মারুফ কামাল খান সোহেল
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানের সংস্কার করার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গড়া কমিশন ইতোমধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে। সংবিধান নিয়ে নানান আলাপ ও বিতর্ক হচ্ছে এখন। এ মুহূর্তে আমাদের বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ণে বিদেশী সহায়তার তথ্যও আলোচিত হতে পারে বলে আমার ধারণা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব সাংবাদিক মারুফ কামাল খান সোহেল।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া তার সেই পোস্টের বাকি অংশ যুগান্তর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছিল। তখনকার আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে সেই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। সংবিধানের খসড়া করা হয়েছিল ইংরেজিতে। এর বাঙলা তরজমা করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছিল ড. আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে।
আনিসুজ্জামান সে সময়কার কাজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানিয়েছেন, ১৩ জুন কামাল হোসেন ভারত হয়ে ইংল্যান্ডে রওনা হন। উভয় দেশেই সংবিধান-বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমাদের প্রস্তাবিত সংবিধানের মূল কাঠামো সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেন। আলোচনা যে হয়েছে, সেই খবর কাগজে বের হয়, যদিও তার মর্মবস্তু কী, তা প্রকাশিত হয়নি। এতেই দেশে রটে গেল যে, ভারত সরকারকে দিয়ে সংবিধানের খসড়া অনুমোদন করিয়ে আনতে কামাল হোসেন দিল্লি গেছেন, বিলেত যাওয়াটা আসলে কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে এই যাত্রায় লন্ডনে গিয়েই আইনি খসড়া-প্রণেতা রবার্ট গাথরিকে আমাদের সংবিধান-রচনায় সহায়তাদানের জন্যে নিয়োগ করে আসেন ড. কামাল।
ভারতীয় ও ইংরেজ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংবিধানের কাঠামো নিয়ে আলাপ করার তথ্য ছাড়াও আনিসুজ্জামান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান। সেটা হলো- সংবিধানের খসড়া রচনায় একজন বিদেশীর সহায়তা নেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে আনিসুজ্জামানের ভাষ্য- কামাল হোসেন এক পর্যায়ে স্থির করলেন, তার ইংরেজি খসড়ার চূড়ান্ত রূপদানের জন্যে একজন পেশাদার আইনি খসড়া-প্রণেতার, ইংরেজিতে যাকে লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান বলা হয়, তেমন একজনের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। দেশে তেমন কেউ ছিলেন না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাইভেট মেম্বারস বিল তৈরি করতো একটি আইনি প্রতিষ্ঠান। তার এক সদস্যকে এই কাজে নিযুক্ত করা হলো কমনওয়েলথ সচিবালয়ের সৌজন্যে।
রবার্ট গাথরি ছিলেন একজন আইরিশ আইনজীবী। ভালো মানুষ এবং স্বভাবত পরিশ্রমী। তবে আমাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন ধারণা তার ছিল না’।