
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসান নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা)। এই আসনটি নিয়ে বরাবরই নারায়ণগঞ্জে আলাপ-আলোচনা তুঙ্গে থাকে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসনটিতে বিএনপি বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তবে এ আসনে প্রার্থী হতে প্রস্তুত দলটির একাধিক প্রার্থী। তাঁদের সবাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বেশ সরব। বিএনপির বাইরে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোর একক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। নানান কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করাসহ নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাঁরা। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠে বিভিন্নভাবে নিজেদের জানান দিচ্ছেন। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বেশ আলোচনায় জেলা বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনেরও মনোনয়নপ্রত্যাশী। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে পরাজিত করে গিয়াস উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে রাতারাতি আলোচনায় আসেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও জনপ্রতিনিধি ছিলাম। আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উঠে এসে বিগত সময়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি দুটি আসন নিয়ে কাজ করছি। চেষ্টা করছি জনগণকে সম্পৃক্ত করে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য। সামগ্রিকভাবে সবার বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে আমি পুরো জেলার মধ্যেই কাজ করছি। বিগত সময়ে আমি সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। আমার মাধ্যমে এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সে হিসেবে আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
একই সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমও নির্বাচনি মাঠে আলোচনায়। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। দীর্ঘ ১৭ বছর আমি দলের জন্য পরিশ্রম করছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাকে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করা হয়েছে, যা সবাই স্বীকার করে। ২০১৮ সালেও দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে কিন্তু জোটের স্বার্থে আমাকে মাঠ ত্যাগ করতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের জন্য আমার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। এলাকা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক সবার সঙ্গে আমার আলোচনা হচ্ছে। আমি শতভাগ আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
এ আসনে আলোচনায় থাকা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘আমি বিগত দিনগুলোয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে দলকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলাম। আশা করি দল আমার কাজের মূল্যায়ন করবে এবং মনোনয়ন দেবে।’
এ ছাড়া আলোচনায় আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, ঢাকা জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রনি। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ দুটি আসন থেকেই নেতা-কর্মীরা চাপ দিচ্ছে। দল আমাকে যেখানে মনোনয়ন দেবে সেখানেই আমি কাজ করব। আমরা তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলের হয়ে কাজ করছি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার দলের নেতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ভূমিকা রাখতে চাই।’
মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব এবং মনোয়ন পাব। আমি ফতুল্লা এলাকার বাসিন্দা। সে হিসেবে এখানে আমার গ্রহণযোগ্যতা বেশি।’ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীও আলোচনায় রয়েছেন। তিনিও আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। কাসেমী বলেন, ‘আগামী নির্বাচনেও আমি একই আসনে প্রার্থী হব। আশা করি, জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির সমর্থন আমার সঙ্গেই থাকবে।’
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মো. আবদুল জব্বার বলেন, ‘সংসদীয় এলাকায় আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি, জনগণ আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। আমরা মানুষের সেবক হব। ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো সামাজিক কার্যক্রম করেছি।’ খেলাফত মজলিসের মনোনীত প্রার্থী ইলিয়াস আহমদ বলেন, বিগত দিনগুলোতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের জনগণ ছিল উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। সাবেক এমপি ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কাজে সবাই জিম্মি ছিল। প্রচারণায় গেলে জনগণ নিজ থেকেই বলছে- এই আসনে খেলাফত মজলিসসহ ইসলামি দলগুলো একজন প্রার্থী দিতে পারলে তারা ব্যাপক সমর্থন দিয়ে বিজয়ী করবেন। আমরা আশাবাদী।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আল আমিন বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমি বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি। জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। আমাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে।’ আর আল্লামা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও তাদের মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি হলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ মহানগর সহসভাপতি হাফেজ মাওলানা আবু সাঈদ। তবে নির্বাচনি এলাকায় তাঁর তেমন আলাপ-আলোচনা শোনা যাচ্ছে না।