Image description

স্ত্রীকে রাগের মাথায় ‘তিন তালাক’ দিয়ে আবার বিয়ে করেন আবদুল জলিল প্রামাণিক। এরপর গ্রামের মাতব্বরেরা তাঁকে ‘সমাজচ্যুত’ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় দেড় বছর ধরে তাঁকে সামাজিক কোনো কাজে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। তিনি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বিচার দেন। ইউএনও মীমাংসার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেন। সেই ঘটনার জেরে সম্প্রতি তাঁকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জলিল প্রামাণিক ওই গ্রামের দিনমজুর। মারধরের ঘটনায় তিনি থানায় একটি অভিযোগ করেন। পরে গত মঙ্গলবার অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়। তবে এজাহারে ‘সমাজচ্যুত’ করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

গতকাল বুধবার সকালে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে জলিল প্রামাণিককে প্রায় দেড় বছর ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। স্থানীয় রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রশীদ মণ্ডলও বিষয়টি জানেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও ‘সমাজচ্যুত’ করার বিষয়টি সমাধান করতে পারেননি।

জলিলকে গ্রামের সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেওয়া হয় না।
হাফিজার রহমান, বালুকাপাড়া গ্রামের দোকানি

ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের জেরে রাগের মাথায় মৌখিকভাবে নিজের স্ত্রীকে ‘তালাক’ দেন জলিল। এ ঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবার স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে জলিলের পরিবারকে সমাজচ্যুত করেন। তখন জলিল প্রামাণিক বিষয়টি আক্কেলপুরের ইউএনওকে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান প্রায় তিন মাস আগে উভয় পক্ষকে নিয়ে ইউপি কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন। তবে কার্যত কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা জলিল প্রামাণিকের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। ‘সমাজচ্যুত’ জলিল ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদে যাচ্ছিলেন। তখন মাতব্বরেরা তাঁকে দুই দফায় মারধর করেন। এতে তাঁর বাঁ হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

স্থানীয় সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে জলিলকে সমাজচ্যুত করা হয়। বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, জলিলকে গ্রামের সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেওয়া হয় না।

জলিল সমাজবিরোধী কাজ করেছেন। এ কারণে গ্রামের লোকজন তাঁকে সমাজচ্যুত করেছে।
মো. মিল্টন খাঁ, গ্রামের মাতব্বদের একজন

আবদুল জলিলের ভাষ্য, মৌখিক তালাকের ২৯ দিন পর একই নারীকে আবার বিয়ে করেছেন। এ কারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, সুফিয়ানসহ ১০ থেকে ১২ জন তাঁকে সমাজচ্যুত করেন। তাঁরা বলেছেন, হিল্লা বিয়ে ছাড়া বিয়ে বৈধ হবে না। তাঁরা তাঁকে দেড় বছর গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায় করতে ও জানাজায় শরিক হতে দেননি। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি করতেও দেননি।

গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি জলিলের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাঁকে তাঁর বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘জলিল সমাজবিরোধী কাজ করেছেন। এ কারণে গ্রামের লোকজন তাঁকে সমাজচ্যুত করেছে।’

রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ মণ্ডল বলেন, ইউএনও তাঁকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি উভয় পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারেন, সেটি বলেছেন। সমাজচ্যুতির ঘটনার জেরে জলিলকে মারধর করা হয়। এতে তাঁর বাঁ হাত ভেঙে গেছে বলে তিনি জেনেছেন।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আবদুল জলিলের অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে।