Image description
 

আমদানি করা কার্গো পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে দেড় মাস ধরে ভাসছে ৫০০ লাইটার জাহাজ। অথচ পণ্য খালাসে সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ৮ দিন। বাজারে খাদ্যপণ্যের সংকট তৈরি করতেই কিছু অসাধু আমদানিকারক পণ্য খালাস করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য লোড করে নির্ধারিত গন্তব্যে খালাস করতে একটি লাইটার জাহাজের ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগে। সে হিসাবে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি) প্রতি ট্রিপ পণ্য খালাসের জন্য একটি লাইটার জাহাজকে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত সময় দেয়। অথচ ৪৫ দিন পার হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লাইটার জাহাজ পণ্য খালাস না করে সাগরে ভাসছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাজারে খাদ্যপণ্যের সংকট তৈরি করতেই কিছু অসাধু আমদানিকারক পণ্য খালাস করছেন না। এতে একদিকে বাজারে পণ্যের সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হচ্ছে; অন্যদিকে পণ্যবোঝাই জাহাজগুলো অলস বসে থাকায় বড় জাহাজ থেকে পণ্য লাইটারিংয়ের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

তবে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক নরোত্তম চন্দ্র সাহা পলাশ পণ্য খালাসে বিলম্বের পেছনে আমদানিকারকদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকার বিষয়টি মানতে নারাজ। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘দুটি কারণে জাহাজে পণ্য গুদামজাত করা হয়। প্রথমত, অনেক আমদানিকারক চিন্তা করেন জাহাজে রেখেই মালগুলো বাজারে বিক্রি করে দেবেন। তখন তারা মাল খালাস না করেই জাহাজে রেখে দেন। আবার অনেকে গুদামে খালি জায়গা না থাকলে তখন মাল খালাস না নিয়ে জাহাজে রেখে দেন। পরে গুদাম খালি হওয়া সাপেক্ষে তারা পণ্য খালাসের ব্যবস্থা নেন।’বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) কনভেনার সাঈদ আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে যে ৮৭৬টি লাইটার জাহাজ মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে পণ্য লাইটারিং করার পর সেগুলো খালাস না করে অলস বসে আছে। জাহাজগুলোতে চিনি, ডাল, ভোজ্যতেল, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল রয়েছে। এসব পণ্য বোঝাই করে একেকটি জাহাজ ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত বসে আছে। জাহাজগুলো পণ্য খালাস না করে কার্গো নিয়ে অলস বসে থাকায় এখন আমরা কার্গো (পণ্য) মালিকদের চাহিদামতো লাইটার জাহাজ সরবরাহ করতে পারছি না।’

ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং কোস্টাল ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় বিডব্লিউটিসিসি। তিনটি সংগঠনের অধীনে এখন প্রায় ১ হাজার ৪০০ লাইটার জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টির মতো লাইটার জাহাজ থাকে ডকইয়ার্ডে। বাকি এক হাজার ৩০০ জাহাজের মধ্যে ৮৭৬টি জাহাজ পণ্যবোঝাই করে অলস বসে থাকায় এখন পণ্যের এজেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী লাইটার জাহাজ সরবরাহ করতে পারছে না বিডব্লিউটিসিসি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, ৮৭৬টি লাইটার জাহাজের মধ্যে ২৭০টিতে শিল্পের কাঁচামাল রয়েছে। তার মধ্যে ১৫০টিতে কয়লা, ২০ থেকে ৩০টিতে পাথর, ৫০ থেকে ৬০টিতে ক্লিংকার, ২ থেকে ৩টিতে জিপসাম, ১০ থেকে ১২টিতে ইউরিয়া এবং ৩ থেকে ৪টি জাহাজে ফ্লাই অ্যাশ রয়েছে। বাকি ৫০০ জাহাজের মধ্যে রয়েছে গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য। বিডব্লিউটিসিসি’র তথ্য অনুযায়ী, এসব লাইটার জাহাজের ধারণক্ষমতা ৮০০ টন থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টন। সে হিসাবে এসব জাহাজে সর্বনিম্ন ৪ লাখ টন থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টন পর্যন্ত খাদ্যপণ্য মজুদ থাকতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে এক লাখ ৯০ হাজার ৪২৯ টন গম, ৪৪ হাজার ৯৬৪ টন ডাল, ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৭১ টন ভোজ্যতেল, ৮৮ হাজার ৪১৯ টন চিনি ও ৩ হাজার ৮৮০ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে গত নভেম্বর মাসে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৩৪০ টন গম, ১১ হাজার ৪৯৪ টন ডাল, ২ লাখ ১৯ হাজার ২৭১ টন ভোজ্যতেল, এক লাখ ৪১ হাজার ৯১২ টন চিনি, ১২ হাজার ৫৬৯ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আমদানি করা এসব খাদ্যপণ্যের অধিকাংশই এখন লাইটার জাহাজে মজুদ রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে বাড়তি ফায়দা লোটার অসৎ উদ্দেশ্যে জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাসে বিলম্ব করা হচ্ছে।কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এটি পুরোনো খেলা। বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্যই এসব পন্থা অবলম্বন করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।’তিনি বলেন, ‘জাহাজে পণ্য থাকলে একটি পণ্য আমদানি হওয়ার পরও বাজারে তার রিফ্লেকশন দেখা যায় না। যে কারণে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই বড় জাহাজ থেকে লাইটারিংয়ের পর ব্যবসায়ীরা যাতে লাইটার জাহাজে পণ্য মজুদ রেখে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি করতে না পারেন তা মনিটরিংয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।’