Image description

দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম বেশ কয়েকটি ব্যাংক তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ, খেলাপি ঋণের বোঝা, বড় অঙ্কের লোকসান এবং তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমানে পাঁচটি ব্যাংক- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনায় রয়েছে। এই ব্যাংকগুলোতে এখন চরম তারল্য সংকট বিরাজ করছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা নিজের জমানো টাকা তুলতে পারছেন না। নানা টালবাহানা আর অজুহাত দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তারা। তাদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ। অথচ এসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা পেয়েছে। 

জানা গেছে, টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া গ্রাহকের দায় পরিশোধের নামে এই টাকা নিলেও ধারের এসব টাকা ভিন্নখাতে ব্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে গত কয়েক মাসে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে।  কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার পেয়েও সংকট কাটাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। 

সরজমিন সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংকের শাখা পরিদর্শনে গিয়ে গ্রাহকদের অতি প্রয়োজনেও টাকা না পাওয়ার বেশ কিছু চিত্র চোখে পড়ে।

ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল কাদের। তিনি এক্সিম ব্যাংকের নিউ ইস্কাটন শাখা থেকে জরুরি প্রয়োজনে দেড় লাখ টাকা তুলতে এসেছেন। তবে এক সপ্তাহ ঘুরে এক হাজার টাকাও হাতে পাননি বলে জানান তিনি। 
এই চিত্র শুধু কাদেরের নয়, এটি এখন গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মতো বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রায় লাখো গ্রাহকের প্রতিদিনের বাস্তবতা। 

এর আগে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের একীভূত হওয়ার কথা থাকলেও, এক্সিম ব্যাংক সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক গঠনের যে পরিকল্পনা করছে, সেখানেও এক্সিম ব্যাংকের নাম রয়েছে। 

ন্যাশনাল ব্যাংকের এক গ্রাহক জানান, ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলতে পাঁচদিন থেকে ঘুরছি। অপর এক গ্রাহক জানান, ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার টাকাও পাচ্ছি না। 

ন্যাশনাল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, গ্রাহকদের ভোগান্তি হচ্ছে, কিন্তু ব্যাংকে টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ছোট ছোট অঙ্কের টাকা দিতে হচ্ছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক মাহামুদুল হক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ৫০ হাজার টাকার চেক দিলে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা। আমার ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কর্মীদের বেতন দিতে পারছি না। কারণ ব্যাংকে টাকা থাকা সত্ত্বেও আমি তা তুলতে পারছি না।’

মতিঝিলে ইউনিয়ন ব্যাংকের শাখার গ্রাহক নজরুল বলেন, ব্যাংকে টাকা রেখে মহাবিপদে আছি। মাত্র ৫ লাখ তুলতে পারছি না। ব্যাংকের কাছে ১ লাখ টাকার চেক দিলেও তা ক্যাশ করেনি। একই অভিযোগ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক বায়োজিদের। 
সার্বিক বিষয়ে গ্রাহকদের টাকা দেয়ার ব্যাপারে সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ব্যাংকের অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং মার্জার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে গ্রাহকের আস্থা ফিরে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তারা ধাপে ধাপে সমস্যাগুলো সমাধান করছে, তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও সময় লাগবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, নিয়ম কানুন মেনেই ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেয়া হয়। কিছু ব্যাংকে সহযোগিতা করা হয়েছে। কেননা, গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে এসব করা হয়েছে। গ্রাহকদের দায় পরিশোধ ছাড়া এই টাকা অন্য কোনো খাতে ব্যয় করার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক একীভূত হবেই, এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে আমানত নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত থাকবে। সরকার আমানতকারীদের দায়িত্ব নেবে।