
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে জামায়াতের সাবেক নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেকে। আর এতেই আপত্তি বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর। এ নিয়ে বিক্ষোভের পর ছবিগুলো সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। আজ বুধবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় টিএসসিতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে বলছেন, ফ্রেমের ছবিগুলোতে যেসব ব্যক্তিবর্গের ছবি ছিল, তাদের অপরাধ প্রমাণযোগ্য নয়। তারা বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। এ বিষয়টি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্যান্য জাতীয় নেতারা বিভিন্ন সময় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুকের এক পোস্টে শাখা ছাত্রশিবিরের সুস্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে এ তথ্য জানান।
ফরহাদ বলেন, আমাদের ৩ দিন ব্যাপী আয়োজনের ফটোফ্রেমগুলোর একটা অংশ নিয়ে কুতর্ক এবং মব সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ গৌরবজনক অধ্যায়। বাকশাল কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধকে প্রথমবারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে শাহবাগের পুর্বসূরীরা। ২য় দফায় ২০১৩ সালে শাহবাগ কায়েম করে আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিবাদ বানায় এই শাহবাগ। শাহবাগ ও বাকশালের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান জারি থাকবে।
তিনি বলেন, হাসিনা গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে গত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ যত অপরাধ করেছে, তার প্রতিটিকেই আমরা উপস্থাপন করেছি। যেমন- শাপলা হত্যাকাণ্ড, সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি। একইসাথে শাহবাগের মবতান্ত্রিক ট্রাইব্যুনাল নাটকের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। ফ্রেমের ছবিগুলোতে যেসব ব্যক্তিবর্গের ছবি ছিল, তারা বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। এ বিষয়টি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্যান্য জাতীয় নেতারা বিভিন্ন সময় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
‘‘কথিত বিচারে সাইদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে আসা হিন্দু ব্যক্তিকেও গুম ও ভারতে পাচার করা হয়। মীর কাশেম আলীর মামলায় তার সন্তান ব্যারিস্টার আরমান আইনজীবী হিসেবে ভূমিকা রাখছিলেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদী বাহিনী তাকেও গুম করে। চট্টলার সিংহ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকেও ওরা গুম করে।’’
তিনি বলেন, সারা দুনিয়ার মানবাধিকার সংস্থা, পর্যবেক্ষক এবং যুদ্ধাপরাধ বিচারের এক্সপার্টরা সর্বসম্মত মত দিয়েছেন— এই বিচার সুষ্ঠু নয়, বরঞ্চ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিশেষ করে, স্কাইপি কেলেঙ্কারির ঘটনা জাতির সামনে উন্মোচন করেছে— রায়গুলো ছিল ফরমায়েশি। এমনকি বিচারকরাও জানতেন, তাদের অপরাধ প্রমাণযোগ্য নয়।
‘‘সম্প্রতি Alliance for Witness Transparency— AWT নামক একটি বেসরকারি সংস্থা ট্রাইব্যুনাল নাটকের সাক্ষীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। সেখানে সাক্ষীরা জানাচ্ছেন, তাদের জীবন নাশ ও পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ানো হয়েছে। ফলে, বিচারের ইতিহাসে এমন নিকৃষ্টতম বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে ক্রিটিক্যাল থাকা, একে প্রশ্ন করার অধিকার সবারই থাকতে হবে। যেহেতু, বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপেই গুম, কেলেঙ্কারি, মিথ্যা সাক্ষ্য, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও সুষ্ঠু বিচারের তোয়াক্কা না করেই ফ্যাসিবাদী কায়দায় রায় প্রদান ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে; সেহেতু এই বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের ন্যায্য রাজনৈতিক অবস্থান জারি থাকবে।’’
ফরহাদ বলেন, শেখ হাসিনার বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা উৎপাদনকারীরা একাত্তরের পরে বাকশাল, ২০০৮ এর পরে ফ্যাসিবাদ, শাপলা গণহত্যা, সাঈদীর রায় পরবর্তী গণহত্যা এবং জুলাই গণহত্যাসহ সকল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের এনাবলার ও বৈধতা উৎপাদনকারী হিসেবে আজীবন চিহ্নিত থাকবে।