
ঘটনাটা অনেকটা শেখ হাসিনার মতো হলো। কারণ উনিও উনার নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, উনার পুরো যে মন্ত্রিপরিষদ হবে, তাদের তথ্য দিবেন বিত্ত-বৈভব ও আয়ের বিষয়ে এবং উনি সেটা রক্ষা করেননি, এমন মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে কত টাকা পাচার করা হয়েছে এবং এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, ভট্টাচার্য সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। খবর বিবিসি বাংলার।
তিনি বলছিলেন, আ.লীগ আমলে দলটির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে, সেটার বিপরীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নজির স্থাপন করার সুযোগ ছিল ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সামনে।
‘অনেক প্রত্যাশা ছিল যে, বর্তমান সরকার একটা নতুন নজির স্থাপন করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটাও হয়নি, হতাশ কণ্ঠে বলেন ভট্টাচার্য।
অথচ ক্ষমতা গ্রহণের দুই সপ্তাহের মাথায় গত বছরের ২৫ শে আগস্ট সন্ধ্যায় ইউনূস জাতির উদ্দেশে প্রথম যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, শিগগিরই তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নিজেদের আয় ও সম্পদের বিবরণী জনগণের সামনে প্রকাশ করবেন।
‘বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সব সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে, ভাষণে বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।
তার ওই ভাষণের পর উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশে সরকার আলাদা করে একটি নীতিমালাও তৈরি করেছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, উপদেষ্টাদের কারও আয় ও সম্পদের হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি।
এর মধ্যেই উপদেষ্টা, তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একের পর এক অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে। যদিও উপদেষ্টারা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।
‘কিন্তু যদি (সম্পদের তথ্য) প্রকাশ করা না হয়, তাহলে প্রশ্নটা থেকে যায় যে, কেন লুকানো হচ্ছে? কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? তাহলে কি লুকানোর কিছু আছে?’ বলেন দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
অন্যদিকে ড. ইউনূস ক্ষমতায় বসার পর তার হাতে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেটি নিয়ে নানান সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠতে দেখা যাচ্ছে।
‘তাহলে পরিবর্তনের কী নমুনা এখানে হাজির হলো?’ প্রশ্ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের।
দুর্নীতি-চাঁদাবাজির যত অভিযোগ
আ.লীগ সরকারের শাসনামলে যেভাবে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে সেটির অবসান ঘটবে বলেই প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকে।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছিল যে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও তার প্রথম ভাষণে সেই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন।
কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর এক বছর না পেরোতেই ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে।
সবশেষ গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা আসিফ। জানে আলম অপু নামে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত যে নেতা অভিযোগটি তুলেছেন তার সঙ্গে দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।
‘৫ আগস্ট ২০২৪-এর পরে ওর সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি, কথাও হয় নাই এবং রিয়াদ নামে আরেকজনের কথা যে বলা হচ্ছে, তাকে আমি চিনি না এবং ওরও আমাকে চেনার কথা না। কারণ আমাদের কখনো দেখা হয় নাই, বৃহস্পতিবার বলেন আসিফ।
তিনি মনে করেন যে, চাঁদাবাজির ঘটনায় তার নাম জড়ানোটা ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।