
‘নারী হলেই থাকতে হবে ঘরে’— এই শিকল ভেঙ্গে বেরিয়েছে নারীরা বারবার। আদিকাল থেকেই তারা অংশ নিচ্ছে পরিবার গঠন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মসনদে। তবে যুগের সাথে রাজনীতিতে নারীদের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তাদের নানা হয়রানির গল্প। রাজনীতিতে নারীদের যাত্রা কঠিন কেন?— সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন সম্মুখ সারির বিপ্লবী। প্রীতিলতার উত্তরসূরীদের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সমরে দেখা গেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীদের বরাবরই রাজনীতি সচেতন দেখা গেলেও রাজনীতির মূল ধারায় নারীদের মুখ খুবই নগন্য। ৫৪ বছরের দেশটিতে সংসদ কিংবা স্থানীয় সরকারেও নারীর সংখ্যা কম। কিন্ত কেন? সে উত্তরই খুঁজতে চেষ্টা করা হয়েছে।
একটা সময় রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের ব্যক্তিকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার চল ছিল। তবে দিন বদলের সঙ্গে পাল্টেছে রাজনৈতিক সেই জবাবের। অনলাইনের যুগে তা দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিজীবন নিয়ে কাঁটাছেড়ার মতো ঘটনায়। আর সেখানে নারী হলে তা চলে যাচ্ছে সব নৈতিকতার বাইরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন হয়রানির পর্যায়ে চলে যায় বিষয়গুলো। এসব ঘটনা কীভাবে মোকাবিলা করেন বর্তমান সময়ের তরুণ নারী নেতৃত্ব?
ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, ‘আমার পুরুষ সহযোদ্ধারা, একজন পুরুষ রাজনীতিবিদ যে মতামত দিচ্ছে আবার একই মতামত আমি দিচ্ছি। তবে আমাকে এবং তাদেরকে বুলি করার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ থাকে। বেশিরভাগ সময় আমাকে বুলি করা হয়, আমি একজন নারী তাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘যখনই একটা মেয়ে ভোকাল হয়, সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর এক ধরনের অ্যাটাক এসে পড়ে। তার বিপরীত মতাদর্শের লোকজন তাকে নানা ধরনের ট্যাগ দিয়ে অবদমন করার চেষ্টা করে। এটা বর্তমান রাজনীতিতে অনেক ক্ষেত্রে প্রমিনেন্ট এবং কার্যকরী হয়েছে। যারা রাজনীতিতে আসার আগ্রহ দেখিয়েছিল, তারা অনেকেই হারিয়ে গেছে।’
এতো গেলো নতুন নেতৃত্বের কথা। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে থাকা নারীরা কেমন আছেন? প্রশ্ন ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার কাছে।
শুধু নারী রাজনীবিদ নয় মতের অমিল হলে বাদ যাচ্ছে না কেউ-ই আর সেই ক্ষোভই যেন ঝারলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন।
রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পুরুষদের চারিত্রিক কাঁটাছেড়া না হলেও নারীদের কেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে? জানতে চাওয়া হয় সমাজ বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক খানের কাছে।
যেখানে সংসদ থেকে শুরু করে সব সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেখানে এ ধরণের আচরণ নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া বিমুখ করে তুলবে এমন শঙ্কার কথাই জানালেন এই সমাজ বিজ্ঞানী।