Image description

প্রতিদিন লাখো মানুষের আসা-যাওয়া ঘটে কুমিল্লা নগরীতে। মানুষের চলাচলের কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ব্যাটারিচালিত মিশুক, ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার। ফলে যানজট সমস্যা প্রকট হচ্ছে। যানজট ঘিরে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গঠিত ‘যানজট নিরসন কমিটি’ যানজটের দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যানজট নিরসন কমিটির সভায় এসব উদ্যোগ সিদ্ধান্তক্রমে গৃহীত হয়। তা বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগের অন্যতম অংশীজন হিসেবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের গুরুত্ব সর্বাধিক। যানজট নিরসন কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে কাজে নেমে সুবিধাভোগীদের রোষানলে পড়েছেন অ্যাডিশনাল এসপি (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া।

জানা যায়, নগরীতে প্রায় ৪০ হাজার ব্যাটারিচালিত মিশুক, ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার (সিএনজি) চলাচল করছে। এসব যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণে জেলা যানজট নিরসন কমিটি অসংখ্যবার সভা করে সকল অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যানজট নিরসন কমিটির সভাগুলোতে অ্যাডিশনাল এসপি মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি ও জেলা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। গত ২১ জুলাই জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে যানজট নিরসন কমিটির বিশেষ সভায় ৫টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরমধ্যে তিনটি সিদ্ধান্তে রয়েছে- সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ হাজার ইজিবাইক-অটোরিকশা চলাচল করবে। শহরের বাইরের এসব বাহন শহরে প্রবেশ রোধে ৮টি পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। নির্ধারিত ৬ হাজার ইজিবাইক-অটোরিকশা শহরের অভ্যন্তরে ও বাকিগুলো চেকপোস্টের বাইরে চলাচল করবে। ওই ৬ হাজার বাহনের মধ্যে ৫ হাজার সিঙ্গেল সিটের ও এক হাজার ডাবল সিটের এবং চালকের নির্ধারিত পোষাক ও আইডি কার্ড থাকবে। যানজট নিরসনের কাজে একটি স্বেচ্ছাসেবক টিমও থাকবে।

যানজট নিরসন কমিটির গৃহীত এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নামেন ট্রাফিক বিভাগের অ্যাডিশনাল এসপি শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া। তিনি কুমিল্লা শহরের ৪টি বাস স্ট্যান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং যেখানে সেখানে সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়ে যাত্রী পরিবহন করায় অবৈধ এসব স্ট্যান্ড উঠিয়ে দেন। ফলে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করাসহ ৬ হাজার ইজিবাইক-অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে যানজট নিরসন কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শক্ত অবস্থানে থাকায় ওইসব যানবাহন ও অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সুবিধা নেওয়া মহলটির স্বার্থে আঘাত লাগে। তখনই জেলা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা অ্যাডিশনাল এসপি মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে এবং যথাযথ তথ্য প্রমাণ ছাড়াই পুলিশের এই কর্মকর্তাকে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকারে পরিণত করে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বলেন, কুমিল্লায় যানজট নিরসন কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ট্রাফিকের অ্যাডিশনাল এসপি শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া খুবই আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ওনার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে একটি মহল। এটি দুঃখজনক। তিনি অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে যানজট নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন।

এ বিষয়ে অ্যাডিশনাল এসপি মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া জানান, এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। আর এই সমস্যা সমাধানে জেলা যানজট নিরসন কমিটির সভায় এসব বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করি এবং কিছু সিদ্ধান্তে শক্ত অবস্থানে থাকি। কিন্তু কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো যাতে সফল না হয় এজন্য এজন্য আমার পেছনে ওঠেপড়ে লাগে অবৈধ ওই সব যানবাহন থেকে সুবিধা নেওয়া মহল। এরপর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করে আমাকে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকারে পরিণত করে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমার কাজের বিরোধিতা করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারে কিন্তু যে বিষয়ে অভিযোগ করবে সেটির যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ থাকতে হবে। কেবল অভিযোগের ভাষা দিয়ে আমাকে মিডিয়া ট্রায়ালে ফেলাটা কতটুকু যৌক্তিক, এটা আমি কুমিল্লাবাসীর কাছে প্রশ্ন রাখছি। তিনি বলেন, জাতীয় একটি পত্রিকার অনলাইনে আমার বিরুদ্ধে যে সংবাদটি করা হয়েছে, সেখানে পুলিশ সুপার মহোদয় তার বক্তব্যে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তিনি পাননি এবং কেউ করেনি। এরপরও আমাকে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হতে হয়েছে। আমি চাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে সত্যটা বেরিয়ে আসুক। আমার সম্মানহানীর সঙ্গে জড়িতদেরও পরিচয় সবাই জানুক।