Image description
 

শুল্ক জটিলতায় হিলি স্থলবন্দর আটকে আছে আমদানি করা চাল। গত চারদিনে ৮৮ ট্রাকে অন্তত ৩৫২০ মেট্রিক টন বন্দরে আটকা পরায় চরম বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা।

 

এবিষয়ে সোমবার রাতে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বলেন, সরকার চাল আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারে আগের মতো ২ শতাংশ আয়কর ঘোষণা দিলেও কাস্টমসের সার্ভারে বর্তমানে চালের আমদানি শুল্ক ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ দেখাচ্ছে।

 

এই শুল্ক দিয়ে চাল ছাড় করলে কেজি প্রতি প্রায় ৪০ টাকা ডিউটি দিতে হবে। ফলে প্রতি কেজি চালের আমদানি মূল্য দাঁড়াবে ৯৫ টাকার ওপরে। এমতাবস্থায় চাল খালাস করলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমদানিকারকদের।

অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অন্যথা, আমদানিকারকদের প্রতিদিন অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য স্থলবন্দরেও একই ধরনের সমস্যা চলছে বলে জানা গেছে।

দেশের ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সারাদেশের ২৪২ জন আমদানিকারককে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর পর গত মঙ্গলবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। তবে আমদানি হলেও চার দিনেও ব্যবসায়ীরা খালাস করছেন না।

এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে চাল আমদানি শুরু হলেও তা ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যায়। চার মাস পর গত ১২ আগস্ট থেকে আবারও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ছাড়া অন্য কোন শুল্ক-কর আরোপযোগ্য নেই।

এদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণার পর বিভিন্ন চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশের ৫ লাখ টন শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ঘোষণার পর ভারতে চালের বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

সংবাদ মাধ্যমটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোক্তা পর্যায়ে স্বর্ণা চালের দাম প্রতি কেজি ৩৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩৯ রুপি, মিনিকেট ৪৯ রুপি থেকে বেড়ে ৫৫ রুপি, রত্না চাল ৩৬-৩৭ রুপি থেকে বেড়ে ৪১-৪২ রুপি এবং সোনা মসুরি ৫২ রুপি থেকে বেড়ে ৫৬ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ভারতের চাল রপ্তানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান রাইসভিলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুরজ আগরওয়াল গত মাধ্যমকে বলেন, গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর সেদিন রাত থেকেই ভারত থেকে চালের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। তিনি আরও জানান, পরিবহন খরচ ও সুবিধার কারণে উত্তরপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের চালকলগুলোও পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চাল রপ্তানি করছে।

পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই বাংলাদেশের শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবহিত ছিলেন। তাই তারা পেট্রাপোল সীমান্তের গুদামে চাল প্রস্তুত রেখেছিলেন।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে চালের দাম ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ সরকার শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভারতের চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হালদার ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেশব কুমার হালদার গণ মাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ ভালো থাকায় এবং ভারতে সরকারি ও বেসরকারি মজুত যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় বৈশ্বিক দাম কিছুটা কমেছিল।

বাংলাদেশের এই আমদানি আদেশ ভারতীয় বাজারে চাহিদা তৈরি করে বিশ্বব্যাপী চালের দামের পতনকে আংশিকভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।