Image description
 

বর্ষা অনেকের কাছে শান্তির বার্তা নিয়ে আসে—মন ভেজানো বৃষ্টি, সবুজ প্রকৃতি, ঠান্ডা হাওয়া আর রোমান্টিক আবহাওয়া। কিন্তু হৃদপিণ্ডের জন্য বর্ষা আসলে বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কারণ এই মৌসুমে আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন ও আর্দ্র পরিবেশ দেহে মানসিক ও শারীরিক অস্বস্তি তৈরি করে, যা কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদ্‌যন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে।

ডা. নাগেন্দ্র সিং চৌহান, সিনিয়র ডিরেক্টর, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, মেডান্তা, গুরগাঁও বলেন, বর্ষাকালে শরীর ও মনের ওপর একযোগে প্রভাব পড়ে, যার ফলে হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ বেড়ে যায়।

তিনি জানান, “বর্ষার সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এই মৌসুমের অনির্ধারিত পরিবেশগত পরিবর্তনগুলোকে গুরুত্বসহকারে বুঝে, সঠিক প্রতিকার না নিলে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।”

 

বর্ষায় হৃদরোগের ঝুঁকি কেন বাড়ে?
১. আর্দ্র পরিবেশ:
বর্ষায় আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দ্রুত ছড়ায়। ফলে সর্দি-কাশি, জ্বর, গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিসের মতো সংক্রমণ দেখা যায়।

 

হৃদরোগীদের জন্য বিপজ্জনক: এই সংক্রমণগুলো দেহে প্রদাহ তৈরি করে, যা হৃদপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

ফল: হার্ট ফেইলিওর, অ্যারিদমিয়া (হার্টবিটের অস্বাভাবিকতা), এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

২. তাপমাত্রা ওঠানামা ও উচ্চ আর্দ্রতা:
বর্ষাকালে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে, আবার কখনো বেড়ে যায়।

রক্তচাপের তারতম্য: তাপমাত্রা হঠাৎ কমলে বা বাড়লে রক্তনালীগুলো সংকুচিত বা প্রসারিত হয়, যার ফলে রক্তচাপ অনিয়মিত হয়।

হাইপারটেনশন ও শ্বাসজনিত রোগে ভোগা ব্যক্তিরা ঝুঁকিতে: তাদের হৃদপিণ্ড বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

৩. সূর্যালোকের অভাব:
বর্ষায় দীর্ঘ সময় মেঘলা আকাশ ও সূর্যের আলো না থাকায় মানসিক স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হয়।

সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার (SAD): বিষণ্নতা, উদ্বেগ ইত্যাদি বেড়ে যায়, যা হৃদপিণ্ডে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

জীবনধারাগত পরিবর্তনের প্রভাব
বর্ষাকালে মানুষ অনেক সময় বাইরে বের হতে চায় না। ফলে শরীরচর্চা কমে যায়, ওজন বাড়ে এবং হৃদপিণ্ডের ফিটনেস হ্রাস পায়। এছাড়া, ভাজাপোড়া ও রাস্তার খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, যা উচ্চ ফ্যাট ও সোডিয়ামযুক্ত হওয়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডা. চৌহান বলেন, “রাস্তার খাবারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ কেবল হজমে সমস্যা করে না, হৃদ্‌যন্ত্রকেও প্রভাবিত করে।”

হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ রাখতে বর্ষায় এই ৭টি সতর্কতা মেনে চলুন:

১. পরিচ্ছন্নতা ও টিকা:
নিয়মিত হাত ধোয়া অভ্যাস করুন। হার্টের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোকক্কাল টিকা নেওয়া জরুরি (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
ভাজা-পোড়া বা উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, যার মধ্যে ফল, শাকসবজি ও পূর্ণ শস্য বেশি থাকবে।

৩. ইনডোর শরীরচর্চা:
বৃষ্টির কারণে বাইরে না বের হতে পারলেও ঘরে বসেই হালকা ব্যায়াম, স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম করুন।

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারা নিয়মিত মাপুন এবং ব্যতিক্রম হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৫. পানি পান:
প্রচুর পরিমাণে ফুটানো বা বিশুদ্ধ পানি পান করুন। এটি শরীরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৬. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:
মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং বা প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে উদ্বেগ বা বিষণ্নতা কমানোর চেষ্টা করুন।

৭. নিজে ওষুধ খাবেন না:
নিজে থেকে কোনো ওষুধ খাবেন না, বিশেষ করে যেগুলো আপনার হৃদরোগের ওষুধের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।