
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ৩৩ বছর পর। গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনেক নাটকীয়তার পর শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসুর ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।এই নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের ভূমিধস জয় হয়েছে। জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয় লাভ করেছে তারা।
শিবিরের প্যানেলের যারা জয় লাভ করেছেন তারা হচ্ছেন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ইংরেজি বিভাগের (৪৮তম ব্যাচ) মাস্টার্স শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (৪৯ ব্যাচ) মাস্টার্স শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল হাসান। এজিএস (ছাত্রী) পদে দর্শন বিভাগের (৪৮ ব্যাচ) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা।
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ফার্মেসি বিভাগের আবু উবায়দা উসামা। পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর। সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি। সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান উদ্দিন।
নাট্য সম্পাদক হিসেবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের রুহুল ইসলাম। সহ-ক্রীড়া (ছাত্র) পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মাহাদী হাসান। সহ-ক্রীড়া (ছাত্রী) পদে গণিত বিভাগের ফারহানা লুবনা। আইটি ও গ্রন্থাগার পদে ফার্মেসি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের রাশেদুল ইমন লিখন। সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন পদে মাইক্রোবায়োলজি (ছাত্র) তৌহিদ ইসলাম, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন (ছাত্রী) পদে ফার্মেসি বিভাগের নিগার সুলতানা।
স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের হুসনী মোবারক। পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তানভীর রহমান মনোনীত হয়েছেন। এছাড়াও কার্যকরী সদস্য পদে রয়েছেন - ফাবলিহা জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন, নুসরাত জাহান ইমা, হাফেজ তরিকুল ইসলাম ও আবু তালহা
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ইতিহাস গড়ে জয় লাভ করে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকেই ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে প্রার্থীরা জয়ী হন। ডাকসুর মোট ২৭টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয় লাভ করে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের প্রার্থীরা।
ডাকসু ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) সর্বমোট ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট।
জিএস পদে এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর বারী হামীম ৫ হাজার ২৮৩ ভোট পেয়েছেন।
এজিএস পদে মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত জোটের ফাতেমা তাসনিম জুমা ১০ হাজার ৬৩১ ভোট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে একই প্যানেলের ইকবাল হায়দার ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট, কমন রুম-রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে একই প্যানেলের উম্মে সালমা ৯ হাজার ৯২০ ভোট, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে এই প্যানেলেরই জসীমউদ্দিন খান ৯ হাজার ৭০৬ ভোট (যিনি জুলাইয়ে চোখ হারান), এই প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন ৭ হাজার ২৫৫ ভোট, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আসিফ আব্দুল্লাহ ৯ হাজার ৬১ ভোট, এই প্যানেল থেকেই ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ ৭ হাজার ৩৮, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া ১১ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে সদস্য হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন- সাবিকুন্নাহার তামান্না (১০ হাজার ৪৮ ভোট), সর্বমিত্র (৮ হাজার ৯৮৮ ভোট), আনাস ইবনে মুনির (৫ হাজার ১৫ ভোট), ইমরান হোসেন (৬ হাজার ২৫৬), তাজিনুর রহমান (৫ হাজার ৬৯০), মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ (৫ হাজার ১৫), বেলাল হোসাইন অপু খান (৪ হাজার ৮৬৫), রাইসুল ইসলাম (৪ হাজার ৫৩৫), মো. শাহিনুর রহমান (৪ হাজার ৩৯০), মোছা. আফসানা আক্তার (৫ হাজার ৭৪৭) ও রায়হান উদ্দীন (৫ হাজার ৮২ ভোট)।
ডাকসুতে ২৮টি পদের জন্য মোট ৪৭১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হয়েছে।
এর আগে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর শেষ হয় ভোট গণনা। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় ভোট প্রদান শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে দীর্ঘ লাইনের ফলে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।