Image description

পঁচাত্তরে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পানিবণ্টন, সীমান্ত সমস্যাসহ উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে তৈরি এসব বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। ভারতীয় কূটনীতিক ও দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যোতিন্দ্রনাথ (জেএন) দীক্ষিত বিষয়টিকে এভাবেই তুলে ধরেন—‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের কারণে এ মধুচন্দ্রিমা পর্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭৫ সালে ওই হত্যাকাণ্ডের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের স্বর্ণযুগের সমাপ্তি ঘটে।’ একই অবস্থা তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মধ্য দিয়ে। হাসিনার পতনের পর পানিবণ্টন, সীমান্ত সমস্যাসহ বেশকিছু ইস্যুতে উভয় দেশের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে ’৭৫-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যেভাবে ভারতে পালিয়ে অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, বর্তমান সময়েও একইভাবে দলটি রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন আবেগপ্রবণ মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে ওই সময় বাস্তবতা প্রাধান্য পেয়েছিল, যা দুই দেশের সম্পর্কে নানা টানাপড়েন সৃষ্টি করেছিল। এর বাইরে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ নিয়ে বিরোধও দুই দেশের সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলে। ভারত তার প্রতিবেশীর প্রতি অযৌক্তিক ও আধিপত্যবাদী মনোভাব পোষণ করছে—এমন আলোচনাও উঠে আসে। পুরনো অনেক ইস্যু পুনরুজ্জীবিত হয় এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়গুলো উত্থাপন করলে তা ভারতের অসন্তোষ সৃষ্টি করে। আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চললেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অনিষ্পন্ন থেকে যায়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে খানিকটা মিল আছে। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের আগে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বা পরবর্তী প্রেক্ষাপটে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল তখন পর্যন্ত ভারত সম্পর্কে মানুষের মাঝে একটি মিশ্র ধারণা ছিল। সে সময় ভারতের চেয়ে তৎকালীন সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভ বেশি ছিল। এখন দুটি বিষয় কাজ করেছে। সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভ বেশি ছিল—সেটা কাজ করেছে, সেটার প্রতিফলনও দেখেছি। পাশাপাশি এবারে ভারতের প্রতি মানুষ বেশ ক্ষুব্ধ বলে আমি মনে করি। কারণ গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যে অনাচার হয়েছে, তার অনেকগুলোর পেছনে সরাসরিভাবে ভারতের মদদ ছিল—এমন ধারণা জনমনে বেশ শক্তিশালীভাবেই বিরাজ করেছে।’

হুমায়ুন কবির আরো বলেন, ‘এখন গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির কথা উঠছে, কারণ এটি ২০২৬ সালে নবায়ন হওয়ার কথা। এটা পাঁচ বছর পর হওয়ার কথা থাকলে আলোচনায় আসত না। এটা কাকতালীয় ব্যাপার। তবে লোকজন ঠেলে ঢোকানোর (পুশ-ইন) ব্যাপারটা অব্যাহত আছে। তখন অবশ্য লোক ঢোকানোর বিষয়টা সেভাবে ছিল না, এটা মূলত ২০০১ সালের পর বেশি শুরু হয়েছে। আমরা যেহেতু প্রতিবেশী দেশ, প্রতিবেশীর সঙ্গে কিছু ইস্যু থাকতে পারে, যেটা লম্বা সময় ধরে নিষ্পত্তি হয় না। অনেক ইস্যু নিষ্পত্তি হয়েছে, অনেক প্রতিবন্ধকতাও রয়ে গেছে।’

জার্নাল অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ থেকে প্রকাশিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ রিলেশনশিপ (১৯৭৫-১৯৯০) নিবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরপরই চারটি প্রধান ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়। এর মধ্যে শেখ মুজিবের আমলের দুটি অমীমাংসিত ইস্যু ছিল—গঙ্গার পানিবণ্টন ও ছিটমহল বিনিময়। আর নতুন করে সে সময় সাতক্ষীরা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি বা পূর্বাশা দ্বীপ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন করলেও ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে চুক্তি কঠিন হয়ে পড়ে। ১৯৭৫-৭৭ সালে বাংলাদেশে প্রবল ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা দেয় এবং সংবাদমাধ্যম এ মনোভাবকে উসকে দেয়। জিয়াউর রহমান সরকার সমস্যাটিকে ওআইসি (ইস্তানবুল, ১৯৭৬), জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বা এনএএম (কলম্বো, ১৯৭৬) ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরে। ভারত এটিকে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিকীকরণের বিরোধিতা করে। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জগত এস মেহতা স্পষ্টভাবে জানান যে ভারতের উদ্দেশ্য কেবল কলকাতা বন্দরের স্বার্থ রক্ষা এবং ‘বাংলাদেশের অভিযোগ ভিত্তিহীন’। জাতিসংঘের বেশির ভাগ দেশও সমস্যাটিকে দ্বিপক্ষীয় বলে স্বীকার করে। পরবর্তী সময়ে ভারত ও বাংলাদেশ পুনরায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসে। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারির পর একাধিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়, যদিও তখনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একই ধরনের ইস্যুতে উভয় দেশের মধ্যে বিরোধ প্রকট হতে শুরু করে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার কয়েক দিনের মাথায় ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দেয় ভারত। এর ফলে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে তীব্র বন্যার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশকে কোনো ধরনের সতর্ক না করে ভারতের পানি ছেড়ে দেয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সামরিক শাসনে অসন্তুষ্ট ছিল ভারত। এর ফলে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় বাংলাদেশ পশ্চিমা ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে, ভারত থেকে দূরত্ব বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করে, যা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। একইভাবে ১৯৭৫ সালে ভারতও স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে ইন্দিরা গান্ধী গণতন্ত্র স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করেন।

জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ধীরে ধীরে এমন কিছু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে, যা দেশকে পশ্চিমা ও প্রাচ্য শক্তির কাছাকাছি নিয়ে যায়। বাংলাদেশী নেতারা জাতীয় স্বার্থ পূরণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন এবং তা বাস্তবায়নে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। ভারত এটিকে বাংলাদেশের নীতিতে ভারসাম্যের পরিবর্তন হিসেবে দেখে। ফলে দক্ষিণ এশীয় রাজনীতিতে ভারতের কৌশলে পরিবর্তন ঘটে। কারণ বাংলাদেশ ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ‘করিডোর’ হিসেবে কাজ করত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক সদস্য ড. দেলোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে সাম্প্রতিক যে অবনতি দেখা যাচ্ছে সেক্ষেত্রে মুখ্য কারণ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যেমন ছিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বর্তমান সরকারকে ভারত সেভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। এ কারণে সম্ভবত ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে নীতিগত পরিবর্তন এনেছে। ভিসার ক্ষেত্রে বর্তমান যে অবস্থা তার জন্য ভারত যদিও তাদের স্টাফসহ নানা বিষয়কে দায়ী করছে, তবে বিগত সময় বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টতই বোঝা যায় এটি একটি কৌশলগত অবস্থান। এ সমস্যাগুলো তো বিগত সময়ে দেখা যায়নি, এখন কেন হবে? এছাড়া পুশ-ব্যাকের যে ঘটনাগুলো ঘটছে তাও সঠিক নয়। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতে অবস্থান করছেন। সব মিলিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি কূটনৈতিক অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ভারত এক্ষেত্রে নীতিগত যে অবস্থান নিয়েছে তা দুদেশের সম্পর্কের জন্য সঠিক নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের জন্যই লাভজনক। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বেশ ভালো অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় জোটের যে আলোচনা উঠেছিল সেটি অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে। এখন সম্পর্ককে স্বাভাবিক অবস্থানে নিতে ভারতকেও এগিয়ে আসতে হবে। অপরদিকে বাংলাদেশকে আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এমন অবস্থানে থাকতে হবে যাতে সার্বভৌমত্ব, মর্যাদাবোধের জায়গাটি অক্ষুণ্ন থাকে।’

জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ‘শত্রুতামূলক কার্যকলাপ’ চালাচ্ছে এমন অভিযোগে নয় শতাধিক বাংলাদেশীকে ১৯৭৭ সাল-পরবর্তী সময়ে ফেরত পাঠায় তৎকালীন জনতা পার্টি সরকার। কিন্তু বর্তমান মোদি সরকার পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে দুই হাজারের বেশি পদধারী নেতা সেখানে অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণে সন্দেহভাজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে, যাদের অধিকাংশই এদেশের নাগরিক নন।

১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতে আবারো ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ইন্দিরা গান্ধী পূর্ববর্তী জনতা পার্টির দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ তোলেন, তারা জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করেছে। মুজিব-পরবর্তী সামরিক শাসন ব্যবস্থার প্রতিও তার ভালো ধারণা ছিল না। কারণ তিনি সামরিক শাসনকে অপছন্দ করতেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে জনতা সরকারের নেয়া নীতিগুলো আপসমূলক মনে করতেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি এটিকে ভারতের স্বার্থ বিসর্জন হিসেবে দেখতেন। দক্ষিণ এশিয়ায় দেশাই সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও তিনি সমালোচনামুখর ছিলেন। তবে ১৯৮০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি তার নীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায়নি; তার প্রথম মেয়াদের শেষভাগের তুলনায় তার অবস্থান কিছুটা কঠোর থাকলেও তা সীমিত মাত্রায় ছিল।

জিয়াউর রহমানই ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে অভিনন্দন জানানো প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি আশা করেছিলেন, দিল্লিতে তার আকস্মিক সফর ভারতের মনোভাব পরিবর্তন করবে। কিন্তু তার প্রত্যাশার বিপরীতে ইন্দিরা গান্ধীর ব্যাপক বিজয়ের খবর শুনে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের একাংশের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দেয় যে ভারত আবারো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে ধীরে ধীরে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উন্নতির ইঙ্গিত দেখা দেয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালের ২০ জানুয়ারি জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি সফর করেন। এ সফরকালে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন। বৈঠকে সীমান্ত সমস্যা ও ফারাক্কার গঙ্গার পানিবণ্টন ইস্যুসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

তবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর দলটির একটি বড় অংশই মনে করছে দলটির পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ভারত সরকার সহায়তা করতে পারে। তাদের দাবি, যেহেতু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে, ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুনর্বাসনে ভারত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের সহায়তা করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের অনেকে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখনো অনেকে আছেন। এ সাহায্যটুকু আমরা পাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. স ম আলী রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কটা এক ধরনের দোদুল্যমান অবস্থার ওপর দিয়ে যাচ্ছে বা এটা ভালো নেই। সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। এখানে প্রত্যেক রাষ্ট্র তার নিজেদের স্বার্থ দেখবে, সেক্ষেত্রে ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক নীতি ও মানদণ্ড আছে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা মানা হয় না। এজন্য দায়ী বাংলোদেশের পররাষ্ট্রনীতি। ভারত প্রভু হতে চাইবে, কিন্তু মানতে হবে কেন? পররাষ্ট্রনীতি, নেতৃত্ব ও সক্ষমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও ব্যর্থতা আছে। এটা উইন-উইন সিচুয়েশন হওয়ার কথা। সেটা না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে।