
সিলেটের পর্যটন অঞ্চলে চলছে প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ হরিলুট। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর, ভোলাগঞ্জ–ছাতক রোপলাইনের লোডিং স্টেশন, কোম্পানিগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা এমনকি ইসি এলাকাভুক্ত জাফলং থেকেও গত কয়েক মাসে লুট হয়েছে শত শত কোটি টাকার পাথর ও খনিজ সম্পদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল ও প্রশাসনের গাফিলতির সুযোগেই এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।
প্রকৃতিকন্যা সিলেটে কিছুদিন আগেও যেখানে প্রকৃতি সাজাতো স্বপ্নের রঙ, সেখানে এখন চলছে লুটপাটের এক মহোৎসব। পাখির চোখে দেখলে মনে হবে যেন ভূমিকম্পে উলটপালট হয়ে গেছে রূপ বৈচিত্র্যের এ স্থান।
ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর, জাফলংয়ের নীল জলরাশি আর শাহ আরেফিন টিলা কিংবা ভোলাগঞ্জ-ছাতক রোপলাইনের লোডিং স্টেশন সবাই আজ পাথরখেকোদের করাল গ্রাসে ক্ষতবিক্ষত। অবৈধ পাথর উত্তোলনের কারণে নষ্ট হয়েছে নদীর কলতান আর পানি পাথরের জলধ্বনির। বিলীন হয়েছে সবুজ পাহাড়ের বুক সব মিলিয়ে প্রকৃতি রূপ নিচ্ছে ধ্বংসস্তূপে।
স্থানীয়রা বলছেন, সময়ের পালা বদলে যার হাতে ক্ষমতা তিনিই ভক্ষণ করছেন প্রকৃতি প্রদত্ত এসব সম্পদ। রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে ক্ষমতাবানরাই আড়ালে থেকে এসব লুটপাটের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের ইন্ধনেই প্রশাসনিক সহযোগিতায় ধ্বংস হচ্ছে সিলেটের প্রাকৃতিক লীলাভূমি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিলেটের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক অপশক্তি ও প্রশাসনিক বল খাটিয়ে এখানে লুটপাট চলছে। ২৪ ঘণ্টা এখানে লুটপাট চলেছে। এগুলোর পেছনে রয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসন। সাদাপাথর ধ্বংসের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে।
বেলার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলবো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিন্তু এ কাজগুলো হয়। যখনই যে দল ক্ষমতায় থাকেন বা পেশীশক্তিতে বলিয়ান হয় তারাই এ কাজগুলো করেন কিংবা যারা করেন তাদের ছত্রছায়ায় থেকেই করেন।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, অবৈধ পাথর উত্তোলন ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। আর সীমান্ত এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় টহল জোরদার করেছে বিজিবি। পাশাপাশি পর্যটন রক্ষায় জেলা ও বিভাগসহ মাঠ প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগের কথা জানালেন তারা।
সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘এখানে নিয়মিত মামলাও হচ্ছে। বিশেষ করে পাথর এবং বালি যেটা অবৈধ উত্তোলন, সেটা কিন্তু উত্তোলন নিষেধ। এছাড়াও অন্যান্য যেসব এলাকায় বালু উত্তোলন আছে সেটাও পরিবেশগত আসপেক্ট থেকে আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করি। এবং সেক্ষেত্রে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সিলেট বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘পাথর যেন কেউ নিতে না পারে, চুরি করতে না পারে- সেজন্য আমাদের টহল অব্যাহত রয়েছে। সেজন্যই পাথরগুলো এখনো এখানে রয়ে গেছে। এবং এটা ঘিরেই কিন্তু স্পটটা। কাজের জন্য আমাদের লোকবল বাড়িয়েছি। রাত দিন টহল দিচ্ছে। কারণ রাতেও চুরি করার টেন্ডেন্সি আছে। বেশ কয়েকজনকে দুই বছরের জেল দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসন বিজিবির যৌথ সমন্বয়ে যে মোবাইল কোর্ট আছে তার শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হবে।’
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন স্থানগুলো রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। নাহয় ভবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিনিয়োগ।