Image description

কথায় আছে, ‘সরকারি মাল, দরিয়া মে ঢাল’। এ প্রবাদেরই যেন এক জ্বলন্ত উদাহরণ চট্টগ্রামের সাগরপাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচে নির্মাণ করা এক রাজকীয় অতিথিশালা। বিলাসবহুল ও আন্তর্জাতিক মানের এ হোটেল থেকে মাসে কোটি টাকা আয় সম্ভব অথচ সিদ্ধান্তের অভাবে নির্মাণের এক বছরেও চালু হয়নি। উল্টো প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা লোকসান গুণছে সরকার। সম্প্রতি প্রকল্পটি ঘুরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা জানান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে ৭২ একর জায়গায় সরকারি বিশাল এক স্থাপনা। যেখানে বুক ভরে নেয়া যায় অক্সিজেন, দেখা যায় সবুজের সমারোহ। রয়েছে বঙ্গোপসাগরের নীল উর্মিমালার হাতছানি আর পাখির কলরব।

ভেতরে দৃষ্টিনন্দন এমন স্থাপনা দেখে মনে হতে পারে বিদেশের কোনো অভিজাত অবকাশ কেন্দ্র। যেখানে লাল ইটের অনন্য শৈলির এমন অনেক কটেজের পাশাপাশি চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে, মসৃণ পিচ ঢালা সড়ক, ছোট ছোট নান্দনিক সেতু, নানা রকম ফোয়ারা, সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, অনন্য নকশার মসজিদ কমপ্লেক্স, পাঁচ তারকা মানের আধুনিক ও বিলাসবহুল পর্যটন সুবিধা।

এত কিছুর পরও সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার এ প্রকল্প যেন এক সাদা হাতি। পতিত সরকারের ঊর্ধ্বতন ও ভিভিআইপিদের জন্য বানানো এ অবকাশকেন্দ্র এক বছরেও চালু করতে না পারায়, এখন অনেকটা ভুতুড়ে পাড়া। মাসে কোটি টাকা আয় সম্ভব হলেও উল্টো রক্ষণাবেক্ষণে গুণতে হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল সহ আমাদের ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা যায়। বারবার যে টানেল নিয়ে যে লসের একটা কথা আসছে, তো এ রিসোর্টেও আমাদের একটা ম্যানেজমেন্ট খরচ আছে। সঙ্গে সাঙ্গে আমাদের একটা আর্নিং আসার কথা আরকি।’

অলস এ প্রকল্প লাভজনক করতে সম্প্রতি রিসোর্টটি পরিদর্শনে যান সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা। জানান, চলতি মাসেই বেসরকারি খাতে দেয়ার দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হবে।

সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘মিটিংয়ে বাংলাদেশের পার্টি আসছে, সেখানে আন্তর্জাতিক কিছু হোটেলের যারা আছে তারা আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সাবমিশন হচ্ছে না ততক্ষণ আমরা বলতে পারছি না যে, তারা আসলে অংশগ্রহণ করবেন। আমরা আশা করছি যে সাবমিশন যদি হয়ে যায় দুই বা তিন মাসের মধ্যেই আমরা একটা কন্ট্রাক্টে চলে যেতে পারবো। আমরা শা করছি এবছরই যদি এটা ভালো উদ্যোক্তার হাতে যায় তাহলে কাজ শুরু করতে পারবে।’

পারকি সমুদ্র সৈকতকে মিনি কক্সবাজার বলা হলেও, আদতে এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি, নেই কোনো প্রচারও। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে নতুন রূপ দেয়া গেলে পর্যটনের নতুন দুয়ার খুলবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘এ স্থাপনা থেকে আমরা যেন বেশি ভালো ইউটপুট আনতে পারি সে লক্ষ্যেই আমাদের টার্গেট, পাশাপাশি এটা পর্যটনে যেন একটা ভালো হাব হয়। যারা নেবে তারা আশেপাশের জায়গা আরও নিয়ে দেখা যাবে তাদের অন্য পরিকল্পনাও আছে। এটা নির্ভর করবে যে পার্টি পাচ্ছে তাদের ওপর।’

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের সময় সার্ভিস এরিয়া হিসেবে সাগর পাড়ে বিশাল এ পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করে সরকার। এখন টানেলে প্রতিমাসে বড় অংকের লোকসান গুণছে সরকার।