
দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি মাসেই বাড়ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে দেশের মানুষের প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের হার তুলনামূলক বেড়েছে। তবে এ সময়ে ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমেছে। বছরের ব্যবধানে প্রায় ২ শতাংশ কমেছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। অন্যদিকে, বেড়েছে স্মার্টফোন ও নিজস্ব মোবাইল ফোনের ব্যবহার (নিজের ফোন নিজে ব্যবহার)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘আইসিটি প্রয়োগ ও ব্যবহারকারী জরিপ’র ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরের ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে বছরভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহারের হার ছিল ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ব্যবহারকারীর হার কমেছে ২ দশমিক ১ শতাংশ।
ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমলেও বেড়েছে নিজস্ব মোবাইলের ব্যবহার। ২০২৩ সালে নিজস্ব মোবাইল ফোনের ব্যবহারের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে নিজস্ব মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়েছে ১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ‘আইসিটি প্রয়োগ ও ব্যবহার জরিপ’-এর প্রকল্প পরিচালক মারুফা সাকি কালবেলাকে বলেন, ‘আগে বছরের হিসেবে জরিপ করা হতো, তবে এবার অর্থবছরের হিসেবে জরিপ করা হয়েছে। জরিপে যে তথ্য পাওয়া গেছে; তাই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এখন অনেক পরিবার বিভিন্ন কারণে তাদের বাচ্চাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেন না, এটা ব্যবহার কমার পেছনে অন্যতম কারণ হতে পারে।’
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের ৯৯ শতাংশ পরিবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করলেও তার মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার। এর আগের প্রান্তিকে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ছিল ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ। তা ছাড়া শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারে এখনো ল্যান্ডফোনের ব্যবহার রয়েছে।
দেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় কম্পিউটার ব্যবহারকারী নেই। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও বেড়েছে। দেশের ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আগের প্রান্তিকেও অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। আর ৯ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার কম্পিউটার ব্যবহার করে। এটি আগের প্রান্তিকেও ৯ দশমিক ২ শতাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারী ছিল।
‘আইসিটি প্রয়োগ ও ব্যবহার জরিপ’-এ ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী নারী-পুরুষ এবং শহর-পল্লি অঞ্চল অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে আইসিটির সূচকগুলো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়। সারা দেশে ২ হাজার ৫৬৮টি নির্বাচিত নমুনা এলাকায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৪টি করে সর্বমোট ৬১ হাজার ৬৩২টি খানায় (বছরে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫২৮টি খানায়) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
দেশের ৬৪টি জেলায় ২১৪ জন প্রশিক্ষিত তথ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচকগুলোর অগ্রগতি জানার পাশাপাশি জেলাভিত্তিক ব্যক্তি এবং খানাগুলো দ্বারা আইসিটি ব্যবহার এবং প্রয়োগ সম্পর্কে সর্বশেষ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের মাধ্যমে আইসিটি সেক্টরে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করে বিবিএস।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ জরিপের গুরুত্বপূর্ণ সূচক (অবস্থানভেদে পরিবারে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের এক্সেস এবং জেন্ডারভেদে ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের মালিকানা) প্রস্তুত করা হয়েছে।