Image description
 

শর্ত পূরণ না করতে পারলেও আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিবন্ধন পেয়ে থাকে অনেক দল। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন কিছু করার থাকে না।

 
 
এমন পরিস্থিতিতে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে নিবন্ধন পাওয়ার পথ সীমিত করছে সংস্থাটি।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। এতে আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে কমিশন তাদের আবেদন বাতিল করে দেয়। কিংবা নিবন্ধন দেওয়া থেকে বিরত থাকে।  

তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে পরে সেসব দল আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে ইসিকে নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশনা নিয়ে আসে। সেক্ষেত্রে কমিশনের তেমন কিছু করার থাকে না। ফলে অনেক দলের যোগ্যতা না থাকা সত্বেও নিবন্ধন পেয়ে যায়।

কমিশন এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি পথ খুঁজে বের করেছে। সেটি হলো কোনো শর্ত পূরণ না করার কারণে সংশ্লিষ্ট দল নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে, তা লিখিত আকারে জানিয়ে দেওয়া হবে।  

এতে কেউ আদালতে গেলেই আর নিবন্ধন পাবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে ইসির চিহ্নিত করা অযোগ্যতার বিষয়টি ভুল প্রমাণ করে রায় আনতে হবে। এতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যবারের মতো এবারও এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এতে ১৪৩টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছিল।  প্রথম দফায় কোনো দলই শর্ত পূরণ না করায় সকলকেই সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে বলেছিল ইসি।  

তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৮৪টি দল সাড়া দিলেও অন্যরা সাড়া দেয়নি। ৮৪টি দলের মধ্যে আবার ৬২ টি দল ঘাটতি পূরণ করতে তথ্য জমা দিয়েও শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তাই বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ২২টি দলের মাঠপর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা চলছে।  
 
এর মধ্যে থেকেই দেওয়া হবে নিবন্ধন। আর ১২১টি দল নিবন্ধনের অযোগ্য হওয়ায় তার কারণ উল্লেখ এরইমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২২টি দলের মধ্যেও কোনো দল নিবন্ধন না পেলেও সেই দলকেও কারণ উল্লেখ করে চিঠি দেবে কমিশন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, কোনো দল আবেদনের পর প্রাথমিক বাছাই বা অন্য কোনো পর্যায়ে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট দলকে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয় না।  

তিনি বলেন, নিবন্ধন না দেওয়ার কারণটিও তাদের লিখিত আকারে জানানো হয় না। ফলে পরে সংশ্লিষ্ট দলগুলো আদালতে গিয়ে আদেশ নিয়ে আসে। যেহেতু কমিশন আনুষ্ঠানিক কোনো দলিলাদি দেয় না, তাই এটি সহজ হয়। এখন আমরা নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণ সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি। এদের অন্তত ১১টি দল আদালতের রায়ের ভিত্তি নিবন্ধন পেয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সিংহ প্রতীকে, একই বছর ৯ মে ডাব প্রতীকে বাংলাদেশ কংগ্রেস, ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপি, ২০২৩ সালের ৮ মে ইনসানিয়াত বিপ্লব আপেল প্রতীকে, একই দিন মটরগাড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদকে নিবন্ধন দেয় ইসি।

নিবন্ধন ইতিহাসে আদালতের আদেশে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন পায় জুলাই অভ্যুত্থানের পর। আদালতের আদেশে গত এক বছরেই ছয়টি দল নিবন্ধন সনদ আদায় করেছে নিয়েছে। এদের মধ্যে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ঈগল প্রতীকে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), একই বছর ২ সেপ্টেম্বর ট্রাক প্রতীকে গণ অধিকার পরিষদ ও কেটলি প্রতীকে নাগরিক ঐক্য, ১৭ সেপ্টেম্বর মাথাল প্রতীকে গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দেয় ইসি।  

আর চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ফুলকপি প্রতীকে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে ও ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টিকে (বিএমজেপি) রকেট প্রতীকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।

আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এ ছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এ প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে এসব নিয়ম কানুনই সাধারণত খেয়াল করা হয়।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ দলগুলোর তথ্যাদি সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করা হয়। পরে মনোনীত দলগুলোর বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে দাবি-আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করে কমিশন। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে সংস্থাটি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়।  

দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।