
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত মূলধন পর্যাপ্ততার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.০৮ শতাংশ, এক বছর আগে যা ছিল ১১.৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে মূলধন পর্যাপ্ততা কমেছে ৮.৫৬ শতাংশ পয়েন্ট।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে দেশের ব্যাংক খাতে। ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে আর ফেরত দেওয়া হয়নি। এমনকি আমদানি-রপ্তানির আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এতে দুর্বল হয়ে পড়েছে ব্যাংক খাত।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ব্যাংক খাতে মূলধন পর্যাপ্ততা স্থিতিশীল থাকলেও ব্যাপকভাবে কমেছে বাংলাদেশে। অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২৪ অনুযায়ী, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় মূলধন পর্যাপ্ততায় বাংলাদেশের অবস্থান খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এই বছর বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে মাত্র ৩.০৮ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মূলধন পর্যাপ্ততার হার কমেছে ব্যাপকভাবে।
মূলধন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাত হিসেবে পরিচিত সিএআর এমন সূচক, যা দিয়ে একটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ২০২৪ সালে দেশটির ব্যাংক খাত মূলধন সংরক্ষণ করেছে ২০.৬ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২৩ সালে দেশটির ব্যাংক খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা ছিল ১৬.৭ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ১৬.৬ শতাংশ।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মূলধন ভিত্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে মূলধন পর্যাপ্ততার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রভাবেই বাংলাদেশের মূলধন পর্যাপ্ততার হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।’
তিনি জানান, যেখানে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মূলধন পর্যাপ্ততার হার যথাক্রমে ২০.৬ শতাংশ, ১৮.৪ শতাংশ ও ১৬.৭ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের হার নেমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক সব তফসিলি ব্যাংককে ঋণ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে বাসেল-৩ কাঠামোর আওতায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।