
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিস্তার বুকে দাঁড়িয়ে গেল বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’। গাইবান্ধার হরিপুর ও কুড়িগ্রামের চিলমারীর মধ্যে স্থাপিত এই সেতুটি উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে আশা করছে স্থানীয় জনগণ।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে গাইবান্ধার হরিপুর ঘাট এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে সেতুটির উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় মোনাজাতের মাধ্যমে সেতুর কল্যাণ কামনা করা হয়। পরে ফিতা কেটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় সেতুটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষ অংশ নেন এবং উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটি সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কাজের দায়িত্বে ছিল চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটি এলজিইডির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেতুর সঙ্গে নির্মিত হয়েছে ৮০ কিলোমিটার এক্সেস রোড, ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি ব্রিজ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার।
সেতু চালু হওয়ায় গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের কৃষি পণ্য পরিবহন, শিল্পায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা এবং পর্যটন খাতে নতুন গতি আসবে বলে আশা করছে এলাকাবাসী। তাদের ধারণা, এই সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র, যা সৃষ্টি করবে হাজারো কর্মসংস্থান। সেতুর ফলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। একই সঙ্গে সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নদীবন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে বাস্তবে রূপ নেওয়া এই সেতু উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিস্তার তৃতীয় এই সেতু শুধু যাতায়াত ব্যবস্থায় নয়, অর্থনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নতুন ইতিহাস রচনা করবে।