
বিশ্ববাজারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির মোট অর্থমূল্য ছিল ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার, যার ৮১ দশমিক ৪৯ শতাংশই তৈরি পোশাক। রফতানিতে এ একটি খাতের ওপর নির্ভরতা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স বা ইউএন ডিইএসএর ট্যারিফ ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বিষয়ক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এ পর্যালোচনা উঠে এসেছে।
‘ট্যারিফ শকস অ্যান্ড গ্র্যাজুয়েশন ফ্রম দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি ক্যাটাগরি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (৩ জুলাই প্রকাশিত) বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণায় এলডিসি দেশগুলোর উন্নয়ন ও গ্র্যাজুয়েশন সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এলডিসিগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিশেষ করে গ্র্যাজুয়েশনের পর শুল্ক-আঘাতের সম্ভাব্য প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বাণিজ্যের ভূমিকা, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এলডিসির রফতানির গুরুত্ব এবং সবশেষে ঘোষিত শুল্ক বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ও বিস্তৃত প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রফতানি বাজার। দেশের মোট রফতানির ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ।উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের মোট পণ্য রফতানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। প্রতিবেদন অনুসারে, এ একটি শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে তুলনামূলকভাবে উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন হয়েছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানির ওপর গড় শুল্কহার ছিল ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০২৫ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে শুল্কহার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি আয় প্রায় ২১ শতাংশ হ্রাসের ঝুঁকি তৈরি হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চূড়ান্ত ঘোষণা অনুসারে, বর্তমানে তৈরি পোশাকের ওপর কার্যকর শুল্কহার বেড়ে হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
ট্রাম্পের এ চূড়ান্ত ঘোষণার আগে ইউএন ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স বা ডিইএসএর হিসাব অনুযায়ী, শুধু শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ালে বাংলাদেশের রফতানি আয় কমতে পারে প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদি ঘোষিত শুল্ক এর চেয়ে বেশি হয়, তবে ক্ষতি আরো বেশি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রফতানি ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এর ফলে দেশের মোট রফতানি আয় হ্রাস পেতে পারে প্রায় ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হবে। এ উত্তরণকে গর্বের অর্জন হিসেবে দেখা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির পর এ গ্র্যাজুয়েশন কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ গ্র্যাজুয়েশনের পর বিশেষ সুবিধা (ডিউটি-ফ্রি, কোটামুক্ত) হারালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বাজারগুলোতে বাংলাদেশী পণ্যের প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের মোট পণ্য রফতানি জিডিপির প্রায় ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ডিইএসএর প্রতিবেদন বলছে, এ প্রেক্ষাপটে রফতানি আয় হঠাৎ কমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, কর্মসংস্থান এবং শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, যেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছে, তা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে।
জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ গ্র্যাজুয়েশনের পথে থাকা দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আঘাতের কারণে গুরুতর ঝুঁকির মুখে আছে। শুল্কহার স্থায়ীভাবে কার্যকর হলে বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে রফতানি খাতের বহুমুখীকরণ, নতুন বাজার খোঁজা এবং নীতিগত সহায়তা জোরদারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ উদ্বেগের বিষয়গুলো বর্তমানে উঠে আসছে বাংলাদেশের সরকারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতামতেও। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছিল। প্রথমদিকে সরকার গ্র্যাজুয়েশনের পক্ষে অবস্থান নিলেও ব্যবসায়ীদের দাবি ও বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে সেই অবস্থান থেকে নমনীয় হতে শুরু করেছেন। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের দাবি ও পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর আবেদন সরকার করতেই পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে পেছানোর জন্য যথাযথ যুক্তি দাঁড় করাতে হবে। আর অবশ্যই কোনো ধরনের গড়িমসি ছাড়া গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।
গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে চাইলে গতকাল রাতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য আমরা তিন-চার বছর সময় পেয়েছিলাম, কিন্তু তার কিছুই করা হয়নি। সংস্কার ছাড়া যদি গ্র্যাজুয়েট হই, তাহলে আমাদের দেশের জন্য অসম্ভব রকম ক্ষতির কারণ হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো না করতে পারলে অবশ্যই গ্র্যাজুয়েশন পেছানো উচিত।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছাতে চায়, তাহলে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছে আবেদন করতে হবে। কী কারণে বাংলাদেশ এমনটা চাচ্ছে সেটার যুক্তিসংগত কারণ দাঁড় করাতে হবে। ২০২১ সালে যখন বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তখন মাথাপিছু আয় বা মানবসম্পদ সূচক বা অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচক—সব সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ছিল তা এলডিসি উত্তরণকে সমর্থন করছিল। ফলে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন বাংলাদেশ যদি আবেদন করে, তাহলে তা বিচার করা হবে সেই সূচকগুলোর সাপেক্ষে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশেষ কারণ যেমন কভিডের জন্য এরই মধ্যে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন দুই বছর পিছিয়েছে। ফলে বাংলাদেশকে সূচকগুলোর ক্ষেত্রে যুক্তি দাঁড় করাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ওই সূচকগুলো পর্যালোচনা করেনি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পুরনো পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে। ফলে সূচকের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ খুব শক্ত যুক্তি দাঁড় করাতে পারবে না। তথ্য-উপাত্তের কারসাজি করা হয়েছে বলা যেতে পারে, কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো গভীর পর্যালোচনা করেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদি করা হয় তাহলে বলতে হবে আমাদের মাথাপিছু আয় সঠিক না, সেই সঙ্গে প্রকৃত মাথাপিছু আয়ও বলতে হবে। মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকেও নতুন অবস্থান প্রমাণ করতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ বলতে পারে যে আমাদের দেশে বড় পরিবর্তন হয়েছে। আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি নাই। আরো সময় দরকার। আমরা উত্তরণ হলেও তা টেকসই করতে পারব না। এগুলো নিয়ে যুক্তি দাঁড় করিয়ে বাংলাদেশ সিডিপি বরাবর আবেদন করতেই পারে। সেটা তারা বিবেচনা করবে। তারপর ইকোসক (ইউনাইটেড ন্যাশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল) হয়ে সাধারণ পরিষদের কাছে যাবে।’
এ আবেদন করলে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কারণ আমরা ২০১৮ সাল থেকেই জানি যে ২০২৪-এ গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার কথা ছিল। ফলে প্রস্তুতি থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। আবেদন করে যদি তিন বছর সময় পাওয়া যায়, তারপরও গ্র্যাজুয়েশন হবে ২০২৯ সালে। সেই সময়ের মধ্যে তো প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। আবেদন করতেই পারে, এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে আবেদনের পক্ষে বিশেষ করে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে যথেষ্ট শক্ত যুক্তি দাঁড় করাতে হবে।’
তবে এ সময়ের মধ্যে গ্র্যাজুয়েশন থেকে মনোযোগ অন্যদিকে চলে গেলে সেটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে না উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতিতে কোনোভাবেই শৈথিল্য আনা যাবে না।’
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বিষয়ে মূল সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন সিডিপির সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে গ্র্যাজুয়েশন হলে বাংলাদেশের শিল্প, রফতানি ও সামগ্রিক অর্থনীতি বড় ধরনের চাপে পড়বে। বিশেষ করে বৈদেশিক বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারালে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ভূরাজনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দেশীয় অর্থনীতির নানা চাপ বিবেচনায় এখনই এ গ্র্যাজুয়েশন বাংলাদেশের জন্য টেকসই হবে না।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠন বিশ্বাস করে যে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের শিল্প ও রফতানি খাতকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন কমপক্ষে তিন বছর পেছানো জরুরি। এ সময়টুকু আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন বাজার কৌশল, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিজেদের প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে। আমরা মনে করি, পর্যাপ্ত সময় ছাড়া দ্রুত গ্র্যাজুয়েশন হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি হবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।’
রফতানিকারকরা দাবি বলছেন, এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হবে রফতানি খাতে। কারণ এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পায়। সেখানে নতুন করে শুল্কের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। এমনকি ওষুধ খাতও মেধাস্বত্বের বাধায় পড়বে। ফলে ওষুধের দামও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে হয় না।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এলডিসি পেছানোর সময়কাল ন্যূনতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত হতে পারে। আমরা আগেও বলেছি যে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের মতো অবস্থায় নেই। এখন যদি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে যাই, তাহলে দেশের অর্থনীতি এবং দেশের শিল্প-কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকারকে আমরা বারবার অনুরোধ করেছি। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে সরকার এখন এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা করছেন।’
১৯৭৫ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সে সময়কার তথ্যমতে, উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী মাথাপিছু আয় দরকার ছিল ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার। বিবিএসের দেয়া তথ্যমতে, তখন দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ২৭১ ডলার। আর মানব সম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্ট প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ৭২। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকেও উত্তীর্ণ হয় বাংলাদেশ। তিনটি সূচকের যেকোনো দুটিতে উত্তীর্ণ হলেই গ্র্যাজুয়েশন সম্ভব।
২০২১ সালে আরেকটি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নেও উতরে যায় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গড়ে ৬-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। ২০২১ সালে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৬ ডলার। আর মানব সম্পদ সূচক দাঁড়িয়েছিল ৭৫ পয়েন্টে।
২০২৪ সালের ৪-৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সিডিপির একটি পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বলা হয়, এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়েছে কিংবা হওয়ার পথে রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই টানা তিনটি মূল্যায়নে সব সূচকে পাস করেছে।