
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে হত্যার হুমকির ঘটনায় দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ৭৩ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নাগরিকের স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতি দাতারা জানান, গত ১১ আগস্ট রাতে সাহারা চৌধুরী নামের এক শিক্ষার্থী “এন্টার্কটিকা চৌধুরী” নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসকে উদ্দেশ্য করে দুটি কার্টুন ক্যারিকেচার প্রকাশ করেন। ওই কার্টুনে তাদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষক সাহারা চৌধুরীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন।
শিক্ষাবিদরা জানান, সাহারা চৌধুরীর একটি অনলাইন মেনিফেস্টোতে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে সমর্থনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু উদ্বেগজনকভাবে, ঘটনার পর কিছু শিক্ষকসহ ১৬২ জন নাগরিক একটি বিবৃতি দিয়ে সন্ত্রাসবাদ নিন্দা না জানিয়ে বরং হুমকির শিকার দুই শিক্ষককে ক্ষমা চাইতে বলেন। শিক্ষাবিদদের মতে, এটি ভয়াবহ ভিক্টিম ব্লেমিং এবং মবতন্ত্রের স্পষ্ট উদাহরণ।
তারা বলেন, ড. সারোয়ার হোসেন ও আসিফ মাহতাব উৎসের মতাদর্শ বা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কারও মতভেদ থাকলে তা রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। তারা যদি কোনো আইন ভঙ্গ করে থাকেন, তবে আইনগত প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ভিন্নমতের মানুষকে নির্মূলের চেষ্টা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আইনের শাসনভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার পরিপন্থী।
বিবৃতি দাতারা সরকারের কাছে চারটি দাবি জানিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে আছে—
১. ড. সারোয়ার হোসেন ও আসিফ মাহতাব উৎসের নিরাপত্তা অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে।
২. ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
৩. অভিযুক্ত সাহারা চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইন অনুযায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
৪. বিবৃতিদাতা শিক্ষক ও নাগরিকদের তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করে হুমকির শিকার দুই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
বিবৃতি দাতারা মনে করেন, আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই একটি নিরাপদ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক ও পেশাজীবীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন— ড. হাসান মাহমুদ (নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, কাতার), আনিসুর রহমান (ইলি লিলি এন্ড কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্র), ড. হেলাল মোহাম্মদ খান (জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র), ড. ফারুক ভূঁইয়া (ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স, যুক্তরাজ্য), ড. ফরহাদ হোসেন (সোফিয়া ইউনিভার্সিটি, জাপান), ড. সিব্বির আহমেদ (ইউনিভার্সিটি অব ভারজিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র), মোহাম্মদ তালহা (রিসার্চ ফেলো, সিজিসিএস) প্রমুখ। ৭৩ জন দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও পেশাজীবী এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।