
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ অক্টোবর পদত্যাগের ঘোষণা দেন রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান। পরে এ পদে আসীন হন তার ছেলে আহমেদ ফরহাদ খান তানিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদেরকে আশ্বস্ত করে তার আবির্ভাব ঘটলেও আদতে তিনি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ- চেয়ারম্যান হয়ে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ আত্মসাৎসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রায় চরমে, এমনকি মামলা মোকাদ্দমায়ও গড়িয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনেকটা বিব্রত।
একদিকে, ফরহাদ খানের চেয়ারম্যান পদ ও বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের বৈধতা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন স্বয়ং তার বাবা ড. মকবুল আহমেদ। তিনি বলছেন, ফরহাদ খান, তার ভায়রা ও একদল স্বার্থান্বেষী মহল মিলে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছেন এবং অবৈধভাবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছেন। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন।
অন্যদিকে, বর্তমান চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান তানিমের দাবি- তার বাবা ইতোপূর্বে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও বিতর্কের কারণে ছাত্র আন্দোলনের মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় তিনি বৈধ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল ধরে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি তিনি আত্মসাৎ করেননি বরং কল্যাণে কাজ করছেন। তার পদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের বৈধতা সম্পর্কে আদালতের রায়ও হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এরই মাঝে ফরহাদ খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ বেশকিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। তারাসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাই সদস্যরা অভিযোগ জানিয়ে বলছেন, তিনি চেয়ারম্যান হয়ে ৩০ জনের বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা নোটিশে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ছাঁটাই করেছেন, অপসারণ করেছেন ৪ জন ট্রাস্টি সদস্যকেও; তিনি ঘনিষ্ঠজন ও আত্মীয়স্বজনকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন; রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত রূপায়ণ শেলফোর্ড ভবনের ৯ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তন ও বর্তমান বাজারে প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট নিজের নামে লিখে নিয়েছেন।
অভিযোগকারীদের দাবি, তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে সম্প্রতি বহিরাগত দিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে; কারো কারো বিরুদ্ধে করা হয়েছে মামলা, আবার কেউ কেউ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও অবাঞ্চিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারীদেরকে সাবেক চেয়ারম্যান ড. মকবুল আহমেদ খানের অনুসারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। তারা বলছে, আহমেদ ফরহাদ খান বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই চেয়ারম্যান হয়েছেন। শ্যামলীর ফ্ল্যাট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে রেজিস্ট্রিকৃত ছিল না, তার নামেই ছিল। এছাড়া আনীত অর্থ আত্মসাৎ ও ক্যাম্পাস বিক্রির অভিযোগসহ অন্যান্য সব অভিযোগ মিথ্যা।
এ বিষয়কে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কমিটিতে রয়েছেন- ঢাবি অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম তালুকদার, ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সুলতান মাহমুদ এবং একই বিভাগের সহকারী পরিচালক পারভেজ গাজী।
‘ইইউবির ট্রাস্টি বোর্ড বৈধ নয়। এখানে বৈধ ভিসিও নেই। আর আমার ছেলের চেয়ারম্যান হওয়ারও কোনো বৈধতা নেই। ভুয়া ডকুমেন্ট বানিয়ে এসব করেছে। এমনকি তার এক ভায়রা জাস্টিস হওয়াতে এবং টাকা পয়সা দিয়ে রায় তাদের পক্ষে নিয়েছে। এসব অনিয়মের প্রভাব শিক্ষক এবং ছাত্রদের উপর প্রভাব পড়ছে। নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের মুখে।’ - প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান, সাবেক চেয়ারম্যান, ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ড।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে আসা কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একটি এগ্রিমেন্ট বা চুক্তিপত্রে দেখা গেছে- রূপায়ণ হাউজিং স্টার্ট কোম্পানির কাছ থেকে রূপায়ণ শেলফোর্ড ভবন থেকে ইইউবির নামে ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর একটি ফ্ল্যাট কেনেন তৎকালীন ভিসি ড. মকবুল আহমেদ খান। যেটিতে বিক্রেতা পক্ষে স্বাক্ষর করেন কোম্পানিটির উপদেষ্টা এ কে ফিরোজ আহমেদ এবং সাক্ষী হিসেবে ছিলেন স্বয়ং অভিযুক্ত আহমেদ ফরহাদ খান। কিন্তু আরেকটি এগ্রিমেন্টে দেখানো হয়, ২০২২ সালের ৩ জুলাই আহমেদ ফরহাদ খান রূপায়ণ হাউজিং স্টার্ট কোম্পানির কাছ থেকে একই সম্পদ কিনেছেন। এ চুক্তিপত্রে কোম্পানির পক্ষ থেকে স্বাক্ষর দেখানো হয় মিসেস মাসুদা খান, ড. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ড. শর্মিলা আহমেদের। আর ২০২৫ সালের মে মাসে ১০ টাকার দলিলে এ লেনদেনের সাব রেজিষ্ট্রি করা হয়। এই দুই প্রক্রিয়াকেই অবৈধ কার্যক্রম ও দুর্নীতি হিসেবে বিবেচনা করছেন সংশ্লিরা। তাদের দাবি, জাল দলিলের মাধ্যমে মালিকানা পাওয়া এ সম্পত্তি সম্প্রতি তিনি বিক্রির তৎপরতাও চালাচ্ছেন।
খুলে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক, ছাদ লাগিয়েছেন নিজের ফ্যাক্টরিতে (অভিযোগ)
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস ভবনের ছাদে স্থাপিত প্রায় ২০ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের অন্তত ৫ কোটি টাকা মূল্যের স্টিল স্ট্রাকচার বা স্থাপনা খুলে আশুলিয়ায় অবস্থিত নিজের ফরচুন জিপার লি. এবং ট্রেন্ট শো ফ্যাক্টরিতে স্থাপন করেছেন। এ স্ট্রাকচারের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি লেখা সংবলিত স্টেইনলেস স্টিলের একটি নামফলকও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আহমেদ ফরহাদ খানের চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ও পরে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ভবনের ছবি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। আগে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ভবনটির ছাদজুড়ে একতলা বাড়িয়ে স্টিল ও টিনের সমন্বয়ে একটি স্থাপনা রয়েছে। পাশাপাশি, ভবনটির সম্মুখভাগে স্টিলের একটি নামফলক রয়েছে। কিন্তু ফরহাদ খান চেয়ারম্যান হওয়ার পর তোলা ভবনটির একটি ছবিতে এ স্থাপনা ও নামফলকের অনুপস্থিতি দেখা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি এখন নাম ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে, যে নামফলকটির নান্দিকতা আগে গাবতলী-টেকনিক্যালসহ দেড়-দুই কিলোমিটার দূর থেকেও মানুষের চোখে পড়ত।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালে ফরহাদ খান নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে চেয়ারম্যানের পদে বসেন এবং সেটি অফিস অব দ্য রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) নিবন্ধন করান। নিয়ম অনুযায়ী, আগের বোর্ড ভাঙতে হলে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সম্মতিতে আরজেএসসিতে উপস্থিত থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়—যা এ ক্ষেত্রে হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফরহাদ খানের নেতৃত্বাধীন এ বোর্ডকে এখনো ইউজিসি স্বীকৃতি দেয়নি বলেও সূত্র জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ২৬ অক্টোবর সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে পদত্যাগ করেন ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ঘনিষ্ঠজন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, যদিও পরে তা প্রত্যাহার করেছেন বলে সম্প্রতি দাবি করছেন। এর আগে, এডমিন অফিসার ছাবিকুন নাহার আসমার সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও ভাইরাল হয় এবং শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবি তুলে আন্দোলন করেন। পরবর্তীতে আরও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করে লালমাটিয়ায় ৬ তলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ, জনতা হাউজিংয়ে ও শ্যামলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল্ডিং ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, বলিয়ারপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল এবং বিদেশিদের দিয়ে জুতা ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনার অভিযোগ অন্যতম।
জানা যায়, বাবার পদত্যাগের পর ছেলে আহমেদ ফরহাদ খান তানিম শিক্ষার্থীদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে চেয়ারম্যানশিপ গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠতে থাকে এবং তা রূপ নেয় তার পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে। চলতি বছরের জুলাই থেকে এ আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। এরই মাঝে গত ২২ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বহিরাগতরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, এ হামলাকারীরা চেয়ারম্যান তানিমের মদদপুষ্ট। তারা হামলার শিকার হয়েও মামলার আসামি হয়েছেন।
‘আমার বাবাকে ভুল বুঝিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছে কিছু ছাত্রের একটা গ্রুপ। তাদের লক্ষ্য হল- টাকা হাতিয়ে নেওয়া। আওয়ামী লীগের সময় তারা প্রচুর টাকা সরিয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর আর আমার বাবাসহ যারা পদত্যাগ করেছে তারা এখন আবার আসতে চাচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি তদন্ত করছে, আমরা তাদেরকে সব তথ্য দিয়েছি।’ - আহমেদ ফরহাদ খান তানিম, চেয়ারম্যান, ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ড।
এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গত ২৪ জুলাই একদল ইইউবি শিক্ষার্থী ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান অবৈধ ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক আন্দোলন করে যাচ্ছিলাম। গত ২২ জুলাই আমাদের পূর্বনির্ধারিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে চেয়ারম্যান ফরহাদ খান শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে সন্ত্রাসী বাহিনী ক্যাম্পাসের ভিতরে নিয়ে আসে এবং তাদের নেতৃত্ব দেন আহমেদ ফরহাদ খানের ছোট বোনের জামাই নাকিব। তাকেও অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি দিয়েছে। সন্ত্রাসী পটেটো রুবেল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে করে পাঁচ জন শিক্ষার্থী গুরুতর ভাবে আহত হন।
এর আগে, গত ২ জুলাই ফরহাদ খানের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস বিক্রির অভিযোগ তুলে এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে একদল শিক্ষার্থী। এসময় তারা বলেন, আমাদের ইউনিভার্সিটির নামে শ্যামলীতে নিজস্ব ক্যাম্পাস আছে, যেটি রূপায়ণ হাউজিং স্টার্ট কোম্পানি থেকে ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ক্রয় করেন তৎকালীন ভিসি ড. মকবুল আহমেদ খান। পরে ২০২২ সালের ৩ জুলাই জাল দলিলের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের মালিকানা নিজের নামে করে নেন মকবুল আহমেদ খানের ছেলে আহমেদ ফরহাদ খান তানিম।
এদিকে, গত ২৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে এক শিক্ষার্থীকে ইইউবি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং চার শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়। বহিষ্কৃত ছাত্র হলেন- আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মশিউর রহমান ওরফে রাঙ্গা। অন্যদিকে শোকজ প্রাপ্তরা হলেন- আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন জয়, মেহেদী হাসান, মেহরাব হোসেন এবং বিটিএইসএম’র ইমরান। জানা গেছে, এই শিক্ষার্থীরা ফরহাদ খানের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
এরপর গত ৩১ জুলাই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বহিষ্কারের শিকার শিক্ষার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গা ইউজিসি বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন। এতে তিনি লেখেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। এর প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের হুমকিতে রেখেছে সন্ত্রাসী দ্বারা হামলা চালিয়েছে। শ্যামলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ক্রয় করা সম্পদ নিজের নামে করে নিয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালীন বর্তমান অবৈধ চেয়ারম্যান কিছু শিক্ষার্থীকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের আন্দোলনের সামনে দ্বার করায় এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। শিক্ষার্থীরা চলে গেলে তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী পটেটো রুবেলকে ভাড়া করে। শুধু তাই নয়, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে শোকজ করে এবং ছাত্রত্ব বাতিল করে। অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে অবৈধভাবে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।
এরপর গত ১ আগস্ট অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের অভিযোগ তুলে ট্রাস্টি চেয়ারম্যানের অব্যাহতি চেয়ে ইউজিসির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন প্রতিষ্ঠানটির একদল শিক্ষার্থী। এদিন শিক্ষার্থীরা বলেন, চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান শ্যামলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কেনা জমি বিভিন্ন ছল-চাতুরির মাধ্যমে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। উন্নয়নের নামে ভুয়া বিল দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনের মূল্যবান ইট, পাথর, লোহার তৈরি সামগ্রী রাতারাতি সরিয়ে তার নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে নিয়ে গেছেন। চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন দমন ও হামলা করতে শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যা মামলার আসামি ‘পটেটো রুবেল’-কে ব্যবহার করছেন।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অভিযোগ করে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আহমেদ ফরহাদ খান অবৈধভাবে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতা দখল করে ব্যাপক আকারে দুর্নীতি করে আসছেন। ইউনিভার্সিটির প্রথম ক্যাম্পাস শ্যামলী ক্যাম্পাস নিজের নামে করে নিয়েছেন তিনি। তিনি অবৈধভাবে চেয়ারে বসেই টিউশন ফি দ্বিগুণ করে ফেলেছেন। ইউনিভার্সিটির ইতিহাসে কোন লোন ছিল না, আর উনি এসেই প্রথম দেড় কোটি টাকা ইউনিভার্সিটির নামে লোন নিয়েছেন। এসব দুর্নীতির কথা বলতে গেলেই বহিরাগত সন্ত্রাসীর মাধ্যমে ভয়-ভীতি দেখান, হামলা চালান, স্টুডেন্ট আইডি ব্লক করে দিয়ে ক্লাস করতে দেন না এবং ছাত্রত্ব বাতিল করে দেয়। চেয়ারম্যান হওয়ার পর ক্যাম্পাসের টপ ফ্লোর ভেঙে নিজের কোম্পানিতে নিয়ে গেছেন কোন অনুমোদন ছাড়াই।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দুর্নীতিবাজ অবৈধ ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান যখন আসে তখন আমাদেরকে দুই মাসের এবং স্বচ্ছতা ফেরানোর আশ্বাস দেন। কিন্তু একের পর এক দুর্নীতি করেই যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো খাত বাকি নেই যেখানে তার নেতৃত্বে দুর্নীতি হয়নি। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই ছাত্রত্ব থাকে না, সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালানো হয়। অনতিবিলম্বে এই দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই।
শরীফ আহমেদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অ্যালামনাই সদস্য দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০২৩ সালের পর আর ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠিত হয়নি। ২০২৪ সালে ফরহাদ খান যেই নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে চেয়ারম্যান হয়েছেন, সেটি জোরপূর্বক অবৈধভাবে অফিস অব দ্যা রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস (আরজেএসসি) নিবন্ধন করেছেন, যেটি সম্পূর্ণ অনৈতিক। কারণ পূর্বের বোর্ড ভাঙতে হলে অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিংয়ের মাধ্যমে যাদের বাদ দিবে তাদের সম্মতিতে আরজেএসসিতে উপস্থিত থেকে বাদ দিতে হয়। যেটা নতুন বোর্ড গঠনের সময় আইন অনুসরণ করে হয়নি এবং ফরহাদ খানের এই ভুয়া ট্রাস্টি বোর্ড ইউজিসি এখনো অনুমোদন দেয়নি।
তবে ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা ও কিছু শিক্ষার্থীদের অ্যাক্টিভিজম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে এলএলবি নবম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জুবাইদা ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা টাকা দিয়ে পড়তে আসি। কয়েকদিন আগেও কিছু শিক্ষার্থী প্রায়ই ক্যাম্পাসে কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা করেছে। আমি স্টুডেন্ট, আমি করব লেখাপড়া, বিওটি নিয়ে আমার কেন মাথা ঘামাতে হবে? আগের বছর যারা মকবুল আহমেদকে হঠাতে আন্দোলন করেছে, এখন আবার তারাই তাকে ফেরাতে ঝামেলা করছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে বিচরণ করতে চাই, বিশৃঙ্খলা চাই না।
যা বলছেন সাবেক চেয়ারম্যান ড. মকবুল আহমেদ খান
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইইউবির ট্রাস্টি বোর্ড বৈধ নয়। এখানে বৈধ ভিসিও নেই। আর আমার ছেলের চেয়ারম্যান হওয়ারও কোনো বৈধতা নেই। ভুয়া ডকুমেন্ট বানিয়ে এসব করেছে। এমনকি তার এক ভায়রা জাস্টিস হওয়াতে এবং টাকা পয়সা দিয়ে রায় তাদের পক্ষে নিয়েছে। এসব অনিয়মের প্রভাব শিক্ষক এবং ছাত্রদের উপর প্রভাব পড়ছে। নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের মুখে। ছাত্র আন্দোলনের মুখে আমি পদত্যাগ করেছিলাম কিন্তু পরে আমি তা প্রত্যাহার করে তাদেরকে সাথে সাথে জানিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, তারপরও আমার ছেলে, তার ভায়রা ও একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়টাকে দখল করেছে। প্রতিষ্ঠাতাদের বাদ দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডে এমন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদেরকে আমরা চিনিও না। বোর্ড গঠনের নীতিমালার ধারে পাশেও যায়নি তারা। যারা উদ্যোক্তা এবং যাদের অবদানে এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরকে না জানিয়েই সে তার ভায়রাসহ নতুন ২ জনকে নিয়ে কমিটি করে, যাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় করায় কোন অবদান নেই। এই অবস্থায় একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না।
আরও অভিযোগ জানিয়ে ড. মকবুল আহমেদ বলেন, শ্যামলীর শেফ ফোর্ড ভবনের সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেই কেনা হয়েছিল। কিন্ত আমার ছেলে তার স্ত্রীর এক আত্মীয়ের সহায়তায় জালিয়াতি করে নিজের নামে লিখে নিয়েছে। মূল ক্যাম্পাসের রুফটফের স্ট্রাকচারটির টিন ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, যা অপ্রত্যাশিত।
তাছাড়া, এ ব্যাপারে আরজেএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অভিযোগও দিয়েছেন ড. মকবুল আহমেদ। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর একটি ভুয়া বোর্ড সভার মিথ্যা তথ্য প্রদান করে চারজন বৈধ ট্রাস্টি সদস্যকে ‘পদত্যাগকারী’ হিসেবে উল্লেখ করে এবং দুইজন নতুন ট্রাস্টিকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাল রেজুলেশন তৈরি করা হয়। ওই রেজুলেশনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার দফতরে ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়। ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে প্রযোজ্য ফি জমা দিয়ে পরদিন ৫ ডিসেম্বর একটি লিখিত আবেদনপত্রের মাধ্যমে আপনাদের দফতরে বিষয়টি জানাই এবং তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের অনুরোধ করি।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইউনিভার্সিটির ট্রাস্ট ডিড অনুসারে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদস্য সচিবের উপস্থিতি ও সম্মতি ছাড়া বোর্ড সভা বৈধ নয় এবং কোনও সাধারণ সদস্য এককভাবে বা অন্য সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে মিলে এমন সভা আহ্বান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না। কিন্তু সেই জালিয়াতিপূর্ণ রেজুলেশন এবং ভুয়া বোর্ড সভার ভিত্তিতে অবৈধ ট্রাস্টি বোর্ডকে অনুমোদন প্রদান করেছে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতর। এই অবৈধ অনুমোদনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
তবে গত ৩ আগস্ট এক বিবৃতিতে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্বদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস। এ বিবৃতিতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মকবুল আহমেদ খানের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে অভিযুক্ত বর্তমান চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান তানিমের প্রশংসা করা হয়।
এতে বলা হয়, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীগের সহচর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. মকবুল আহমেদ খান বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন। এ কারণে তিনি গত ২৬ অক্টোবর স্বীয় পদ হতে পদত্যাগ করেন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল টাকা আত্মসাৎ করেন। আগে যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য তিনি পদত্যাগ করেছিলেন তাদের কয়েকজনকে তিনি অর্থ প্রলোভন দেখিয়ে এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে পুনরায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ দখল করার নানারকম ফন্দি ফিকির করছেন।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান সম্পূর্ণ বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ইইউবির ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। শ্যামলীতে যে ফ্ল্যাট রয়েছে সেটি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে রেজিস্ট্রিকৃত ছিল না। এটি আহমেদ ফরহাদ খানের নিজের নামে রেজিস্ট্রিকৃত ব্যক্তি মালিকানা সম্পদ এবং এখনো তার নিজের নামেই রয়েছে। আনীত অর্থ আত্মসাৎ, শ্যামলী ক্যাম্পাস এবং ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ক্যাম্পাস বিক্রির অভিযোগ সহ অন্যান্য সকল অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মিথ্যাচার।
এদিন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা এক সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ ফরহাদ খান তানিমের উপর আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিওটি ও প্রশাসন নিয়ে সম্প্রতি বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অপপ্রচার ছড়ানো হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। ২০২৪ সালে ২৬ অক্টোবর নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টি গঠিত হয়েছে এবং আরজেএসসিতে জমা দেওয়া হয়। এবং এনএসআই ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর গত ২৯ জুলাই ২০২৫ তা আরজেএসসিতে পূর্ণাঙ্গভাবে রেকর্ড হয়েছে।
বর্তমান চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খানের বক্তব্য
নিজের অবস্থান সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান বলেন, শ্যামলী ক্যাম্পাস বিক্রির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা আমরা বিক্রিও করিনি এবং কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদও ছিল না। এত ছোট স্পেসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি ইউজিসির ক্রাইটেরিয়া সম্পূর্ণ করে না, যার কারণে এখানে যাওয়া হয়নি। ২০২২ সালে আমার বাবাই আমার নামে এই সম্পত্তি দেন। আমার কাছে প্রমাণ আছে।
তিনি বলেন, রুফটফের স্ট্রাকচার আমরা নেব কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার রাস্তায় গর্ত থাকায় পানি জমে থাকে। এজন্য ছাদ থেকে অসংখ্য ইট নিচে ব্যবহার করা হয়েছে। আর টিনসহ সবকিছু আছেই। এটা শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই ভাঙা হয়েছে। এর আগে নিয়ম মেনে এটা নির্মিত হয়নি, ভেঙে যাচ্ছিল এবং পানি জমে ছাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ছাত্রদের খেলার মাঠ এবং একটি অডিটরিয়াম করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা যা কিছুই করতে যাই, তাতেই বলা হচ্ছে আমরা আত্মসাৎ করছি। অথচ আন্দোলনকারী মশিউর রহমান রাঙ্গাদের গ্রুপটাই লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে। আর এসব কিছু দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিগনেটরি অথরিটি। আমি তো এখানে কিছুই নই, জাস্ট একজন বিওটি মেম্বার।
তার চেয়ারম্যান পদটির বৈধতা আছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাস্টি মেম্বার যুক্ত করা জন্য আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন করতে হয়। এখানে লবিং করে কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ, এখান থেকে এনএসআই ভেরিফিকেশন হয়। এটা শতভাগ বৈধতার সঙ্গে করা হয়েছে। আমার বাবা মকবুল আহমেদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, এরপরে ট্রাস্টিতে পরিবর্তন এসেছে আইন মেনেই। আমি যদি টাকা খরচ করেই এ পদে বসে থাকি তাহলে তারা (মকবুল আহমেদ) তো আওয়ামী লীগের সময়ে অনেক টাকা সরিয়েছে, তারা টাকা খরচ করে পদ নিক। আর এটা নিয়ে আইনী প্রক্রিয়া চলমান, আমাদের পক্ষে আদালতের রায় আছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে আহমেদ ফরহাদ খান বলেন, আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করব কেন? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? এগুলো বলে লাভ নেই। এসবের সিসি টিভি আমাদের কাছে আছে।
আহমেদ ফরহাদ খান তানিম বলেন, আমার বাবাকে ভুল বুঝিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছে কিছু ছাত্রের একটা গ্রুপ। তাদের লক্ষ্য হল- টাকা হাতিয়ে নেওয়া। আওয়ামী লীগের সময় তারা প্রচুর টাকা সরিয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর আর আমার বাবাসহ যারা পদত্যাগ করেছে তারা এখন আবার আসতে চাচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি তদন্ত করছে, আমরা তাদেরকে সব তথ্য দিয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মরতুজা বলেন, আমি নতুন এসেছি। এসব বিষয়ে আমি বেশিকিছু জানি না। আমি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য। প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।