Image description

ওয়াশরুমে নামাজ পড়া কেন জায়েজ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১৯৭৮-২০০০ সাল পর্যন্ত ছাত্রশিবির ওপর নির্যাতনের ১৭ ফিরিস্তি তুলে দীর্ঘ এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাবির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে জাকসুতে সাংস্কৃতিক পদে নির্বাচন করা প্রার্থী আলী জাকি শাহরিয়ার। 

আজ রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ আইডিতে দেওয়া পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি। 

ফেসবুক পোস্টে আলী জাকি শাহরিয়ার বলেন, ওয়াশরুমে নামাজ পড়া প্রসঙ্গে-ওয়াশরুমে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। মাসয়ালা হলো সময় হলে নামাজ পড়ে নিতে হবে, সেটা যতই সংকটপূর্ণ অবস্থা হোক না কেন। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি যদি এতই কঠিন হয় যে, ওয়াশরুমে নামাজ পড়ার দরকার হচ্ছে তাহলে সেটাই করতে হবে। 

খোমিনি ভাই যেটা বলেছেন, সেটা ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্বই দশকের চিত্রকে টেনে। যখন কোনো শিবিরকর্মী পেলে তার উপর চলত অকথ্য নির্যাতন, অত্যাচার। পরে যখন ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় তখনকার সময়ে নামাজ পড়লেই তাকে ধরে নেয়া হত শিবির। শিবির সন্দেহে সকল ধরনের হেনস্তা, নির্যাতন করা হত শিবির সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে। শিবির হলে মেরে ফেলা তো জায়েজ তখনও ছিল, ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত ছিল। নব্বই দশকের মত রিসেন্ট সময়গুলোতে নামাজ পড়লেই শিবির সন্দেহে নির্যাতন করা না হলেও সন্দেহ করা হত। 

এখন তৎকালীন সময়ে নামাজ পড়লেই যাকে শিবির হিসাবে ট্রিট করা হচ্ছে সে তার নামাজটা কিভাবে পড়বে ভাই? সেটা হতে পারে গোপন কোনো কক্ষে, ইশারায়, রুম লক করে বা হতে পারে সেটা ওয়াশরুমে গিয়ে ইশারায়। আপনি ভাবুন তো কেউ টিএসসির কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন করে কি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে সে আর স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারবে সেখানে? তাকে সবাই শিবির হিসাবে ট্রিট করবে। এখানে ছাত্রশিবিরের ওপরে হওয়া নির্যাতনের ইতিহাস দিচ্ছি এটা দেখে বুঝতে পারবেন ওয়াশরুমে নামাজ পড়া প্রাসঙ্গিক কিনা।

১৯৭৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে জাসদ ছাত্রলীগ, মুজিববাদী ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন একসাথে রড, হকিস্টিক, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। তৎকালীন প্রক্টর সেলিম আল দীনসহ কিছু শিক্ষক শিবিরের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালায়।
১৯৮১ সালে MH হলে মিলাদুন্নবী সাঃ উপলক্ষে আলোচনা সভা আয়োজন করলে ছাত্রলীগ, বাম মিলে ছাত্রশিবিরের মনির, বেলাল, রব্বানী, বারী নামে কয়েকজন ভাইকে মারাত্নকভাবে আহত করে। তাদেরকে ভিসির গাড়িতে করে ঢামেকে পাঠানো হয়।

১৯৮৭ সালের ১ ডিসেম্বর তাদের হামলায় রড, হকিস্টিক, কিরিচ দিয়ে ২০ জনকে আহত করে এবং ১০ টি কক্ষ জা/লিয়ে দেয়া হয়। SSB হলের সভাপতি ইউসুফ আলী ও এনায়েন হোসেন মা/রাত্নক আ/হত হন। ১৯৮৮ সালের ১১ই অক্টোবর রসায়ন বিভাগের শিবিরকর্মী জহিরুল ইসলামকে ছাত্রদল মা/রাত্নকভাবে ছুরিকাঘাত করে। 

১৯৮৯ সালের ১৫ই আগস্ট আল-বেরুনী হলের ১১০৭ নং রুমে পরীক্ষার প্রস্ততি নেয়ার সময় শিবির নেতা নাদির আহমেদের উপর হামলা করে গুরুতর আহত করে। প্রশাসনের সহযোগিতায় সমঝোতা হলেও ছাত্রদল ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আবারও শিবিরের উপর হামলা করে। এতে করে সভাপতি মমতাজুর রহমান, সাংগাঠনিক সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, SSB সভাপতি নজরুল ইসলামসহ ২৫ জন মারাত্নকভাবে আহত হয়। ৪টি হলে শিবিরের রুমগুলো ভাঙচুর করা হয়। আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হলে সেখানেও ছাত্রদল নৃশংস হামলা করে।

ছাত্রশিবিরের উপর হামলার আগে ছাত্রদলের অস্থানীয় গ্রুপের পরিকল্পিত হামলার শিকার হয় কবির, হালিম, রোকন, তাপস। এভাবেই কবির হত্যার ব্লুপ্রিন্ট আঁকা হয়। কবির হ/ত্যায় ২০ জন শিবির নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু এগুলো সাজানো প্রমাণিত হওয়ায় তারা বেকসুর খালাস পায়। তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবার পরও তথাকথিত ২২ সংগঠন একত্রিত হয়ে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। সেই সাথে ২৪ জন শিবিরের নেতা-কর্মীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করে। তৎকালীন ভিসি কাজী সালেহ ও বামপন্থী শিক্ষকদের ষড়যন্ত্রের ফলে ২৪ জন শিবিরকর্মীকে সার্টিফিকেট ছাড়াই ছাত্রজীবন শেষ করতে হয়।

আরও পড়ুন: ‘সেই আম্মুর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আজ জাকসুর জিএস’

(প্রকাশ্য তৎপরতা বন্ধ করে রাখা হয় এরপর। তারপর শুরু হয় শিবির উৎখাত অভিযান) ১৯৮৯ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর শিবির কর্মী ইলিয়াস (ইংরেজি), সাখাওয়াত (সরকার ও রাজনীতি) ক্লাস করতে এলে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা মারাত্নকভাবে আহত করে। ১৩ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা ভর্তিচ্ছু একজন ছাত্রকে শিবিরকর্মী সন্দেহে ক্যাফেটেরিয়ায় আটকে রেখে একঘন্টা নির্যাতন করে ভর্তি না হওয়ার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। ১৬ সেপ্টেম্বর সরকার ও রাজনীতি বিভাগে ভর্তি হতে আসা শিবিরকর্মী আনোয়ার ও তার খালাত ভাই সাখাওয়াত হোসেনকে প্রক্টর ড. সুভাষ চন্দ্রের সামনেই মারাত্নক আহত করা হয়। তাদেরকে কবির হত্যার আসামি বলে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ৯ নভেম্বর ছাত্রদল আল-বেরুনি হলের শিবিরিকর্মী সাজ্জাত হায়াত খান, সালেহ আহমেদ, বদরুল ইসলামকে মা/রাত্নকভাবে ছু/রিকাঘাত করে।

১৯৯০ সালের ৭ জুন সন্ত্রাসের নায়ক আব্দুল আউয়াল মোল্লা, লুৎফুল কবির ও মানিকের নেতৃত্বে গণিত বিভাগের শিবিরকর্মী শামসুল আলমকে কলা ভবনের সামনে মারধর করা হয় এবং জাকসু ভবনে নিয়ে রড দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। ১৭ জুন রসায়ন বিভাগের ছাত্র মোত্তালিব হোসেনকে MH হলে লোহার রড দিয়ে প্রহার করা হয়। তার হাত ভেঙে যায় এবং মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। 

১৯৯২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীর নামের ভর্তিচ্ছু ছাত্রকে শিবির কর্মী সন্দেহে ছাত্রদলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী মজিবুর রহমান আল-বেরুনী হলের ৩২৫ নং রুমে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এসময়ের পরপরই ছাত্রদল এবং বাম সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য কতিপয় বামপন্থী শিক্ষকদের সাথে গোপন এক বৈঠকে মিলিত হয় এবং ঐ দিন রাতেই বিভিন্ন হলে নামাজী ছাত্রদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তথাকথিত সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের সন্ত্রাসীরা শিবির কর্মী সন্দেহে শহীদ সালাম-বরকত হলের ছাত্র আমিনুল ইসলাম (রসায়ন), আব্দুল্লাহ আল মামুন সবুজ (পদার্থ বিজ্ঞান), আশরাফ হোসেন খান (পদার্থ বিজ্ঞান), মোজাম্মেল হোসেন তুহিন (পদার্থ বিজ্ঞান), শফিকুল ইসলাম (পদার্থ বিজ্ঞান), আলাউদ্দিন (ইংরেজি), মওলানা ভাসানী হলের মোখলেসুর রহমান খান (ইংরেজি), মীর মশাররফ হোসেন হলের আবুবকর সিদ্দিক (ভূগোল) কে রাতের আঁধারে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসাবে পরিচিত আল-বেরুনী হলের ২০৩, ৩২৫ ও ২৩০ নম্বর কক্ষে।

এই নির্যাতনের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্রদলের সন্ত্রা/সী আমিনুল হক আলম, আসাদ উল্লাহ, ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো, মাহবুব আলম তালুকদার হিরো, ফয়সাল মারুফ মিলন, হায়দার আলী, কামরুজ্জামান জাপান, আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, জাভেদ ইকবাল, জহিরুল ইসলাম খোকন, মুজিবুর রহমান, আতিয়ার রহমান, সাধন। ছাত্রফ্রন্টের আফজালুর রহমান কপিল, রফিকুল ইসলাম। জাসদ ছাত্রলীগের মুক্তা, আওয়ামী ছাত্রলীগের মুহিবুল্লাহ, নাহিদ, দুরন্ত বিপ্লব। ছাত্র ইউনিয়নের সাগর, সরোয়ার ও ইমরান।

এই বর্বর হায়েনার দল নিরীহ ছাত্রদের পা ছাদের সাথে ঝুলিয়ে তাদেরকে বেদম প্রহার করে, চোখে মুখে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেয়, পেপসির বোতল দিয়ে শরীর ও মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। তাদেরকে বৈদ্যুতিক শকও দেয়া হয়। এভাবে রাতভর সন্ত্রাসীরা পালাক্রমে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় এবং ভোরে এইসব নির্যাতিত ছাত্রদের হাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ককটেল তুলে দিয়ে তৎকালীন হল-প্রভোস্ট বাদী হয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। এই মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসীচক্র শুধু নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি, বিভিন্ন হলের ১৪ জন নামাজী ও নিরীহ ছাত্রকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে।

১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর ছাত্রদলের কতিপয় সন্ত্রাসী চক্র শিবির-কর্মী মোখলেসুর রহমানকে তার পিতার সামনেই ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে আহত করে। তার পিতার অনুনয় বিনয়ে কোন কর্ণপাতই করেনি এই নরপিশাচরা। ১৯৯৩ সালের ১০ই জানুয়ারি তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সেক্রেটারি শিবির-নেতা কামাল আহমেদ শিকদার ক্লাস করতে গেলে জাসদ ছাত্রলীগের মুক্তা, আওয়ামী ছাত্রলীগের নাহিদ হাসান ও আইয়ূব আলী শেখ ডেইরী ফার্ম গেটের কাছে তাকে বেদম প্রহার করে। তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তাকে গুরুতরভাবে আহত করে। ১০ই জুলাই '৯৩ ছাত্রদলের সন্ত্রা/সীরা শিক্ষকদের সামনেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র আব্দুল্লাহেল কাফীকে নির্মমভাবে প্রহার করে।

১৯৯৪ সালের ১৬ই আগস্ট শিবির কর্মী কামরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৪-'৯৫ শিক্ষাবর্ষে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির মৌখিক পরীক্ষা দিতে মওলানা ভাসানী হলে এক বন্ধুর কক্ষে ওঠে। কামরুল ইসলামকে শিবির কর্মী সন্দেহে ছাত্রদলের ফরহাদ মাজহারের নেতৃত্বে ৮/১০ জন সন্ত্রাসী তাকে পড়ার টেবিল থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় ৩৩২ নম্বর কক্ষে। কামরুলকে কিল, ঘুষি ও লাথি দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। পরে তার পকেটে শিবিরের ডায়েরী দেখে নিশ্চিত হয়ে সন্ত্রাসীরা সারারাত অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় লাঠি, রড, কিরিচ, পেপসির বোতল ও অন্যান্য ধারাল অস্ত্রের সাহায্যে নির্মম নির্যাতন চালায়। সন্ত্রা/সীরা উপর্যুপরি আঘাতে তার হাত ও মাথা ও শরীর ক্ষতবিক্ষত করে। তার আর্তচিৎকারে চারদিক প্রকম্পিত হলেও সন্ত্রা/সীদের ভয়ে কেউ সাহয্যের জন্য এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি।

রাত আরো গভীর হলে সন্ত্রাসীরা আবারও খুনের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এবার কামরুলের আর্তচিৎকার যেন বাইরে থেকে না শুনা যায়, এজন্য তার মুখে কাপড় গুজে দেয় খুনি হায়েনার দল। ওরা সারারাত ধরে পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে কামরুলের হাত ও চোয়াল ভেঙে দেয়। পিপাসায় কাতর হয়ে; আল্লাহ গো বাঁচাও, পানি… পানি… বলে চিৎকার করলেও ওরা তাকে সারারাত একফোটা পানিও খেতে দেয়নি। বরং তাকে ‘নির্যাতন করা হয়নি’ এই মর্মে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।

১৭ আগস্ট '৯৪ সকালে মওলানা ভাসানী হলের দুজন সিকবয় শফিক ও বাবুলকে দিয়ে মুমূর্ষু কামরুলকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তার অবস্থা মারাত্মক দেখে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। সন্ত্রা/সীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে না দেয়ায় বেবীটেক্সীযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, কিন্তু সাভার বাজারের কাছে পৌছাতে না পৌছাতেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, শহীদ কামরুল ইসলাম আল্লাহর রাহে পাড়ি জমান (ইন্নাল্লাহে……… রাজেউন)। পরে সাভার থানার পুলিশ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে জঙ্গলাকীর্ণ স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শহীদ কামরুল ইসলামের চিহ্নিত খু/নীরা ক্যাম্পাসের সর্বত্র পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে বেড়ালেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

(আবারো প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু) ১৭ই জুলাই, ১৯৯৫; ফার্মেসি শেষ-পর্বের ছাত্র ও শাখা সেক্রেটারি শিবির-নেতা মুহাম্মদ আলী ভাইকে শিবির হিসাবে চিহ্নিত করে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক কামাল উদ্দিন হলে ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে পাশ/বিক কায়দায় নির্যাতন করে শিবির সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করে। পরে বিভাগীয় শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সে সন্ত্রা/সীদের কবল থেকে ছাড়া পায়। এরপর মুহাম্মদ আলী নিরাপত্তাহীণতার কারণে দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। সম্মানিত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে সে হলে ফিরে আসে। কিন্তু হলে ফেরার পরই তাকে ও শিবিরকে নিয়ে শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র।

১৯৯৫ সালের ৯ই নভেম্বর। অন্যান্য দিনের মতোই শুরু হয়েছিল জাবি ক্যাম্পাসের জীবন যাত্রা। নিয়মমাফিক অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ক্লাসসমূহ। বিভিন্ন পর্বের পরীক্ষাও শুরু হয়েছিল যথারীতি। সবকিছু মিলিয়ে ক্যাম্পাসে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছিল। এই স্বাভাবিকতার সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্রশিবির কর্মীরা আল্লাহু-আকবর ধ্বনি দিয়ে ক্যাম্পাসে তার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে। বিভিন্ন হলের সাধারণ ছাত্ররা শিবির-কর্মীদের সাথে স্বত:স্ফূর্তভাবে একাত্ম ঘোষণা করে। ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের সন্ত্রাসীরা ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে আত্মপ্রকাশ করায় তাদের অবাধ লুটপাট, টেন্ডার-বাক্স ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং নারী নির্যাতন ও ব্যভিচার বন্ধ হয়ে পড়ার আশংকায় শিবিরকে প্রতিহত করার ষড়যন্ত্র করে। এইসব সন্ত্রা/সীরা বিভিন্ন অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শিবির-কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

সাধারণ ছাত্র ও শিবির-কর্মীদের সম্মিলত প্রতিরোধের ফলে ছাত্রদলের সন্ত্রা/সীরা হল ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে ভিসি অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা অবহিত হয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। পারতেন সমঝোতার মাধ্যমে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু সমঝোতার দিকে না গিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন পুলিশ ও সশস্ত্র সন্ত্রা/সীদের ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। সাধারণ ছাত্র ও শিবির-কর্মীরা বার বার ভিসি-র সাক্ষাৎপ্রার্থী হলেও তিনি তাদের সাথে সাক্ষাতের সময় করতে পারেননি। বরং তিনি ন্যাক্কারজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ ছাত্রদের পড়ার টেবিল থেকে তুলে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, কুচক্রী ভিসি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী ও অন্যান্য বামপন্থী শিক্ষকদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিনা অপরাধে প্রায় অর্ধশত শিবির-কর্মী ৩ মাসাধিককাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মানবেতার জীবন যাপন করে। এদিকে ক্যাম্পাসে শুরু হয় নার/কীয় বর্বরতা, যা চেঙ্গিসী নৃশংসতাকেও হার মানায়। তাদের আক্রমণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ও দৈনিক আল-আমীন পত্রিকার জাবি সংবাদদাতা আসাদুজ্জামানকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা তাকে মারাত্মকভাবে আহত করে। ঐদিন সন্ধ্যায়ই সন্ত্রাসীরা একজন পথিক ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের ২জন স্কুলছাত্র ধরে এনে অ/মানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাদের হাত-পায়ের হাড়গুলো ভেঙে দেয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এরপরের দিন ১০ নভেম্ব ১৯৯৫ থেকে শুরু হয় ছাত্রদলের শিবির শুদ্ধি-অভিযান। তারা বিভিন্ন হলের নামাজী ছাত্রদের তালিকা তৈরি করে রাতের আঁধারে তাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধরে নিয়ে যায় আল-বেরুনী হলের ৪০১, ৪০২, ৪০৩ ও ৪০৪ নম্বর কক্ষে। সেখানে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হল থেকে বের করে দেয়। এরপর রাত্রে ছাত্রদলের সন্ত্রা/সীরা বিভিন্ন হলে শিবির নেতা-কর্মীদের শতাধিক কক্ষ ভাংচুর করে এবং ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। এদের হাতে মারাত্মকভাবে আহত হয় আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহবুবুর রহমান, মাহফুজুর রহমান, মুরাদ, আশরাফুল ইসলাম এবং আলী আজগর।

১০ই নভেম্বর ‘৯৫ থেকে শুরু হয় ছাত্রদলের শিবির শুদ্ধি-অভিযান। তারা বিভিন্ন হলের নামাজী ছাত্রদের তালিকা তৈরি করে রাতের আঁধারে তাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধরে নিয়ে যায় আল-বেরুনী হলের ৪০১, ৪০২, ৪০৩ ও ৪০৪ নম্বর কক্ষে। সেখানে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হল থেকে বের করে দেয়। এরপর রাত্রে ছাত্রদলের সন্ত্রা/সীরা বিভিন্ন হলে শিবির নেতা-কর্মীদের শতাধিক কক্ষ ভাংচুর করে এবং ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। এদের হাতে মারাত্মকভাবে আহত হয় আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহবুবুর রহমান, মাহফুজুর রহমান, মুরাদ, আশরাফুল ইসলাম এবং আলী আজগর।

১২ নভেম্বর ৯৫ ছাত্রদলের এই নরপিশাচরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটের কাছে বোরখা পরিহিতা এক ভর্তিচ্ছু ছাত্রীকে তার বৃদ্ধ পিতার কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী গজারী বনে নিয়ে যায় এবং তার উপরে পালাক্রমে পাশ/বিক নির্যাতন চালায়। (সূত্র:দৈনিক ভোরের কাগজ১৩/১১/৯৫) ছাত্রদলের সন্ত্রা/সীদের শিবির শুদ্ধি-অভিযান ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার ফলে শতাধিক শিবির-নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। ফলে তাদের স্বাভাবিক ছাত্রজীবন চরমভাবে ব্যাহত হয় এবং সংগঠন তার প্রকাশ্য তৎপরতা বন্ধ করে।

১২ই জুন ১৯৯৬ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলেও ১ জুলাই ১৯৯৬ ক্যাম্পাসে টিকতে না পারা ছাত্ররা ক্যাম্পাসে হলে থেকে স্বাভাবিক ছাত্রজীবন অব্যাহত রাখার গণতান্ত্রিক ও নায্য দাবি নিয়ে জাবি ক্যাম্পাসে যায় এবং ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করতে যায়। কিন্তু তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভিসি তাদের দাবি মেনে নেয়া তো দূরের কথা, কোন কিছু না শুনেই উল্টো অন্যায়ভাবে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আবারও দীর্ঘদিন কারাবাস করে বছরের শেষের দিকে কারামুক্ত হয় অর্ধ-শতাধিক শিবির নেতা-কর্মীরা। জেল থেকে মুক্ত হলেও এসব ভাইয়েরা আর ছাত্রত্বের দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে যেতে পারেননি। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে শতাধিক শিবির নেতা-কর্মীর স্বাভাবিক ছাত্রজীবন।

১৯৯৯-২০০০ সেশনে প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগে অপেক্ষমান তালিকা হতে ভর্তি হতে আসা এক ভর্তিচ্ছুকে শিবির-কর্মী সন্দেহে কলাভবন থেকে ধরে এনে কামাল উদ্দিন হলের গেস্ট রুমে আটকিয়ে বেদম প্রহার ও অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে শিবির-সংক্রান্ত তথ্য বের করার চেষ্টা করে। এতে মুজিববাদী ছাত্রলীগের তুহিন, ইমরুল, আজিম, নুর হোসেন সৈকত, বারীণ, নাটক-নাট্যতত্ত্বের শৈবাল, ফার্মেসীর মঞ্জুর, কম্পিউটার বিজ্ঞানের সিরাজী নেতৃত্ব দেয়। শহীদ সালাম-বরকত হলে ও আল-বেরুনী হলে শিবির-কর্মী সন্দেহে নির্মম নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের এইট মার্ডারকে কেন্দ্র করে শিবির-কর্মী সন্দেহে বিভিন্ন হলে নামাজী ছাত্রদের তালিকা তৈরি করে বহু সংখ্যক নিরীহ ছাত্রকে নির্যাতন ও নাজেহাল করে। ইতিপূর্বে ছাত্রশিবিরকে ইসলামের পক্ষে কথা বলার অপরাধে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দিলেও ধর্ষণে সেঞ্চুরি করার পুরস্কার (?) স্বরূপ ছাত্রলীগের কতিপয় কুখ্যাত নেতা-কর্মীর পরীক্ষা ঠিকই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিক-বেডে নিয়েছিল।