
বৃহস্পতিবার ভোর, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে চালককে ওয়াশরুমে রেখে প্রাইভেট কার নিয়ে ছুটছিলেন তিন বন্ধুসহ চারজন। শেষ রক্ষা হয়নি, দ্রুতগতির প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে ধাক্কা দেয় সড়ক বিভাজকে, এরপর উল্টে যায়। প্রাণ যায় তিনজনের। পুলিশ বলছে, অতিউৎসাহী মনোভাব ও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই ঘটেছে দুর্ঘটনা। তবে কেন মূল চালককে ওয়াশরুমে রেখে প্রাইভেট কার নিয়ে ছুটছিলেন তাঁরা, তা জানা যায়নি।
ভোর ৬টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের ষোলঘর যাত্রী ছাউনির সামনে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু আরমান ও তানজিল ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরমানের স্ত্রী রাইসা ও আরেক বন্ধু রবিন। শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক রাইসাকে মৃত ঘোষণা করেন। রবিন শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে, ভাড়া করা প্রাইভেট কারটি নিয়ে তাঁরা মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে বুধবার মধ্যরাতে বেড়াতে আসেন। ভোরে ফেরার পথে প্রাইভেট কারের চালক ওয়াশরুমে যান। যাত্রীদের অনুরোধে এসি চালু রাখেন তিনি। এই সুযোগে আরমানের বন্ধু তানজিল প্রাইভেট কারটি নিয়ে ছুটতে থাকেন। কিছুদূর যেতেই দ্রুতগতির প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।
দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেট কারের প্রকৃত চালক মোহাম্মদ মন্টু মিয়া বলেন, ‘ভোরের দিকে মাওয়া আসেন যাত্রীরা। আধা ঘণ্টার মতো সময় কাটান এখানে। ফেরার পথে এক্সপ্রেসওয়েতে আমার ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার হয়। আমি একটি পাম্পের (ফিলিং স্টেশন) ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় যাত্রীরা বলল, এসি চালায় দিয়ে যান। তখন আমি গাড়ির এসি অন করে ওয়াশরুমে যাই। ফিরে দেখি আমার গাড়ি নাই।’
মন্টু মিয়া বলেন, ‘গাড়ি না দেখে আমি প্রথমেই মালিককে কল দেই। মালিককে সব জানানোর মিনিট পাঁচেক পর মালিক আবার আমাকে কল দেয়। আমাকে জানায়, গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে। পথচারী কল দিয়ে জানিয়েছে।’
দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেট কারটির মালিক দুজন। এক মালিক আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের গাড়িটি চালকসহ ভাড়ায় ছিল। সেই হিসেবে চালকের কথা শোনাই উচিত ছিল যাত্রীদের। চালক ওয়াশরুমে গেলেই যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে চলে গেল—এর পেছনে অন্য কোনো পরিকল্পনা ছিল। এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্তে উঠে আসবে।’
অপর মালিক সুবর্ণ আহম্মেদ বলেন, ‘তানজিল আমার কাছ থেকে মাওয়া যাওয়ার কথা বলে গাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। বুধবার সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে গাড়িটি চায় সে। চালকসহ গাড়ি নিয়ে তাঁরা হাতিরঝিলে কিছু সময় ঘোরাঘুরি করে। বুধবার রাত ৪টার পর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় তাঁরা। ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।’
চালক মন্টু মিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে সুবর্ণ আহম্মেদ বলেন, ‘ওয়াশরুম থেকে ফিরে চালক গাড়ি না দেখেই ভোর ৫টার দিকে আমাকে কল করে। তখন আমি তানজিলকে কয়েকবার কল দেই। কিন্তু তানজিল আমার কল ধরে না। পরে আমি তানজিলের বড়ভাইকে কল দেই। মিনিট পাঁচেক পর তানজিলের মোবাইল ফোন এক স্থানীয় ভদ্রলোক রিসিভ করে দুর্ঘটনার তথ্য জানান।’
হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম ছিদ্দিক বলেন, অতিউৎসাহী মনোভাব ও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শীর্ষনিউজ