বিনয়ী স্বভাবের মানুষ। দুয়ের সমন্বয় তার ব্যক্তিত্বকে বেশ মোহনীয় করে তুলেছে। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন সফল চিকিৎসক, সফল ব্যবসায়ী এবং একজন সফল উদ্যোক্তা। সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইসলামি ব্যাংকের পরিচালক ইত্যাদি বহু প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।  সরকারি চাকরি করার অভিজ্ঞতাও তার আছে।  ২৪ এর আগস্ট বিপ্লবের মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে এবং তার দলকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তার ক্যারিশমা লাইম লাইটে এসেছে। জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। তরুণরা তার নেতৃত্বের প্রতি বেশ  আস্থাশীল। 

তার নেতৃত্বে ইসলামপন্থী ও নিরেট বাংলাদেশপন্থী বিভিন্ন দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চলছে বলে জানা যায়। এধরণের উদ্যোগ সফল হলে জাতীয় নির্বাচনে সেটার প্রভাব খুবই গভীরভাবে অনুভূত হবে বলে রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের অভিমত। সেক্ষেত্রে  ডাকসু-জাকসুতে শিবিরের বিজয় একটি নতুনমাত্রা যোগ করেছে। তরুণ সমাজের আকাঙ্খাকে মূর্ত করে তুলেছে।

তবে অনেকেই ইসলামপন্থী  ডা.শফিকুর রহমানকে নেতা গণ্য করতে  ইতস্তত করছেন। ইসলামোফোবিয়ার বৈশ্বিক বাস্তবতায় তার ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয় মনে করছেন। অবশ্য ডা.শফিকের কৌশল  বেশ প্রো-একটিভ। ডা. শফিক এ সময়ে যেসব বক্তৃতা করছেন সেখানে তিনি ইসলামের কোনো কথাই বলছেন না। তাঁর কথায় কোনো ইসলামী এজেন্ডার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে না। তিনি একটি মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বলছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ হয়েছেন। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জামায়াত  ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন একটি গণতান্ত্রিক দল।  ডা. শফিকুর রহমান  জামায়াতকে তিউনিসিয়ার আন নাহাদা পার্টির মতো অধিকতর লিবারেল দলে পরিণত করতে সচেষ্ট। 

গবেষণা থেকে এও প্রতীয়মান যে, সাম্প্রতিক সময়ে যে সকল মুসলিম দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেসব দেশে স্থিতিশীলতা আনতে ইসলামপন্থীরা সক্ষমতা দেখিয়েছে। 

বাংলাদেশেও সবাই স্থিতিশীলতা   আনতে সচেষ্ট। ব্যতিক্রম হলো ভারত। তারা বাংলাদেশের পরিবর্তনকে তাদের সর্বাত্মক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে। বহুমুখী প্রতিবিপ্লবী তৎপরতাকে  মদদ দিয়ে তারা জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তনকে নস্যাৎ করতে বদ্ধপরিকর।  

যাহোক, বলছিলাম ব্যক্তি শফিকুর রহমানের নেতৃত্বের বলিষ্ঠ উত্থান নিয়ে। তিনি একই সাথে পাশ্চাত্য এবং চীনের সখ্যতা অর্জন করেছেন বলেই প্রতীয়মান। কূটনৈতিক মহলে তার ইমেজ বেড়েছে। তিনি জামায়াত সম্পর্কে পূর্বধারণা বদলাতে চমক সৃষ্টি  করেছেন। ইসলামোফোবিয়া, নারী অধিকার, গণতান্ত্রিক পরিচ্ছন্নতা, গভর্নেন্স, প্রভৃতি প্রশ্নে  জামায়াতের অবস্থান স্পষ্ট করার মাধ্যমে তিনি ইইউ, ওয়াশিংটন এবং বেজিং-এর  আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশে জামায়াতের সাথে কাজ করতে ওইসব দেশের সংকোচ অনেকাংশে কেটে গেছে বলেই সাম্প্রতিক যোগাযোগ, ওঠাবসা ও কথাবার্তা থেকে আঁচ করা যাচ্ছে।

ঢাকায় ১৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে জামায়াতের বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে ডা. শফিক একাধিকবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে তিনি চিকিৎসকগণের আপত্তি উপেক্ষা করে দৃঢ়চিত্তে প্রত্যেকবারই তার বক্তৃতা অব্যাহত রাখেন। এটি সামগ্রিক ভাবে তার ব্যক্তিত্ত্বের প্রতি সকল মহলের শ্রদ্ধা ও প্রশংসা অর্জন  করে।

এরপর সুযোগ থাকা সত্বেও দেশেই নিজের হার্টের বাইপাস সার্জারি করানোর মাধ্যমে দেশের প্রতি তার কমিটমেন্টের এক ব্যতিক্রমী নজীর স্থাপিত হয়। জনমনে তার মর্যাদা এক অনন্য উচ্চতায় উঠে যায়। তার নেতৃত্বের প্রতি গণআস্থা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। 

এখন ডা. শফিকুর রহমানের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হলো ইসলামপন্থী অপরাপর দলগুলোকে সাথে পাওয়া। একইসাথে জাতীয়ভাবে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য ডানপন্থী রাজনৈতিক ও সিভিল সোসাইটি ব্যক্তিত্বকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে জামায়াতের প্রতি পূর্ব থেকে বিদ্যমান গতানুগতিক ধারণাগত বিরোধিতার দেয়ালকে ভেঙ্গে ফেলা আবশ্যক। ইতোমধ্যেই ডা. শফিকুর রহমান এক্ষেত্রে খানিকটা হলেও  তার সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। অনেকেরই জামায়াতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তবে সমস্যা হলো জামায়াতের  দলীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বেশিরভাগেরই জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি বা গণ পরিচিতি খুব কম। সরকার বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দলটির  প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। ছায়া সরকার গঠন করে দেশের নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে অনুশীলনের সুযোগও তাদের হয়নি। জোট ছাড়া এককভাবে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন  করার অভিজ্ঞতাও তাদের কম। এসব সীমাবদ্ধতা কাটাতে বাস্তবানুগ কর্মকৌশল তৈরি করাটা সময়ের দাবি।

মিডিয়া আনুকূল্য জামায়াতের নেই বললেই চলে। মিডিয়া মোকাবিলার জন্য চৌকস ও বাকপটু নেতা বা সুশীল বুদ্ধিজীবীর দিক থেকেও জামায়াতের অবস্থান সুবিধাজনক নয়। এসব সীমাবদ্ধতা কাটানো সম্ভব হলে তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন। 

এরপরে আমাদের তালিকার তৃতীয় ব্যক্তি ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি  ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের আইকন। তার দক্ষতা, সততা এবং অভিজ্ঞতা সর্বজনবিদিত। তরুণ সমাজসহ জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থীদের সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয়।  

জামায়াতের আমীর যদি মনে করেন তিনি নিজে নির্বাহী প্রধান না হয়ে ড. মাহমুদুর রহমানকে সামনে আনবেন এবং নিজে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবেন তাহলে ড. মাহমুদুর রহমানও প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতে পারেন। 

ড. মাহমুদুর রহমানকে সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোলার চেষ্টাও চলছে  বলে শুনা যায়। ড. ইউনুসের বিকল্প হিসেবে সরকারের হাল ধরার জন্য এই বিকল্প নিয়ে কোনো কোনো মহলে গুঞ্জন আছে।

আর বিএনপি জামায়াত যদি গঠনমূলক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে এনজিও - সুশীল - ইন্ডিয়া- এসট্যাবলিশমেন্ট সমঝোতায় জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান যদি সরকারপ্রধান হয়ে যান তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। 

পরিশেষে গুরুত্বপূর্ণ পীড়াদায়ক কথাটা না বললেই নয়,  বাংলাদেশপন্থী রাজনীতির বড় সমস্যা হলো আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক ব্যবস্থাপনা এবং সংস্কৃতির গতিপথ সনাতনভাবে ভারত-ইসরাইল-আমেরিকা- ইউরোপ ইত্যাদি দেশ ও তাদের গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান এবং করপোরেট শক্তিগুলোর দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানাভাবে  নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। তাদের প্রভাবমুক্ত রাজনীতির দেশজ সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানকেও তারা যে যেভাবে পারে সেভাবে দখল করতে হাজারো সাধনায় লিপ্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নেতারাও ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অথবা বুঝে বা না বুঝে বিভিন্ন ফাঁদে জড়িয়ে যান এবং যাচ্ছেন। এই দড়ি টানাটানিতে জুলাই চেতনা ফিকে হওয়ার পথে। ১৭৫৭, ১৮৫৭, ১৯০৫, ১৯৪৭, ১৯৭১, ১৯৭৫ এর বাঁকগুলো এবং যোগসূত্র বা ধারাবাহিকতা যেমন নানাভাবে দুর্বল ও দূষণের শিকার তেমনি ক্ষমতার পালাবদলকে সামনে রেখে সুযোগসন্ধানীরা তাদের তত্ত্ব ও নেতৃত্ব চাপিয়ে দিতে আদাজল খেয়ে লেগেছে। দেশের জনগণের ইচ্ছা পছন্দ সেখানে অনেকটাই গৌণ। তাই দেশের আগামী নেতৃত্ব নিয়ে বলিষ্ঠ  আশাবাদ একেবারেই অনিশ্চিত  বলে মনে হয়।