
হাবিবুর রহমান, ডাকনাম রনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে। হঠাৎ একদিন বাসের মধ্যে একটি ব্যাগ পান হাবিবুর। খুলে দেখেন, ভেতরে আইফোন–সোনার গয়নাসহ বিভিন্ন দামি জিনিস রয়েছে। অন্যের জিনিসে লোভ করতে নেই—পরিবার থেকে পাওয়া এ শিক্ষা হাবিবুরকে উদ্বুদ্ধ করে। ব্যাগের আসল মালিককের খুঁজে পেয়ে বুঝিয়ে দেন হারিয়ে যাওয়া ব্যাগটি। এ ঘটনায় বেশ প্রশংসিত হয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
ঘটনাটি জানিয়ে হাবিবুর বলেন, ‘যে পারিবারিক শিক্ষা পেয়েছি, তাতে ব্যাগটা নিজের কাছে রেখে দেওয়ার উপায় ছিল না। আর ব্যাগ ফেরত দিয়ে তার বিনিময়ে কিছু চাওয়া বা নেওয়াও ঠিক নয়।’
হাবিবুরের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পূর্ব রাজাবাসর গ্রামে। পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের মাস্টার্সে। হলেই থাকেন; পাশাপাশি সাংবাদিকতায় যুক্ত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি তিনি।
ঘটনাটি গত ২৩ আগস্টের। ব্যক্তিগত কাজ থাকায় ঝিনাইদহ গিয়েছিলেন হাবিবুর। ময়মনসিংহে ফেরার পথে শামীম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি বাসে ওঠেন। নামার সময় বাসটির সর্বশেষ আরোহী ছিলেন তিনি। হঠাৎ পাশের আসনের নিচে ছোট একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। ব্যাগটি তুলে নিয়ে বাস থেকে নেমে যান হাবিবুর।
হাবিবুরের বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের পূর্ব রাজাবাসর গ্রামে। পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের মাস্টার্সে। হলেই থাকেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতায় যুক্ত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি তিনি।
মুঠোফোনে হাবিবুর বললেন, মনে হয়েছিল, অন্য কেউ পেলে ব্যাগটি ফেরত না–ও দিতে পারে। এ ভাবনা থেকে ব্যাগ সঙ্গে নিয়েই বাস থেকে নামেন তিনি। পরে ব্যাগটি খুলে দেখতে পান, আইফোন, সোনার গয়না, কিছু টাকা ও চাবি রয়েছে তাতে। আইফোনটির চার্জ ছিল না। তবে ব্যাগে চার্জার ছিল। ফোনে চার্জ দেওয়ার পর খুললেও কেউ ফোন দিচ্ছিল না। অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে ভেবেছিলেন, নিকটস্থ থানায় ব্যাগটি জমা দিয়ে আসবেন। এর মাঝে ব্যাগের প্রকৃত মালিক ওই ফোনে কল করেন। নিজের নাম জানান আনোয়ার হোসেন।
যোগাযোগের পর গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ব্যাগ আনোয়ার হোসেনের হাতে তুলে দেন হাবিবুর রহমান।
আনোয়ার হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের কাছে। শাপলা হ্যাচারি নামে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোপ্রাইটার তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন পাঁচ বছর। এক ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। সাড়ে ১২ বছর বয়সী মেয়ে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ছেলের বয়স সাড়ে ৪ বছর।
পর্তুগাল যাওয়ার জন্য ভিসার কাজে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। কাজ শেষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন। এরপর শামীম এন্টারপ্রাইজের ওই বাসে বেনাপোল থেকে ময়মনসিংহে ফেরেন।
হাবিবুরের বাবা আবু হুরাইরা, মা হোসনে আরা। বাবা দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে শ্রমিকের কাজ করেন। একসময় ভূগর্ভে গিয়ে কাজ করতেন। ২০০৮ সালে দুর্ঘটনার শিকার হন। এখন আর ভুগর্ভে গিয়ে কাজ করতে পারেন না। তবে বাইরেও বেশ পরিশ্রমের কাজ করতে হয়। টানাটানির সংসার।
মুঠোফোনে কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। বললেন, ব্যাগটি ছিল তাঁর স্ত্রীর। ব্যাগে দুটি সোনার বালা, কানের দুল, আইফোনসহ দরকারি জিনিসপত্র রাখা ছিল। বাস থেকে নামার সময় আরও কয়েকটি ব্যাগ সঙ্গে ছিল। ভুলে ওই ব্যাগটি ফেলে আসেন। সব মিলিয়ে ওই ব্যাগে লাখ তিনেক টাকার মালামাল ছিল।
আনোয়ার হোসেন বলেন, সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের কাছে বাস থেকে নামেন। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারেন, একটি ব্যাগ বাসে ফেলে এসেছেন। এরপর বেনাপোলে শামীম এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে ফোন দেন। সেখান থেকে সুপারভাইজারের মুঠোফোন নম্বর নিয়ে তাঁকেও ফোন করেন। সুপারভাইজার জানান, বাসে এমন কোনো ব্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে নিজেও বাসটিতে গিয়ে ব্যাগের খোঁজ করেন। পাননি। সুপারভাইজারের কাছে নিজের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে আসেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাগে থাকা আইফোনটিতে চার্জ ছিল না। বন্ধ ছিল। তাই সেটায় কল করতে পারছিলেন না। পরে সেটা খোলা হলে নিজেই ফোন করে যোগাযোগ করেন তিনি।
যে পারিবারিক শিক্ষা পেয়েছি, তাতে ব্যাগটা নিজের কাছে রেখে দেওয়ার উপায় ছিল না। আর ব্যাগ ফেরত দিয়ে তার বিনিময়ে কিছু চাওয়া বা নেওয়াও ঠিক না।হাবিবুর রহমান, শিক্ষার্থী।
মুঠোফোনে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্যাগটি ফেরত পাব, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। মনে হচ্ছে, এখনো ভালো মানুষ আছে। ওই শিক্ষার্থী চাইলে ব্যাগটি নিজের কাছে রেখে দিতে পারতেন। ফোনটা না চালু করলে খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। তবে ব্যাগে যা ছিল, অক্ষত অবস্থায় ফেরত পেয়েছি। আমি ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর বন্ধুদের জন্য দই নিয়ে গিয়েছিলাম, তা খেতেও আপত্তি করছিলেন তাঁরা। এমন একজনকে তো আর টাকা অফার করা যায় না।’
হাবিবুরের বাবা আবু হুরাইরা, মা হোসনে আরা। বাবা দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে শ্রমিকের কাজ করেন। একসময় ভূগর্ভে গিয়ে কাজ করতেন। ২০০৮ সালে দুর্ঘটনার শিকার হন। এখন আর ভুগর্ভে গিয়ে কাজ করতে পারেন না। তবে বাইরেও বেশ পরিশ্রমের কাজ করতে হয়। টানাটানির সংসার।
হাবিবুর বলেন, ‘বাবা খুব সামান্যই উপার্জন করেন। বাড়ি থেকে টাকা নিতে লজ্জা লাগে। তাই ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করে যা সামান্য আয় করি, তা দিয়ে চলার চেষ্টা করি। আমি চাইলেই বাসে পাওয়া ব্যাগের জিনিসগুলো রেখে দিতে পারতাম। কিছুদিন ভালোভাবে চলতে পারতাম। কিন্তু নিজের যা আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষাটা পরিবার থেকে পেয়েছি। তাই মালিককে ব্যাগ ফেরত দেওয়া কর্তব্য বলেই মনে করেছি। এ ঘটনা শুনে মা–বাবা খুশি হয়েছেন।’
ব্যাগটি ফেরত পাব, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। মনে হচ্ছে, এখনো ভালো মানুষ আছে। ওই শিক্ষার্থী চাইলে ব্যাগটি নিজের কাছে রেখে দিতে পারতেন।আনোয়ার হোসেন, ব্যাগের প্রকৃত মালিক।
ব্যাগটি ফেরত দেওয়ার পর আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে কিছুই নেননি কেন—জানতে চাইলে হাবিবুর বললেন, ‘ওনার কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু চাইনি। কিছু নিলে তো এ কাজের মূল্যই থাকত না। তিনি দই নিয়ে এসেছিলেন।’