Image description
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–কে ঘিরে টিএসসি কেন্দ্রে আগে থেকেই পূরণ করা ব্যালট পেপারের অভিযোগ তোলেন উমামা ফাতেমার প্যানেল স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। তবে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য।

 

রুপাইয়া ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, তিনি ও তার এক বান্ধবী একসঙ্গে ভোট দিতে যান। ভোটকেন্দ্রের এক নম্বর টেবিল থেকে বান্ধবীকে যে ব্যালট দেওয়া হয়, সেটিতে আগেই ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এস এম ফরহাদের নামের পাশে।

 

বিষয়টি নিয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পোলিং কর্মকর্তাদের অবহিত করলে কর্মকর্তারা জানান, এটি ওই শিক্ষার্থীর ভুলও হতে পারে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত পোলিং কর্মকর্তা রুমানা পারভীন এ্যানী সেদিন বলেন, “ওই শিক্ষার্থী ব্যালট নিয়ে বুথে প্রবেশ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেরিয়ে এসে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর আমরা সব ব্যালট পেপার পরীক্ষা করেছি, কিন্তু কোথাও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরে অভিযোগকারীকে একটি নতুন ব্যালট দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি শিক্ষার্থীর ভুলও হতে পারে।”

তিনি আরও জানান, সকালে ব্যালট বাক্স খোলা ও সিলগালা করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সবার সামনে ব্যালট বিতরণ হওয়ায় কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ নেই।

এদিকে টিএসসি কেন্দ্রে অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ওই ছাত্রী ভোটকেন্দ্রে একাধিকবার সন্দেহজনক আচরণ করেছেন।

কমিশনের ভাষ্যমতে, সেদিন সকাল ১১টার দিকে ওই ছাত্রী ভোট দিতে গিয়ে দাবি করেন তার ব্যালটে আগেই দুটি প্রার্থীর পক্ষে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল। কর্তব্যরত কর্মকর্তারা তৎক্ষণাৎ ব্যালটটি আলাদা করে সংরক্ষণ করেন এবং তাকে নতুন ব্যালট প্রদান করেন। এরপর তিনি পুনরায় ভোট দেন।

তবে ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ করা হয়। উপস্থিত শিক্ষকদের বর্ণনাও কেন্দ্র প্রধানের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন জানান, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে- সংশ্লিষ্ট ছাত্রী তার ব্যালট পেপার নিয়ে মোট চারবার ভোট বুথে প্রবেশ করেছেন। প্রথমবার তিনি ছিলেন ৪০ সেকেন্ড, দ্বিতীয়বার ৬৬ সেকেন্ড, তৃতীয়বার মাত্র ২ সেকেন্ড এবং চতুর্থবার প্রায় ১০ মিনিটেরও বেশি সময়। এ সময় তিনি বুথের বাইরে এসে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় যুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, “ওই ছাত্রী ভোট দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। তবে তার বারবার বুথে প্রবেশ ও কথোপকথন আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ও সন্দেহজনক মনে হয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি।”

উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনের দিন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ভিপি প্রার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা অভিযোগ করেন, টিএসসি কেন্দ্রে আগে থেকেই পূরণ করা ব্যালটে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ জোটের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের পক্ষে ভোট চিহ্নিত ছিল। তার এক বন্ধু ব্যালট নেওয়ার পরই ওই চিহ্ন দেখতে পান বলে তিনি দাবি করেন।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা অভিযোগটি তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অভিযোগটি আরো বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে।