সিলেটের নদনদীগুলো পাথর আর বালুসম্পদে পরিপূর্ণ। তবে সে সম্পদ প্রতি মুহূর্তে চুরি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা দুর্বৃত্তদের আরও উৎসাহিত করছে। বিশেষ করে পাথর কোয়ারিগুলোয় চলছে হরিলুট। নির্বিচার চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জাফলং ও গোয়াইন সেতুতে। সেতুর নিচ থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতু দুটি।
সেতু দুটির পিলারের প্ল্যাটফর্মের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে লোহার ‘কেজিং’ বেরিয়ে এসেছে। অথচ আদালত ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বালু ও পাথর উত্তোলনে। জাফলং সেতু গোয়াইনঘাটকে পূর্ব জাফলংয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সেতুটির কারণে জাফলং থেকে সিলেট শহরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার কমেছে।
স্থানীয়রা জানান, জাফলংয়ের মুমিনপুরের জুলহাস ও জাফলং চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন গোয়ালাসহ একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র সেতুর পাশে বালুর ঘাট তৈরি করেছেন। এ কারণে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৬০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি তার স্বাভাবিক শক্তি হারাতে বসেছে। ২০১৮ সালে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এ সেতু।
অভিযোগ সম্পর্কে জাফলং চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন গোয়ালা বলেন, ‘সবাইকে সেলামি দিয়ে আমরা বালুর ঘাট তৈরি করেছি। এ ব্যাপারে আমাদের নেতা জুলহাস মিয়া সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন।’ জুলহাস মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সেতুর পাশ থেকে যন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
জাফলং সেতুর মতো একই অবস্থা গোয়াইনঘাটের গোয়াইন সেতুর। এ সেতুটি গোয়াইনঘাটের সঙ্গে পূর্ব আলীরগাঁও ও পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়ন যুক্ত করেছে। পরিবেশ ও সেতুবিধ্বংসী এমন কর্মকা নিয়ে এলাকার তরুণরা সমাজমাধ্যমে সোচ্চার হলে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন বালুখেকোদের ধরতে অভিযান চালালেও খবর পেয়ে আগেই চম্পট দেন তারা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় পূর্ণানগর গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে ফারুক আহমদের বাড়িতে হামলা চালান বালুখেকোরা। হামলা ও মারধরের ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, সেতুর প্ল্যাটফরমের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ‘কেজিং’ বের হওয়ার খবরটি তিনি জেনেছেন। ছবি তুলে ঢাকায় সওজের ডিজাইন টিমের কাছে পাঠানো হলে তারা এখনো সেতুগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন না।
এদিকে, পরিবেশবিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ডের জন্য প্রশাসনের নির্লিপ্ততাকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার। তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শের মাহবুব মুরাদ জানান, অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে।