
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। গতকাল বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাংবিধানিক পদে নিয়োগের কারণে অধ্যাপক আমজাদ হোসেন এরই মধ্যে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাকসুর তফসিল অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ছাত্রনেতারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এই পরিবর্তনের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্ধারিত সময়েই ভোট গ্রহণ হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৮ (১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনস্বার্থে অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেনকে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্যপদে সানুগ্রহ নিয়োগ প্রদান করলেন। তিনি দায়িত্বভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর বা তাঁর ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া—এর মধ্যে যা আগে ঘটে, সে কাল পর্যন্ত তিনি সদস্যপদে বহাল থাকবেন।’
জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আলোচনার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নতুন কাউকে নিয়োগ দেবেন।’
এ বিষয়ে রাকসুর আরেক নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রদবদলে নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। প্রশাসন দ্রুতই নতুন কাউকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবে। এমনও হতে পারে বর্তমান কমিশনের মধ্য থেকে কাউকে দায়িত্ব দেবে। এ জন্য নির্বাচন দীর্ঘায়িত হবে না। নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হবে।’
শিক্ষক–কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি, মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রমের সময় পেছানো, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া—এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এগুলোকে কাকতালীয়ভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁরা মনে করেন, কোনো সংঘবদ্ধ শক্তি ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে। প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে এ ষড়যন্ত্র সম্ভব হচ্ছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার যদি এখন রদবদল হয়, তবে তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে কি না, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। এরপর যদি বিতর্কিত কাউকে কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এরই মধ্যে এক পক্ষ নির্বাচন কমিশন নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে। এমনটি হলে নির্বাচনও পেছাতে পারে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের জন্য নির্বাচন দীর্ঘায়িত হবে না। উপাচার্য মহোদয় ঢাকায় আছেন। ২৩ আগস্ট তিনি ফিরবেন। তিনি ক্যাম্পাসে ফিরলেই আমরা আলোচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেব। কমিশনার নিয়েও কোনো বিতর্ক হবে না। আর তফসিল অনুযায়ী সব কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে। নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে।’