পাঁচ যুগ ধরে পরিত্যক্ত লালমনিরহাট বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরটি চালু হলে রংপুর অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। উন্মোচন হবে যোগাযোগের নতুন দ্বার। এ ছাড়া এটি চালু হলে লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ বিমানবন্দরটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১ হাজার ১৬৬ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকে পরিত্যক্ত। প্রায় ৪ মাইল লম্বা রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাঙ্গার এবং ট্যাক্সিওয়ে নিয়ে বিশাল বিমানবন্দরটি বর্তমানে বিমান বাহিনীর কৃষি ফার্ম। জানা গেছে, স্বল্প পরিসরে ১৯৫৮ সালে বিমান সার্ভিস চালু হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এটিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৮৩ সালে বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ এখানে কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করে। মিলিটারি ফার্মের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার এবং চলছে কৃষি কাজ। এ ছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় রানওয়েতে ছাগল, গরু, ভেড়া চরাচ্ছেন স্থানীয়রা। নষ্ট হচ্ছে রানওয়ে।
লালমনিরহাটের সিনিয়র সাংবাদিক আলতাফুর রহমান আলতাফ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিমানবন্দরটি চালুর উদ্যোগ কোনো সরকারই নিচ্ছে না। অথচ এই বিমানবন্দর চালু হলে রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক দ্বার থেকে শুরু করে কয়েকটি দেশের সঙ্গে শিক্ষা চিকিৎসার ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, লালমনিরহাটের বিমানবন্দরটি চালু করা গেলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন ব্যবসায়িক দ্বার উন্মোচিত হবে। লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ঢাকার সঙ্গে এই জেলার দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। সড়কে যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা, কখনো তার চেয়েও বেশি। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি যারা পড়াশোনা করতে যান তাদেরও অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়।
লালমনিরহাট চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল হামিদ বাবু বলেন, বিমানবন্দরটি চালু হলে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন। জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, আমি এই জেলায় নতুন এসেছি। ইতোমধ্যে লালমনিরহাটের বেশকিছু সমস্যার কথা জেনেছি। বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় বিমানবন্দর চালুর কথা উঠে এসেছে। আশা করছি, এই অঞ্চলের মানুষের যে দাবি সেটি তুলে ধরা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে বিমানবন্দরটি চালু হবে- এ আশায় অপেক্ষায় আছেন রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট অঞ্চলের মানুষ।