Image description

ফাহাম আব্দুস সালাম

লেখক, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট ফাহাম আব্দুস সালাম বলেছেন, বাংলাদেশের এই ওভারওয়েলমিং মেজরিটির জীবন যদি আগের চাইতে ভালো হয়, তার জীবনযাত্রার উন্নত মানের বাই-প্রোডাক্ট হবে হাসিনা-শাহীর সমাপ্তি। মানুষের জীবনের অধিকাংশ মহৎ প্রাপ্তি আসলে বাই-প্রোডাক্ট, অন্য কোনো অর্জন বা ক্ষমতার। বুধবার (৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

ফেসবুকে ফাহাম আব্দুস সালাম বলেন, এক বছর পার হল। ঈদ মুবারাকের। আশা করি বুঝতে পারছেন আমাদের পারফর্মেন্স এই এক বছরে আশানুরূপ হয় নাই। এর অনেক ভ্যালিড কারণ আছে। এই সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। কাজটা প্রথম থেকেই করি না। কিন্তু কিছু সত্য আমাদের মেনে নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেখেন শতকরার বিচারে সাধারণ জনগোষ্ঠীর খুব কম মানুষ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি ছিল। কোনোদিনও তারা সেই পর্যায়ে ইমোশনালি এটাচড হবে না যেভাবে আপনার পরান পোড়ে। এরাই বাংলাদেশের ওভারওয়েলমিং মেজরিটি। এটা দোষের কিছু না। তাদের জীবন দুর্বিষহ। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রোটিন খেতে পারে না। তার কাছ থেকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের এপ্রিশিয়েশান আশা করে লাভ নেই। একজন মানুষ ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার প্রাসাদে গিয়ে তার খাবারের, পুকুরের মাছের সমারোহ দেখে মাটিতে বসে কেঁদে ফেলছিলো। এই দৃশ্য দেখে আমি চোখের পানি আটকাতে পারিনি। এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এই মানুষটার পরিবার যেন গরুর মাংস এফোর্ড করতে পারে।

পরিপূর্ণরূপে শেখ হাসিনার পতনের শর্ত হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, কোনো সাংবিধানিক ইনডেমনিটি বা সংস্কার আওয়ামী রেজিমকে ডিসাইসিভলি- ইতিহাস বা বিগত চ্যাপ্টার বানাবে না। বাংলাদেশের এই ওভারওয়েলমিং মেজরিটির জীবন যদি আগের চাইতে ভালো হয়, তার জীবনযাত্রার উন্নত মানের বাই-প্রোডাক্ট হবে হাসিনা-শাহীর সমাপ্তি। মানুষের জীবনের অধিকাংশ মহৎ প্রাপ্তি আসলে বাই-প্রোডাক্ট, অন্য কোনো অর্জন বা ক্ষমতার।

জীবনমান উন্নত করতে পরামর্শ দিয়ে ফাহাম বলেন, আমাদের ফোকাস হওয়া উচিত কীভাবে এদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। আমাদের তরুণরা অশিক্ষিত ও আনস্কিল্ড। বাজারে চাকরি নাই। চিকিৎসা সেবার কোনো মা-বাপ নাই। এই অবস্থার পরিবর্তন না করতে পারলে মানুষ কোনোদিনও রাজনীতিবিদদের আস্থায় নেবে না। আপনি চান বা চান- সরকার একা এই অবস্থার পরিবর্তনে করতে পারবে না। মূল কাজটা করবে প্রাইভেট সেক্টর। আমাদের ট্যাক্স রিফর্ম করতে হবে। সহজেই ব্যবসা করতে দিতে হবে, ব্যাংক লোন সহজ করতে হবে, রেড টেইপ কমাতে হবে। অথচ আমাদের ফোকাস হল কামড়াকামড়ি। চারিদিকে মানুষ শুধু ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়। এ কেন ঐ পদে গেলো? যার তালতো ভাই আওয়ামী লীগের এমপি ছিল- সে কেন এতো উচ্চপদে যাবে? এই আওয়ামী নেতার প্রতিষ্ঠান খেয়ে দিতে হবে, ঐ আওয়ামী পত্রিকা দখল করতে হবে। এইসব কাজ করে আমরা আওয়ামী তো বটেই, সাধারণ মানুষদের চোখেও খেলো হয়ে যাচ্ছি। জোকার হয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, যেই লোকটা আওয়ামী লীগের সাপোর্ট করতো- তাকেও তো সঠিক কাজটা করার সুযোগ দিতে হবে। আপনি তো সারাদিন ডেস্পিকেবল ছিল বলে কটাক্ষ করলে তাকে আস্থায় নিতে পারবেন না। আমি বলছি না যে ভালোবাসা দিয়ে সারিয়ে তুলতে- কিন্তু তাকে রুল অফ ল’র সুবিধা তো দিতে হবে। অথচ আমরা জুলাই থেকে বেরই হতে পারছি না। এই অবস্থাটা আত্মঘাতী। তোফায়েল আহমেদের সাথে ২০ বছর আগে যদি গপসপ করতেন- দেখতেন যে এই লোকটা ৫ মিনিট ৭১কে না টেনে কথা বলতে পারে না। সাড়ে সাত মিনিটেই উল্লেখ করবে যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ এ কোন ব্র্যান্ডের ঢিলাকুলুপ ব্যবহার করতেন। পিকিউলিয়ার একটা ম্যান-চাইল্ড। সারা জীবন ৭১ থেকে গ্র্যাজুয়েট করতে পারেন নাই। আমার ভয় হয়- আপনারাও অনেকে এই লাইনে আছেন।

শেখ হাসিনার অনুকরণ না করা আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের অবসেশান হল হাসিনা যা করেছে তা করা যাবে না। ঐ সংবিধান বদলাতে হবে। আপনাদের সব চাওয়া হল আসলে না-বাদী চাওয়া। আপনাদের সকল না-বাদী চাওয়া যদি পূর্ণও হয় আপনারা ০ তে আসবেন, ০ তেই থাকবেন। সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যার সমাধান এতে হয় বলে আমার মনে হয় না। আপনাদের সব নেতা সার্বক্ষণিকভাবে রেগে থাকে। দেখেন সোশাল মিডিয়ার সত্যিকারের বিপদ কী আপনার অনুধাবন করতে পারেন না। আমি ২৫ বছর বয়সে কী ছিলাম, কী করতাম- এখন ইতিহাস। শুধু দুয়েকজন জানে। বাকিরা ভুলে গেছে। এটাই মনুষ্যত্বের স্বাভাবিক রীতি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া আপনার সারা জীবনকে ‘বর্তমান’ বানিয়ে দিয়েছে। আপনার বয়স যখন ৫০ হবে- তখন আপনারা একই সাথে ৫০ ও ২৫ বছর বয়স্ক থাকবেন। এটা ভীতিকর। কারণ আপনাকে এখনই এক সাথে ২৫ ও ৫০ বছর বয়স্ক হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে এবং কোনো মার্জিন অফ এরর নাই।

প্রশ্ন তুলে ফাহাম বলেন, আপনারা এতো রেগে থাকেন কেন- আমি জানি না। আল্লাহ তো আমাদের চাওয়া পূর্ণ করেছেন। কিছুটা তো শুকরগুজারি করা উচিত। এতো রেগে থাকা মানুষকে সাধারণ মানুষ আস্থায় নেয় না। আপনারা এক সময় এই জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন। গ্রাউন্ডেড হোন। তাদের সমস্যা সমাধান করুন। হাসিখুশি থাকুন। লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হোন।

রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেখেন আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে না। আমাদের সত্যিকারের রিস্ক হল যদি আমরা ডেলিভার করতে না পারি। আমরা বলতে আমি বোঝাচ্ছি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি ও সরকারের সমর্থকদের। এই কাজটা কোনোভাবেই সম্ভব না যদি আমরা আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য মোতাবেক সার্বক্ষণিক ছ্যাচড়ামিতে নিয়োজিত থাকি। আল্লাহর ওয়াস্তে বোঝার চেষ্টা করেন যে এই তিন পার্টিরই রাজনৈতিক স্পেকট্রাম ডান দিকে। আপনারা কোনোভাবেই নিজের ক্ষতি না করে সার্বক্ষণিকভাবে ফাইট করতে পারবেন না। হেল্প করুন, কোঅপারেট করুন। প্রত্যেকেই লাভবান হবেন। নাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমাগত ফার-রাইটের দিকে যাবে এবং সেটা কারো জন্যেই ভালো হবে না। বাংলাদেশের রিয়াল থ্রেট হল এর তিন দিকে এমন একটা মিডল-পাওয়ার ঘিরে রেখেছে- যেই দেশটাকে শুধু ইসলামোফোবিয়াই একত্র করে রেখেছে। এখানে ক্রমাগত হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটবে। আমরা যদি এর প্রতিক্রিয়ায় অনুরূপ ফার-রাইট পলিটিক্সে ঝুঁকে পড়ি- সেটা হবে এগ্জিস্টেনশিয়াল থ্রেট। মধ্যপন্থা ছাড়া আমাদের আর কোনো রাস্তা নাই এই মুহূর্তে।

সবশেষে ফাহাম আব্দুস সালাম বলেন, ডেয়ার আই সে- জুলাই থেকে বের হোন। সবচাইতে বড় কথা এতো হাইটেন্ড অবস্থায় থাকবেন না। এতো উত্তেজিত থাকলে আপনি কোনো কাজ শেষ করতে পারবেন না। জুলাই থাকবে, আমাদেরই থাকবে। কিন্তু এর সুফল সাধারণ মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। ভবিষ্যতে যদি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়- আপনাকে একবারও উচ্চারণে জানাতে হবে না, কোনো লম্বা লম্বা কথা লাগবে না- তার মনে জুলাই আরো বড় হতেই থাকবে। মানুষের মাথা এরকম যে সে আজকের অবস্থার প্রেক্ষিতে আগের অনুভূতিকে লম্বা, ছোটো ও মহৎ করতে পারে। এটাই তার স্বভাব। জুলাই ঠিক এরকমই একটা অনুভূতি। আমরা যদি ডেলিভার করতে পারি- মানুষ জুলাইকে আরো উঁচুতে নিয়ে যাবে।