
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল ও জোট নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদেরও নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভোটারদের দোরগোড়ায় যাওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা ছুটছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। করছেন সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক। ওদিকে সমমনাদের সঙ্গে নিয়েই জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হবে, নাকি সমঝোতা হবে- তা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া দলের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য জেলা ও উপজেলা কমিটির কাছ থেকে তথ্য নেবে বিএনপি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য একটি স্বাধীন কমিটিও গঠন করবে দলটি।
বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রোডম্যাপকে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের দল এবং জোটগুলো স্বাগত জানালেও ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি। রোডম্যাপে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন হয়নি বলে জানিয়েছে জামায়াত। রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপি’র ভাষ্য, নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো রকমের সংশয় ও শঙ্কা নেই। এখন মানুষ ও জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। দেশে নির্বাচনী পরিবেশ ও আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচনের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য কোথাও ঠাঁই পাবে না বলেও মনে করছে দলটি।
ওদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে অনেক আগে থেকেই নেয়ার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ দফা নিয়ে সারা দেশে জেলা, উপজেলায় সভা, সমাবেশ ও সেমিনার করছে দলটি। জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী কী করবে, সে বিষয়েও বার্তা দেয়া হচ্ছে। রোডম্যাপ ঘোষণার পরে নির্বাচনী প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিভিন্ন লবিং-তদবিরও শুরু হয়েছে। তাদের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। সৎ, ত্যাগী, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত উপযুক্ত প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। যে নেতা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাকেই এবার মনোনয়ন দেয়া হবে বলে বিএনপি’র একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সব সময় একই রকমের পদ্ধতি। নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার পরে দলের একটা জরিপ করা হয়। এক্ষেত্রে জেলা এবং উপজেলা কমিটি থেকে মন্তব্য আনা হয় যে, কোন আসনে কাকে দিলে ভালো হয়। একাধিক প্রস্তাব থাকে। তারপরে একটা স্বাধীন কমিটি গঠন করে ওইসব এলাকায় জনমত যাচাই করা হয়। এরপরে যখন তফসিল ঘোষণা করা হবে তখন আমরা আহ্বান জানাই, কারা কারা প্রার্থী হতে আগ্রহী। এজন্য একটি মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডে সদস্য হন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এই বোর্ড বসে প্রার্থীদের আবেদন এবং তথ্যাদি পর্যালোচনা করে প্রত্যেক আসনের জন্য এক বা একাধিক প্রার্থী বাছাই করে। চূড়ান্তভাবে বিবেচনা করে ফাইনাল মনোনয়ন দেয়া হয়।
অন্যদিকে সম্প্রতি সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওখানে সমমনাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, সমমনাদের নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি। সরকার গঠন এবং নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র যে প্রতিশ্রুতি সেখান থেকে একবিন্দুও সরে যাবে না। একইসঙ্গে ঐক্য ধরে রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তবে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সমমনাদের সঙ্গে বিএনপি’র এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। সামনে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করে হাসিনার ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করা হয়েছে, সেভাবে সংস্কার এবং দেশটাকেও একসঙ্গে গড়তে হবে এবং একটি জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিছুদিন আগে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন যে, জোটগত নির্বাচন করার কথা ভাবছেন। জোটগত নির্বাচন করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে জোটগতভাবে নির্বাচন মানে শুধু আসন ভাগাভাগি করলেই কি হবে, কী করতে হবে এবং কী লক্ষ্য? এগুলো তো করতে হবে। আর নির্বাচনের জন্য এখনো সেভাবে প্রস্তুতি নেয়ার ব্যাপার হয়নি। নির্বাচন যাতে আমরা করতে পারি, এজন্য তো এখন সাংগঠনিক তৎপরতা থাকবেই। এটা আমরা করছি। সংগঠনকে গোছানো হচ্ছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিকে বলেন, যে রোডম্যাপটার ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা চাইবো যে, নির্বাচন কমিশন এটা কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করবেন। তাহলে রাজনৈতিক দল ভোটারদের মধ্যে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি শুরু রয়েছে। প্রার্থিতার ব্যাপারটা এখনো আমরা চূড়ান্ত করি নাই। আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। একইসঙ্গে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ মঞ্চগতভাবেও এটা আলোচনা করবো। এরপরে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদেরও নির্বাচনকেন্দ্রিক বোঝাপড়া, সমঝোতা এবং রাজনৈতিক ভিত্তিটা কি হবে তা নিয়েও আলোচনা হবে। আর নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হবে, নাকি সমঝোতা হবে, সেটা আরও কিছুদিন পরে ঠিক হবে।