Image description
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) একনায়ক শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য পদ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের বিতর্কিত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সেখানে ছাত্রলীগের মনোনয়নে ভোট করা তৎকালীন জিএস গোলাম রব্বানীর উদ্যোগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করা হয়। তবে সেই সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন। 

 

২০১৯ সালে ৩০ মে মাসে ডাকসুর দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী সভায় হাসিনাকে ‘আজীবন সদস্য’ করা হয়। 

তখন ডাকসুর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছিলেন, ‘গত সভায় আমাদের এজেন্ডাটি অনানুষ্ঠানিকভাবে থেমে থাকলেও আজকে এ প্রস্তাবটি একেবারে সর্বসম্মতিতে পাশ হয়েছে। আজকে থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ডাকসুর আজীবন সম্মানিত সদস্য হিসেবে গৃহীত হবেন। ’

এরপর ডাকসুর প্যাডে এক বিবৃতিতেও হাসিনাকে আজীবন সদস্য পদ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে ডাকসুর জিএস রাব্বানীর স্বাক্ষর থাকলেও ভিপি নুরুল হক নুরের স্বাক্ষর ছিল না।

সেই সময় গণমাধ্যমকে নুর বলেছিলেন, ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আমি এজন্যই স্বাক্ষর করিনি কারণ ১ নম্বর সিদ্ধান্তে (প্রধানমন্ত্রীর সদস্য পদ) আমার এবং সমাজসেবা সম্পাদক আখতারের সমর্থন ছিল না। ’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সদস্যপদের বিষয়ে আমরা আগের বক্তব্যে যেটা বলেছিলাম- না, ডাকসুর গঠনতন্ত্রেও এ রকম কোনো বিধান নাই। গঠনতন্ত্রে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি আগে ছিল কিন্তু পরে সেটা তুলে দেওয়া হয়েছিল।’

সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন ছাত্রনেতা রাশেদ খান জানান, হাসিনার আজীবন সদস্যপদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নুর। প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী লীগ নুরের ওপর একের পর এক হামলা করে। গত ১৯ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে এমন পোস্ট করেছিলেন রাশেদ।

গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকেই আলোচনায় আসে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ‘আজীবন সদস্য’ হওয়ার বিষয়টি।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, ডাকসুতে শেখ হাসিনার আজীবন সদস্য পদ বহাল থাকছে কিনা। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন নব নির্বাচিত ডাকসুর প্রতিনিধিরা।

এ বিষয়ে ডাকসুর নব নির্বাচিত এজিএস মহিউদ্দিন খান গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ডাকসুর আগামী সাধারণ সভায় আমরা শেখ হাসিনার সদস্যপদ বাতিলের দাবি উত্থাপন করব। আশা করি, অধিকাংশের বা সর্বসম্মতিক্রমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ডাকসুতে খুনি ও স্বৈরাচারী হাসিনার আজীবন সদস্যপদ থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই বা থাকতে পারে না।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. ইকবাল হায়দার একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের সরকারে মদতপুষ্ট ডাকসু প্রতিনিধিরা এমন একটি বিতর্কিত ও অযৌক্তিক একটা সিদ্ধান্ত নেয়। ডাকসু প্রতিনিধিরা শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ ভোটে মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। আমাদের প্রথম কার্যনির্বাহী সভায় কিছুটা আনুষ্ঠানিকতা ছিল। পরবর্তী মিটিংয়ে এ বিষয়টি অবশ্যই তোলা হবে।

২০১৯ সালের ২৩ মার্চ ডাকসুর প্রথম কার্যনির্বাহী সভায় সংগঠনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিনা অর্নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব তুলেন। সে সময় ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ২৩ জন প্রতিনিধি তাতে সমর্থন দেন।