
‘সড়ক ক্যাইরা নিলো আমার ছেলেরে, আমার তিন কলিজার টুকরারে। এখন আমারে মা বলে ডাকব কে রে? দাদি মা বলে ছুটে আসব কে রে? দুর্ঘটনার আগের দিনই বাপজান ক্যইছিল, এ মাসেই বাড়ি আসব। অফিস থেইকা ছুটিও পাইছিল ছেলেটা। কপাল দ্যাখো, বাড়ি আসল ঠিকই, কিন্তু লাশ হইয়া। আল্লারে! আমার সংসারের সব সুখ নিভে গেল।’ বিলাপ করতে করতেই কথাগুলো বলছেন গাজীপুরের নাওজোড় এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত ছেলে আনোয়ার হোসেনের মা আলেকজান বেগম।
গতকাল মঙ্গলবারের এ দুর্ঘটনায় আরও নিহত হন- আনোয়ারের স্ত্রী ও মেয়ে আন্নি খাতুন। আনোয়ার নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা খলিল হোসেনের ছেলে। ছেলে-ছেলের বউ ও নাতনিকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার।
জানা গেছে, আনোয়ার ময়মনসিংহে আরএফএল গ্রুপে গাড়িচালকের চাকরি করতেন। মঙ্গলবার সকালে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ঢাকার আশুলিয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। কিন্তু গাজীপুরের বাসন থানার নাওজোড় এলাকায় পৌঁছালে তাদের বহনকারী অটোরিকশার পেছনের চাকা হঠাৎ খুলে যায়। এসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিকশাটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেলে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় আন্নি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় আনোয়ার ও আঁখির।
খলিল হোসেন বারবার বিলাপ করে বলেন, ‘আমার ছেলে সংসারটা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখত। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমাকে কে বাবা বলে ডাকবে? আর আমার ফুটফুটে নাতনিও দাদা বলে ছুটে আসবে না।’
মঙ্গলবার রাতে নিহতদের মরদেহ প্রথমে ঢাকার আশুলিয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে ভোরে গ্রামের বাড়ি মুকিমপুরে পৌঁছায়। আজ বুধবার সকাল ১০টায় গ্রামের কবরস্থানে তিনজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
গুরুদাসপুর থানার ওসি আসমাউল হক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাসন থানা-পুলিশ কাভার্ড ভ্যান ও অটোরিকশা হেফাজতে নিয়েছে।