Image description

 বাংলাদেশ আজ এক নতুন সন্ধিক্ষণে। তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা, প্রতিরোধ আর রাজনৈতিক চেতনায় গড়ে উঠছে এক নবজাগ্রত রাষ্ট্রের ভিত্তি। এই পরিবর্তনের বাস্তবতা অনুধাবন না করলে আঞ্চলিক সম্পর্কের ভারসাম্যে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের বর্তমান দূরত্ব উভয় দেশের জন্যই ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। রাজধানীতে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ’-এর দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন। লাখো মানুষের স্রোত তখন গণভবনের দিকে অগ্রসর। সেই উত্তাল মুহূর্তে, ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামরিক হেলিকপ্টারে করে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এর পর থেকেই দুই দেশের কূটনৈতিক সমীকরণে আসে বড় ধরনের ভাঙন।

ভারতীয় গণমাধ্যমে এরপর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচার। অথচ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কূটনৈতিক সংলাপ, বৈঠক এবং বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা চেয়েছি তাকে (শেখ হাসিনাকে) ফিরিয়ে দেওয়া হোক, যাতে দেশের বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাকে আনা যায়। কিন্তু ভারত থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া আসেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি।”

বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটছে, ভারত সেই পরিবর্তনের বাস্তবতা এখনো পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারেনি। বরং তা উপেক্ষা করার মাধ্যমে দিল্লি নিজেই নিজেকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, “এটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। কোনো দেশের সরকার বদল হতেই পারে, সেটি মেনে নেওয়া ও নবীন নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়াটাই এক আধুনিক রাষ্ট্রের পরিচয়। সেই জায়গায় ভারত এখনও দ্বিধান্বিত।”

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ূন কবিরের মতে, “এই পরিবর্তনের সময়টিকে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। সুশাসন ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা ও সহযোগিতাও প্রয়োজন।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম শুধু পরিবর্তনের দাবি নিয়ে মাঠে নামেনি—তারা এক নতুন রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই পথচলায় ভারতের উচিত হবে আবেগ নয়, বাস্তবতাকে ভিত্তি করে সম্পর্ক পুনর্গঠন করা।

তাদের ভাষায়—এটাই সময়, ভারত বুঝে নিক: প্রতিবেশীর পরিবর্তন মানে শত্রুতা নয়, বরং নতুন সম্ভাবনার দরজা।

শীর্ষনিউজ