Image description

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে সংস্কারের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও এর বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়নের কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক না হওয়ায় আটকে গেছে ‘জুলাই সনদ’ সইয়ের বিষয়টি।

এমন পরিস্থিতিতে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নির্ধারণের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার পর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনা করবে কমিশন। এই আলোচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কমিশনের মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঐকমত্য কমিশন দুই বছরের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছে। এ বিষয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ বেশ কয়েকটি দলের। দলগুলো চায় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক। পাশাপাশি বাস্তবায়ন করা হোক মৌলিক সুপারিশগুলোর। অপরদিকে নির্বাহী আদেশ, আইন ও নীতির আলোকে সম্ভব এমন সব সুপারিশ এই মুহূর্তে বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর।

গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সমন্বিত করতে জুলাই আন্দোলনের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে (২০ মার্চ-১৯ মে) আলাদাভাবে আলোচনা হয়।

গত ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে কমিশন। প্রথম পর্বের আলোচনায় ১৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়। এর মধ্যে অধ্যাদেশ, নীতি ও নির্বাহী সিদ্ধান্তের কিছু কিছু সরকার ইতোমধ্যে বাস্তবায়নও করেছে। দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে সাংবিধান সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ২০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তার মধ্যে ১১টি বিষয়ে সব দলের সমর্থনে জাতীয় ঐকমত্য এবং বাকি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে কোন কোন দলের ভিন্নমত রয়েছে তা জুলাই সনদে উল্লেখ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন।

জানা গেছে, আলোচনার শেষ পর্যায়ে গত ৩০ জুলাই ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমিশন সদস্যরা। ওই সাক্ষাতে তারা সংস্কার প্রস্তাবগুলো দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণসহ জুলাই সনদের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। ওই সময় প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া জানতে চান। জবাবে একেকজন একেক ধরনের প্রস্তাব দিলেও কার্যকর কোনো প্রস্তাব আসেনি। তখন প্রধান উপদেষ্টা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক করতে সংস্কার কমিশনগুলোর সদস্য, সংবিধান, আইন ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো সমন্বিত করে ৫ আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর করতে ঐকমত্য কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সামনে আসায় তা আর হয়নি। এই প্রক্রিয়া শেষ করতে কমিশনের আরো দুই মাসের মতো সময় প্রয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক করতে রোববার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একদফা বৈঠক করেছে কমিশন। প্রথম দিনের বৈঠকে ছয়জন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে একাধিক বিকল্প পরামর্শ এসেছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলো কখন, কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটাও আলোচনায় আসে। কিছু বিষয় আছে সরকার চাইলে এখনই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো পরবর্তী সরকার যদি নির্ধারিত সময়ে এগুলো সংসদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন না করে, তাহলে এসবের কার্যকারিতা আর থাকবে না। তাই পুরো সনদকে একটি আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। এক্ষেত্রে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, জুলাই সনদকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে আসে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশকিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উঠে আসে। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে এখতিয়ার আছে কি না সেই প্রশ্নও সামনে আসে।

এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত পাওয়া যায়। সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সে গঠিত এই সরকারের সংস্কারের ম্যান্ডেট রয়েছে বলে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মত দেন। কেউ কেউ জুলাই সনদকে সংবিধানের অংশ হিসেবে গণ্য করতে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স (অনুচ্ছেদ ১০৬-এর বিধান মতে) নেওয়ার মত দেন। তাদের অভিমত, জনগণ ব্যাপক ভিত্তিতে জুলাই সনদের পক্ষে রায় দিলে এবং সুপ্রিম কোর্ট পক্ষে রেফারেন্স দিলে জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে জুলাই সনদ সংবিধানের অংশ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এছাড়া প্রোক্লেমেশন, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের (এলএফও) মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করা যায়, এমন মতও দিয়েছেন কেউ কেউ। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। এরপর কমিশন আবারো দলগুলোর সঙ্গে বসবে।

সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে শেষদিকে কয়েকটি দল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। দলগুলোর কাছে আগেই পাঠানো জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। খসড়ার এই প্রস্তাবে বিএনপি একমত হলেও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আরো কিছু দল আপত্তি তুলেছে। তারা মনে করে, শুধু অঙ্গীকার থাকলে হবে না; জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে, তা শেষপর্যন্ত কতটা বাস্তবায়ন হবে সেই প্রশ্নও রয়েছে দল দুটির। বিশেষ করে নোট অব ডিসেন্টের মধ্য দিয়ে যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছে এগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাদের।

জানা যায়, সংলাপের সময় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) ও ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বাছাই কমিটির প্রস্তাবে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি। পরে কমিশন থেকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যথাÑনির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত বিষয় পৃথকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সব দল একমত হয়।

বাকিগুলোর ক্ষেত্রে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিলেও ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এর বাইরেও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি), দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টে সিদ্ধান্ত এসেছে। এই নোট অব ডিসেন্টে সিদ্ধান্ত আসা বিষয়গুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে কমিশনসহ কয়েকটি দলের। তারা মনে করে, নির্বাচনের আগে এ বিষয়গুলোর সুরাহা না হলে নির্বাচিত সরকার আসার পর ওইসব সিদ্ধান্ত থেকে দলগুলো সরে যেতে পারে।

এর আগে গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক করতে আলোচনার কথা বলেন। আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত ও প্রত্যাশিত স্বাক্ষরিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবেÑতা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। সে লক্ষ্যে কমিশন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে। ওই আলোচনার আলোকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় বসবে কমিশন। আশা করা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্বল্পসময়ের মধ্যেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

নোট অব ডিসেন্টে আসা সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, নোট অব ডিসেন্টের যেমন গুরুত্ব আছে, তেমনি ব্যাপকসংখ্যক দল যখন কোনো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়, সেটারও গুরুত্ব আছে। এটা বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।

জুলাই সনদের যেসব বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে, সেগুলো স্বাক্ষরিত হওয়ার পরপরই বাস্তবায়ন শুরু হওয়া দরকার বলে মনে করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সুরাহা হওয়া জরুরি। যেটা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এখনই করা সম্ভব, সেটা পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চব্বিশের গণঅভ‍্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি। আমরা যেন ইতিহাসের পেছনের দিকে চলে না যাই; ১৯৯০ ও ২০০৮ সালের অভিজ্ঞতা ভুলে না যাই।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এ বিষয়ে বিবিসিকে বলেন, নির্বাচনের পূর্বে জুলাই সনদকে আইনি, সাংবিধানিক ভিত্তি দিয়ে ওই সনদ অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে।

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, দলীয় পদে প্রধানমন্ত্রীর না থাকা, দুই সংসদের নির্বাচিত প্রার্থীদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো কিছু বিষয়ে ঐকমত্য না হলে এনসিপি জুলাই সনদে সই করবে না বলেও আদীব জানান।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শেষদিনের সংলাপের পর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছিলেন, সনদের আইনি ভিত্তি অবশ্যই দিতে হবে। অন্যথায় এতদিনের আলোচনা অর্থহীন। তবে আইনি ভিত্তি কীভাবে হতে পারে, সেটা নিয়ে আরো আলোচনা হতে পারে। এ নিয়ে প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইন বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে। লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, গণভোট ও অধ্যাদেশ। যেভাবেই হোক, আইনি রূপ এ সরকারকেই দিতে হবে। না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। আইনি ভিত্তি না পেলে জামায়াতে ইসলামী সনদে সই করবে না।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, জুলাই সনদ নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের দুবছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাও জাতির উদ্দেশে ভাষণে একই কথা বলেছেন। আমরাও এর সঙ্গে একমত। এই শর্তে আমরা সনদে সই করতে প্রস্তুত আছি। আমরা বলেছি, অধ্যাদেশ বা বিধি জারি করে যেগুলো সম্ভব সরকার চাইলে এখনই করতে পারে। তবে সংবিধানের বিষয়টি নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, অন্য কোনোভাবে সংবিধান সংশোধন করতে গেলে খারাপ নজির স্থাপিত হবে। এটা উচিত হবে না।

জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির দাবির প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোসহ দীর্ঘ আলোচনা করে আমরা একমত হয়েছি। জনগণের অভিপ্রায় তো একটি আইনি ভিত্তি।

আলোচনার জন্য ডাকলে বিএনপি যেতে প্রস্তুত আছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়নের আইনি ও সাংবিধানিক বৈধ কোনো প্রক্রিয়া আছে কি নাÑএ বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এরপর আমাদের ডাকলে আবারও যাব। তবে আমি মনে করি, জাতীয় সংসদই এই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ও সাংবিধানিক বৈধতা দিতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার দেশকে বলেন, বাস্তবায়নের বিষয়টি আমাদের ওপর চাপানো হবেÑসেটি জানা ছিল না। প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলো এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরে প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন। এজন্য আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চয়ই আমরা একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারব।

কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো অতিরিক্ত কোনো সময় নিতে চাচ্ছিলাম না। আমাদের মূল দায়িত্ব তো সম্পন্নই করেছি। এখন বাস্তবায়নের বিষয়টি সামনে আসায় নতুন করে সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে। তবে আমরা খুব বেশি সময় নেব না। যত দ্রুত সম্ভব জুলাই সনদ স্বাক্ষর সম্পন্ন করতে চাই।

কমিশনের মেয়াদ দুই মাস বাড়ছে

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দায়িত্ব গ্রহণ থেকে কমিশনের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ মাস। এ হিসাবে আগামী ১৪ আগস্ট শেষ হতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক না হওয়ায় আটকে গেছে এরই মধ্যে জুলাই সনদ। এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ নতুন করে বাড়ানো হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। কমিশনের মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, কমিশনের মেয়াদ বাড়বে। তবে কতদিন বাড়বে বলতে পারছি না। মেয়াদ বাড়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ারাধীন।

বর্তমানে মালয়েশিয়া সফররত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফেরার পরপরই কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে।