Image description

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যয়ের চিত্র আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের অভ্যন্তরে কয়েকটি গরু অবাধে ঘুরে বেড়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে চলছে তীব্র সমালোচনা।

স্থানীয়রা বলছেন, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়—দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালটি নানা অনিয়ম, অবহেলা ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে জর্জরিত। ফলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর এটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল সংকট এখনো রয়ে গেছে। চিকিৎসকের ৫৮টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৩০ জন। সিনিয়র কনসালটেন্টের ১০টি পদের মধ্যে ৯টি, জুনিয়র কনসালটেন্টের ১৩টির মধ্যে ৮টি, অ্যানেসথেটিস্টের ৩টির মধ্যে ২টি এবং রেজিস্ট্রারের ৯টির মধ্যে ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। নার্সের ৮৭টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৯টি।

রোগীদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অকার্যকারিতা, দায়িত্বহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা ও দালালদের আধিপত্যের কারণে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রক্তসৈনিক বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. আল-আমিন রাজু বলেন, ‘শেরপুরের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল হওয়ার কথা এই হাসপাতালের। কিন্তু এখন এটি যেন ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমরা দ্রুত সেবার মান উন্নয়ন ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাচ্ছি।’

‘আজকের তারুণ্য’-এর সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফল।’

সামাজিক কর্মী ও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সাবেক সংগঠক মোর্শেদ জিতু ফেসবুকে লেখেন, ‘হাসপাতালে গরু চলাচল নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই অবস্থা ভয়াবহ হয়েছে।’

ঘটনার বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে গরু পাহারা দেওয়া আমার দায়িত্ব নয়।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন এবং আর ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে শেরপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘ঘটনার পর আমি হাসপাতালে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের অবহেলার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. সেলিম মিয়ার বক্তব্য দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’