Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে প্রথাগত হাতে গোনা পদ্ধতিতে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর সিনেট ভবনে কেন্দ্রীয়ভাবে গণনা শুরু হয়। তবে গণনার গতি অত্যন্ত ধীর হওয়ায় শুক্রবার বিকেল অথবা রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত ফলাফল পেতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।

গণনার শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হল সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়। রাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলাম, মীর মশাররফ হোসেন, আ ফ ম কামালউদ্দিন ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য হলের গণনা এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত ১১টি হলের ফল তৈরি হলেও তা ঘোষণা দেওয়া হয়নি। গণনার সময় পোলিং এজেন্টরা উপস্থিত থাকলেও প্রাথমিক ফল সংবাদমাধ্যম বা প্রার্থীদের জানানো হয়নি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, একসঙ্গে ফল ঘোষণা করা হবে।

গণনার পুরো কার্যক্রম সিনেট ভবনে স্থাপিত এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। তবে স্ক্রিনগুলোতে ফলাফল সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। মধ্যরাত অবধি অনেক শিক্ষার্থী গান-বাজনার মাধ্যমে সময় কাটালেও ধীরগতির কারণে তারা ধীরে ধীরে এলাকা ত্যাগ করেন। বর্তমানে সিনেট ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম।

নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী বলেন, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা সারাদিন ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালনের পর রাতভর গণনার কাজ করছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা ক্লান্ত। এ কারণে গণনা প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে সব হল সংসদের ভোট গণনা শেষ করে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শুরু হবে। ফলাফল ঘোষণা হতে দুপুর পেরিয়ে যেতে পারে বলেও তিনি জানান।

নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৫৯ জন। ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের জন্য ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ভিপি পদে ৯ জন, জিএস পদে ৮ জন, এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ জন নারী।

এবারের জাকসু নির্বাচনে পূর্ণ ও আংশিক মিলে মোট আটটি প্যানেল অংশ নেয়। তবে ভোট গ্রহণ শুরুর পর ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলসহ পাঁচটি প্যানেল ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে। বর্জন করে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ এবং স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ। এছাড়া ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের একটি প্যানেল এবং কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচন বর্জন করেন।

এবারের নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ১১ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন। ভোটগ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

ছাত্রদের হলভিত্তিক ভোটার সংখ্যা হলো—আল বেরুনী হলে ২১০ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৩৩ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২৯৮ জন, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ জন, জাতীয় কবি নজরুল হলে ৯৯২ জন এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন।

ছাত্রীদের হলভিত্তিক ভোটার সংখ্যা হলো—নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জন, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩ জন, সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জন, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৬ জন, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৭৯৮ জন এবং তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন।