Image description

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা। ২৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। আসন্ন ডাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নির্বাচনি আমেজ বইছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে আগ্রহ ও আলোচনা— কারা পাবেন ডাকসুর নেতৃত্বের দায়িত্ব। এবারের ভিপি ও জিএস প্রার্থীদের প্রায় সবাই জুলাই আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কারণে তারা শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এ প্রেক্ষিতে আলোচিত ১৫ ভিপি-জিএস প্রার্থীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করেছে।

সাবিনা ইয়াসমিন: 

সাবিনা ইয়াসমিন


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের  ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেল মনোনীত জিএস প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন। জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা একমাত্র নারী প্রার্থী তিনি। সাবিনা ২০১৮-২০১৯  সেশনের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ ও রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী। ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি।

ইয়াসিন আরাফাত:

ইয়াসিন আরাফাত


ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের হয়ে ভিপি পদে লড়াইয়ে নামছেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত। তিনি ‘বাংলাদেশ সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ফেসবুকে  তার অনুসারীর সংখ্যা ৯ হাজার।

আল সাদি ভূঁইয়া:

আল সাদি ভূঁইয়া


২০১৬-১৭ সেশনের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদি ভূঁইয়া ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। সাংবাদিক সমিতির সভাপতি থাকাকালে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে তিনি প্রশংসিত হন। ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ১১ হাজার।

শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি:

শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি


ডাকসুতে নারী প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনা আছেন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। ডাকসু নির্বাচনে বামপন্থী সংগঠনসমূহের জোট থেকে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে  ভিপি প্রার্থী হিসেবে লড়বেন তিনি। ইমি ২০১৩-১৪ সেশনের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালে হল সংসদ নির্বাচনে শামসুন্নাহার হলের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে সেই সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ১৭ হাজার। 

জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ:

জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ


২০১৮-২০১৯ সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ  ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন। ২০১৯ সালে প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ক্যাম্পাসে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ‘শিক্ষণ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি শিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। একই সময়ে ‘ব্যাসিক ইসলামিক নলেজ প্রোগ্রাম’ নামে একটি শিক্ষা-উদ্যোগ শুরু করেন তিনি। এছাড়া, ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ‘সম্মিলিত ডাকসু আন্দোলন’ ব্যানারে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ফলোয়ার সংখ্যা ৪৬ হাজারের বেশি।

আব্দুল কাদের:

আব্দুল কাদের


জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতা আব্দুল কাদের ‘বৈ‌ষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে  ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে লড়াই করবেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ঘোষিত ৯ দফার কারিগর হিসেবেও পরিচিত তিনি। আব্দুল কাদের  ২০১৮-২০১৯ সেশনের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনন্সিটি‌উটে শিক্ষার্থী। ফেসবুকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা  ৫০ হাজার। 

শেখ তানভীর বারী হামিম:

শেখ তানভীর বারী হামিম


ডাকসু নির্বাচনে লড়াই করা হেভিওয়েট প্রার্থীদের একজন শেখ তানভীর বারী হামিম। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল থেকে  জিএস পদে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ছাত্রদলের রাজনীতি করায় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেননি। জুলাই আন্দোলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় তিনি। কমল মেডি এইডের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে  ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা, বিনা ডেলিভারি চার্জে হলে ওষুধ পৌঁছে দেয়া, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ওষুধ বিতরণ, নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন ও ৩৩ শতাংশ কম খরচে প্যাড সরবরাহ, ঈদের দিন হলে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অনুসারীর সংখ্যা ৫৬ হাজার। 

মেঘমল্লার বসু:

মেঘমল্লার বসু


বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মেঘমল্লার বসু। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা তিনি। ফেসবুকে তার ফলোয়ারের  সংখ্যা ৬৬ হাজার।

বিন ইয়ামিন মোল্লা:

বিন ইয়ামিন মোল্লা


বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি  বিন ইয়ামিন মোল্লা এবার ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  তিনি স্যার এ এফ রহমান হলের ২০১৪-২০১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের যেকোনো ন্যায়সংগত দাবি আদায়ে সবসময় সক্রিয় থেকেছেন তিনি। ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন এই ছাত্রনেতা। ফেসুবেকে তার অনুসারী ৬৮ হাজার।

মাহিন সরকার:

মাহিন সরকার


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়ছেন। মাহিন ২০১৮-২০১৯ সেশনের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার।

উমামা ফাতেমা:

উমামা ফাতেমা


জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন। তিনি ২০১৮-১৯ সেশনের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি একসময় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। অভ্যুত্থানের পরপরই তিনি  এ সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।  সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নানা অভিযোগে তিনি বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ান। তার ফেসবুক ফলোয়ারের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার।

আবু বাকের মজুমদার:

আবু বাকের মজুমদার


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সম্মুখ সারির জুলাইযোদ্ধা আবু বাকের মজুমদার ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’              প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন। তিনি ২০১৯-২০২০ সেশনের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার।

আবিদুল ইসলাম খান:

আবিদুল ইসলাম খান


ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্যানেল থেকে ভিপি পদে দাঁড়িয়েছেন আবিদুল ইসলাম খান। তিনি ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতাদের মধ্যে অন্যতম আবিদ। আন্দোলনের সময় তার ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ ‍আকুতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সরকার পতনের পর জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। ফেসবুকে তার ফলোয়ার ২ লাখ ২৯ হাজার।   
 
এস এম ফরহাদ: 

এস এম ফরহাদ


ডাকসু নির্বাচনে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’  জিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। জুলাই আন্দোলনের সময় সরকার ঘোষিত শোককে প্রত্যাখান করে তার পরামর্শেই প্রোফাইল পিকচার লাল করার কর্মসূচি পালন করা হয়। ফেসবুকে তার ফলোয়ার ২ লাখ ৩৭ হাজার।

আবু সাদিক কায়েম:

আবু সাদিক কায়েম


আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম। জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবেও পরিচিত তিনি। সাদিক কায়েম ২০১৬-২০১৭ সেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।  জুলাই আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রাখায় তিনি বর্তমানে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ফেসবুকে তার অনুসারীর সংখ্যা ৫ লাখ ৮ হাজার।