Image description

বিডিআর হত্যা ও বিচার নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হলেও প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পাবে কি না, অপরাধীদের বিচার হবে কি না, যাদের এখন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে তারা অপরাধী কি না, এসব প্রশ্ন নতুন করে সামনে আসছে। বিষয়গুলো নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও এসব নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। সম্প্রতি বিডিআর হত্যার বিচার নিয়ে আদালতের স্থান, আদালতে অগ্নিকাণ্ড এবং হত্যা মামলায় আটক ব্যক্তিদের মুক্তির রায়ের দিন বিচারকের অসুস্থতাসহ নানা ঘটনায় বিচার নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিডিআর হত্যাযজ্ঞ কি রৌমারীর ঘটনার প্রতিশোধ, নাকি অন্য কিছু- এমন আশঙ্কাও এখন বিভিন্ন মহলে। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত সদস্য ও ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মামলার বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রহসন চলছে। তারা এ ঘটনায় সব কারাবন্দি সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবি করেন। তারা বলেন, কেরানীগঞ্জে কোর্ট বসার কথা ছিল। পরে শুনেছি, ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় বসবে। এ বিষয়ে আইনজীবীদেরও কিছু জানানো হয়নি। এই পুরো বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন তারা।

তবে বিডিআর হত্যা মামলার বিচারকাজ চলবে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন অস্থায়ী আদালত ভবনে। গত রবিবার আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার বিচার হচ্ছিল ঢাকার বকশীবাজারে সরকারি আলিয়া মাদরাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী আদালতে। গত বৃহস্পতিবার আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আদালত সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের মধ্যেই এজলাস কক্ষ পুড়ে যায়। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত সদস্য ও ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে কাজ করেছেন এমন একজন আইনজীবী পারভেজ হোসেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিডিআর হত্যা মামলার বিচার নিয়ে সরকার গুলিয়ে ফেলছে। যেহেতু সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে, এতে প্রমাণিত হয় আগের বিচারপ্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। আর বিচারপ্রক্রিয়া যদি সঠিক না হয়ে থাকে, ওই মামলায় আটক ব্যক্তিদেরও মুক্তি দিতে হবে। ভুল বিচারে নিশ্চয় তাদের আটকে রাখা যাবে না। তাদের অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে।

পারভেজ হোসেন আরও বলেন, ‘দুইটা বিষয় কাকতালীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে। একটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের বিডিআরের অনেক ঐতিহাসিক বিষয় আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রৌমারী ইতিহাস। সে সময় রৌমারীতে কমান্ডার ছিলেন শাকিল সাহেব। যিনি পরবর্তী সময়ে বিডিআরের ডিজি হয়েছিলেন। মেজর জেনারেল শাকিল ছিলেন রৌমারীর শীর্ষ কর্মকর্তা কমান্ডার। তিনি যখন বিডিআরের প্রধান হলেন সংগত কারণে রৌমারী পরাজয়ের কারণ থেকে হোক, অথবা অন্য কোনো কূটনৈতিক কারণে হোক শাকিল সাহেবকে টার্গেট করে এই ঘটনা ঘটানো হতে পারে। অথচ ওই সময় সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সেনা দপ্তরের পক্ষ থেকে দরবার হলে প্রবেশের জন্য আবেদন করেন। সেনাবিধির ৩১ ধারায় পরিষ্কার করে বলে দেওয়া আছে জরুরি অবস্থায় সেনাবাহিনী প্রধান যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ওই খানে দুইটা বিষয় হলো, বিডিআর সদর দপ্তরে সেনাবাহিনী ও বাইরের বিডিআর সদস্যদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আর কোনো মিডিয়াকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’

বিচার হবে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন অস্থায়ী আদালতে : বিডিআর হত্যা মামলার বিচারকাজ চলবে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন অস্থায়ী আদালত ভবনে। রবিবার আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যার ঘটনায় করা মামলার বিচার হচ্ছিল ঢাকার বকশীবাজারে সরকারি আলিয়া মাদরাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী আদালতে। গত বৃহস্পতিবার আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আদালত সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের মধ্যেই এজলাসকক্ষ পুড়ে যায়।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিডিআর হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার নিউমার্কেট থানার মামলা পরিচালনার জন্য কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন অস্থায়ী আদালত ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করে সরকার।