
আশির দশকের শেষ দিকে নিজেকে ‘ইমাম মাহদী’ দাবি করে আলোচনায় আসেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। ওই সময় তার দাবিকে কেন্দ্র করে জনরোষ তৈরি হলে এক পর্যায়ে মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ফিরে এসে নিজ বাড়িতেই ‘দরবার শরিফ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেটি পরিচালনা করতে থাকেন।
তাকে ঘিরে ভক্ত-অনুরাগীদের ভিড় থাকলেও স্থানীয়ভাবে তৌহিদি জনতার বিরূপ প্রতিক্রিয়া অব্যাহত ছিল। কয়েক দশক ধরে তাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ও বিরোধ দেখা দিয়েছে। সবশেষে শুক্রবার এই নুরাল পাগলের মাজারটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে নুরাল পাগল মারা যান। এরপর ভক্তদের অংশগ্রহণে দরবার শরিফে বিশেষ কায়দায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে কবর নির্মাণ করে কাবা শরিফের আদলে সাজানো হলে স্থানীয় তৌহিদি জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক ও আল্টিমেটাম দেওয়ার পর আজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তৌহিদি জনতা। তারা দরবারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে নুরাল পাগলের ভক্তরা। দুইপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়। এ সময় পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হয় এবং ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন।
একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলের কবর ভেঙে লাশ তুলে এনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর পুড়িয়ে ফেলে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়ি। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী এলে তাদের ওপরও চড়াও হন।
হামলায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। এর বাইরে এ বিষয়ে তিনি আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
ঘটনাস্থলে গিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীবসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারাও। এ বিষয়ে তারাও কোনও কথা বলতে রাজি হননি।