
সিলেটের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলমকে নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই পোস্টে সারোয়ার আলমের কর্মনিষ্ঠা ও সততার প্রশংসা করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তার পোস্টে বলেন, চলে যাওয়ার দিন ঘটনাটা বলল সারোয়ার। র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অভিযান করে দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছিল সে একসময়।
তিনি আরো বলেন, অবশেষে সারোয়ারকে নিচে আসতে বলা হলো। তাকে দেখে কর্মীরা শান্ত হলো।
আসিফ নজরুল বলেন, সারোয়ারকে আমি প্রথম দেখি আলোচনার টেবিলে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মাত্র নিয়েছি তখন। কন্সফারেন্স রুমে বিশাল লম্বা টেবিলে বসে আমি উত্তেজিতভাবে কি কি করতে হবে বলি। কারো মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। শুধু মাঝারি আকৃতির, আমারই মতো সাদামাটা একজন সারাক্ষণ উৎসাহ নিয়ে মতামত জানাতে থাকে। সিদ্ধান্ত নিলাম, সে-ই হবে আমার পিএস। অল্পদিনের মধ্যে বুঝতে পারি, এটাই হচ্ছে একসময়ের বিখ্যাত সারোয়ার।
তিনি বলেন, তাকে তবু আমি বেশি স্নেহ করতে পারিনি, বকাবকিই বেশি করেছি। কাজ আগায় না এই হতাশা থাকে সারাক্ষণ। তার ওপর যাকেই কিছু জিজ্ঞেস করি, দেখি সারোয়ারই আগ বাড়িয়ে বলে দেয় সব। আর ছিল আমার জন্য তার বাড়াবাড়ি রকমের যত্ন। এয়ারপোর্ট যাব, ফিরে আসব, কতবার তাকে বলি আপনাকে যেতে হবে না, যাবেই সে। বকাবকি বেশি করা হলে নিজেই মন খারাপ করতাম, দু-একবার বোধহয় সরি-ও বলেছিলাম তাকে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সরকারি অফিসাররা সাধারণত কাজ করেন যান্ত্রিকভাবে। বাড়তি কাজ বা সংস্কার নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই তাদের। তবু প্রধানত সারোয়ারের (এবং আরো দু-একজনের) সার্বক্ষণিক সহায়তা আর সমর্থন নিয়েই কয়েকটা বড় কাজ আমরা করতে পেরেছি। যেমন—প্রবাসী কর্মীদের ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করেছি, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভাইদের জন্য মাল্টিপল ভিসা করা গেছে, জাপান আর কোরিয়ার বাজার আরেকটু উন্মুক্ত হয়েছে, প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপনসহ প্রবাসী কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নিজের কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, লক্ষ্য যা ছিল তার অর্ধেকের মতো মাত্র করেছি। এরমধ্যে একদিন এলো সারোয়ারের বদলির খবর। সিলেটে সাদাপাথর বিতর্কের পর তড়িঘড়ি করে তাকে সেখানে ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। অবাক হয়ে দেখলাম, আমার সিলেটি বন্ধু আর পরিচিত মহলে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে আটকাই আর কোন বিবেচনায়!
সারোয়ার আলম সম্পর্কে আইন উপদেষ্টা বলেন, তাকে নিয়ে একটা দুঃখ থাকল অবশ্য। আমার সম্পর্কে নানা আজগুবি খবর আসে ফেসবুক আর ইউটিউবে। এগুলো অবশ্য অস্বাভাবিক না। আমার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্টরা আছে, উগ্রবাদীরা আছে, আছে ভিউব্যবসায়ীরা। কিন্তু আমাদের সরোয়ার...! রাজনীতির ধারেকাছে না থাকা আপাদমস্তক পেশাদার মানুষ সে। তবু তার বিরুদ্ধেও কালিমা লাগানোর অপচেষ্টা হয়েছে। আমি এর প্রতিকার করতে পারিনি পুরোপুরি। এই কষ্ট থাকবে আমার।
তিনি আরো বলেন, সারোয়ার আপনাকে মিস করি। দোয়া করি, জুনিয়র অফিসাররা শিখুক আপনাকে দেখে। শুধু সিলেট না, সততা, সাহস আর কর্মনিষ্ঠার জন্য সারা দেশের মানুষ ভালোবাসে আপনাকে। আমাদের আশাবাদী থাকার এটাও একটা কারণ।