Image description
শেবাচিম হাসপাতাল » পর্যায়ক্রমে আরও ২০ টি মেশিন সচল করা হবে : হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ » আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শেবাচিম কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি । » হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে : পুলিশ » স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে প্রায় ২০ দিন ধরে আন্দোলন চলছে ।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বরিশাল শের - ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ ( শেবাচিম ) হাসপাতালের প্রায় ১০০ যন্ত্রপাতি সচল করা হয়েছে । পাঁচ দিন ধরে কারিগরি দলের সদস্যরা হাসপাতালের রেডিওলজি , ইমেজিং , প্যাথলজি , সিসিইউ , আইসিইউ , অপারেশন থিয়েটার , চক্ষু বিভাগ , সার্জারি , নাক- কান - গলা বিভাগের বিভিন্ন অকেজো মেশিন মেরামতের কাজ করেন ।

গতকাল রোববার সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানান । এই পরিস্থিতিতে গতকালও শেবাচিমের কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে । এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা । শেবাচিম হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে , স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের আন্দোলনের চাপের মুখে হাসপাতালের অচল যন্ত্রগুলো সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয় ।

গত সপ্তাহে ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের ( নিমিউ অ্যান্ড টিসি ) সদস্যরা হাসপাতালে আসেন । এরই মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় ৯৫ টি অচল মেশিন সচল করেছেন তাঁরা । পর্যায়ক্রমে আরও ২০ টি মেশিন সচল করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে । কারিগরি টিমের সদস্য উপসহকারী প্রকৌশলী ( অপটিক্যাল ) হাফিজুর রহমান জানান , পাঁচ দিন ধরে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে আসা টিম ৬ টি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন , ২৫ টি সাকশন মেশিন , ১০ টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর , ৫ টি অটোক্লেভ , ১ টি সি- আর্ম মেশিন , ২ টি মনিটর , ৮ টি ওটি টেবিল , ৫ টি ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটর , ১০ টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা , ৫ টি আইসিইউ বেড , ৬ টি ওটি লাইট , ৫ টি ডেন্টাল ইউনিট , ২ টি ডায়াথার্মি মেশিন , ৪ ইসিজি মেশিন এবং ১ টি এক্স - রে মেশিন মেরামত শেষে সচল করে ।

তিনি জানান , হাসপাতালের একটি করে ইকো , কার্ডিয়াক ডিফাইব্রিলেটর , কার্ডিয়াক মনিটর , ইসিজি ক্যাথল্যাব ( এনজিওগ্রাম ) , সিটি স্ক্যান , চোখের লেসিক , চোখের ফ্যাকো , অপটিক্যাল কোহেরেন্স টমোগ্রাফি ( ওসিটি ) , ইউরোলজি লিথোরিপটর , আরও একটি সি - আর্ম , দুটি করে এক্স - রে , এন্ডোসকপি মেশিন মেরামত শেষে চালু করা হবে । হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মিথুন রায় বলেন , হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রসহ রেডিওলজি এবং ইমেজিং , প্যাথলজি , সিসিইউ , আইসিইউ , অপারেশন থিয়েটার , চক্ষু বিভাগ , সার্জারি ও নাক - কান - গলা বিভাগের প্রায় ১০০ মেশিন সচল করা হয়েছে ।

হাসপাতালের পরিচালক বলেন , হাসপাতালের অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো অবস্থায় ছিল । সেগুলো মেরামত করে সচল করা হয়েছে । নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে আসা সাত সদস্যের কারিগরি টিম জরুরি ভিত্তিতে ৯৫ টি অকেজো মেশিন সচল করে হস্তান্তর করেছে । আমরা মেশিনগুলো রোগীর সেবায় কাজে লাগাচ্ছি । বাকি মেশিনগুলো সচল করতে যন্ত্রাংশ আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে । ’ পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ: শেবাচিম হাসপাতালে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার বিচারের দাবিতে গতকাল বেলা ১১ টার দিকে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয় । পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনে অবস্থান নেন । একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে ঢুকতে চাইলে প্রধান গেট আটকে দেয় পুলিশ । বেলা একটার দিকে হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা দুইটার দিকে হাসপাতালের ভেতর থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয় । আন্দোলনকারীরাও হাসপাতালের ভেতরে ইটপাটকেল ছুড়ে পাল্টা জবাব দেন । এতে শেবাচিম এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । এ সময় হাসপাতালের ভেতরে বেশ কয়েক ব্যক্তিকে মুখে মাস্ক পরে হাতে লাঠি নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় । পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে ।

আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দিন রনি বলেন , ‘ শেবাচিমের সামনে অনশনে বসা ছাত্রদের ওপর গত বৃহস্পতিবার হামলা করা হয়েছে । উল্টো থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে । আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঠেকাতে নানান ষড়যন্ত্র চলছে । এসব কর্মকাণ্ড দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া যাবে না । ' বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন , শেবাচিম হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে । অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে । ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে : এদিকে চিকিৎসকের ওপর হামলা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে গতকাল বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন শের - ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা । এর ফলে হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে । এক বিজ্ঞপ্তিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা জানান , কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিল ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা । কিন্তু হাসপাতাল পরিচালকের অনুরোধ ও রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয় । এ সময় পরিচালককে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয় । কিন্তু রোববার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার দিলীপ রায় স্যারের ওপর অতর্কিত হামলা ও স্টাফদের ওপর হামলা করে । এই ঘটনার বিচার ও নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা ।