Image description
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফশিল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রোজা শুরুর আগেই নতুন সরকার যাতে শপথ নিতে পারে, সেই সময় হাতে রেখে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এতে নির্বাচনি প্রচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরেকবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, সেই তরুণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। বৈঠকে প্রবাসীদের দ্রুত ও সহজে ভোটাধিকার প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি ভোট দিতে চান, তারা আগেই নিবন্ধন করতে পারবেন। এছাড়া বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের প্রধান আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়। তবে আরপিওর সংশোধনী চূড়ান্ত হয়নি। বৈঠকটি মুলতুবি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আবারও বৈঠক বসবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে এসে পৌঁছেছে। নির্বাচন বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপনাদের যেটা বলেছেন, আমাদের পক্ষ থেকে ঘোষণাটি আসবে আনুমানিক দুই মাস আগে, যেদিন আমরা তফশিল ঘোষণা করব। সুতরাং আপনারা ধরেই নিতে পারেন, তফশিল ঘোষণার কাজটি ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে হবে। নির্বাচনের আনুমানিক ৬০ দিন আগে তফশিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন তো রোজার আগে হবে। রোজা যদি হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি, এর আগে তো দুই-চার দিন সময় দেবেন নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের জন্য। শপথ গ্রহণ ইত্যাদি-এর আগে নির্বাচন হবে।

৩১ অক্টোবর যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা ভোট দিতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নবীন ভোটারদের জন্য এটি একটি সুখবর। এ বিষয়ে আমরা আজ প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের এবার ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাই জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীদের কাছে প্রতীক সংবলিত ব্যালট যাবে, যাতে সময় কম লাগে। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর সিম্বল ব্যালটে ভোট দেবেন। ইসিতে এসে পোস্ট অফিস ব্যালট নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর তারা অনলাইনে প্রার্থীর তালিকা দেখতে পাবেন। সেই অনুযায়ী তারা পছন্দের প্রার্থী দেখে ব্যালটে থাকা সেই প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দেবেন। মাধ্যমটা হবে পোস্টাল ব্যালট। অতীতে এই বিধান থাকলেও সময়ের অভাবে কার্যকর করা যেত না। এবার তিনভাবে পোস্টাল ব্যালটে ভোট হবে। যারা প্রবাসে থাকেন, কারাগারে থাকেন ও ভোটের দায়িত্বে থাকেন-তাদের জন্য এ ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য আগেই নিবন্ধন করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে আদালতের আদেশে প্রার্থী পরিবর্তন হলে, সেখানে পোস্টাল ব্যালট হবে না। তবে আইনি কার্যক্রম যেন দ্রুত হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যারা আইনি হেফাজতে আছেন, তারা পোস্টাল ব্যালটের জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন কীভাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে। আমাদের টিম ইতোমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তারা আমাদের বলেছেন, ৭১টি জেলখানা রয়েছে। সবখানে তাদের এই ভোট দেওয়ার জন্য সাহায্য করবেন।

রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রবলেমটা হচ্ছে মিসইনফরমেশন, ডিজইনফরমেশন, ম্যাল ইনফরমেশন। এগুলো আমরা আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। মনে রাখবেন, এই আচরণবিধি শুধু প্রার্থী ও দলের জন্য। কিন্তু এআই-এর ব্যবহার তো তাদের বাইরেও লোকজন করবে। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এটা ব্যবহার করবে। শুধু তো রাজনৈতিক দল আর প্রার্থীরা করবে না। দেশ থেকে, দেশের বাইরে থেকে করবে। তো সেগুলো প্রতিহত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে একটা কমিটি ফর্ম করেছি। এটি কীভাবে কী করা যায়, সেটি নিয়ে তারা কাজ করছেন। ব্যান্ডউইথ না কমিয়ে কোনো ধরনের সেবা বিঘ্ন না ঘটিয়ে করার চেষ্টা করব। প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো ইচ্ছা নেই কোনো সেবা বা প্ল্যাটফর্মকে লিমিট করার। ড্রোনের ব্যবহার হবে কি না জানত চাইলে তিনি বলেন, ড্রোন এবং কোয়ার্ডকপ্টার এ ধরনের কোন কিছু কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বা কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রগুলোয় সিসি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়েও আমরা কাজ করছি, এটা নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা তিন-চারটা মিটিং করেছি। একদিনের জন্য আউটসোর্স করে পাওয়া যায়, না ভাড়ায়, আবার কেনাও যৌক্তিক নয়। ৪৫ হাজার কেন্দ্রের আপনি হিসাব করে দেখেন কতগুলো সিসি ক্যামেরা লাগবে। এটা কিনে আপনি রাখবেন কীভাবে এবং এটা ঠিক আছে কি না বুঝবেন কীভাবে?