
জীবিত অবস্থায় কেউ দায়িত্ব নেয়নি। মৃত্যুর পর লাশ ভাগ করে দাফনের দায়িত্ব নিয়েছে দুই পরিবার। রাজশাহী শহরের টিকাপাড়া এবং পবা উপজেলার বামনশিখরে শনিবার বিকেলে তাদের দাফন করা হয়েছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিখর গ্রামে একই বাড়িতে চারজনের মৃত্যুর পর তাদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে দাফন হয়েছে। বামনশিখর গ্রামে দাফন হয়েছে মিনারুল ইসলামের সঙ্গে ছেলে মহিনের। আর টিকাপাড়ায় মনিরা খাতুনের সঙ্গে দাফন হয়েছে মেয়ে মিথিলার।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানিয়েছে, মনিরার মা শিউলি বেগম দুই নাতি ও মেয়ের কবর তাঁর বাড়ির পাশে কবরস্থানে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিনারুলের পরিবার আপত্তি তোলে।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নগরীর মতিহার থানায় দুটি মামলা করা হয়। নিহত মিনারুলের বাবা রোস্তম আলী অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেন। আর নিহত মনিরার মা শিউলী বেগম দুই নাতি ও কন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে।
এ বিষয়ে পবার পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী বলেন, ‘মিনারুলের পরিবার চারটি মরদেহই নিতে চেয়েছিল। পরে তিনটি মরদেহ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য তাদের গ্রামের কবরস্থানে তিনটি কবর খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু মেয়ের পরিবার দুই নাতি ও মেয়ের লাশ দাবি করলে জটিলতা তৈরি হয়। শেষে সমঝোতা করা হয়।’
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‘মিনারুল তিনজনকে হত্যার পর আত্মহত্যার কথা চিরকুটে লিখে গেছেন। ফরেনসিক পরীক্ষায় যদি এটা মিলে যায়, তাহলে আর হত্যা মামলা চলবে না। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আর যদি ফরেনসিক পরীক্ষায় মিনারুলের হত্যার প্রমাণ না মেলে, তখন তদন্ত করে প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করা হবে।’
ওসি জানান, মিনারুলের কাছে অনেকে টাকা পেত। তাদের চাপ ছিল কিনা, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার লাশ হিমঘরে ছিল। আজ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হত্যা মামলা কেন– প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ‘শিউলী বেগম প্রথমে মামলা করতে রাজি হননি। ভবিষ্যতের জন্য আমরা বুঝিয়ে মামলাটি করিয়েছি।’
শুক্রবার সকালে বাড়ির দুটি ঘরে চারজনের লাশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে মিনারুল ইসলামের (৩০) লাশ ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া। তাঁর পাশে বিছানায় ছিল ছেলে মাহিন (১৩)। পাশের ঘরের বিছানায় ছিল মনিরা খাতুন (২৮) ও মিথিলা (১)।
মিনারুলের মৃতদেহের পাশে ঘর থেকে দুই পাতার একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। এটি মিনারুল লিখে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’