
AB Zubair (এবি জুবায়ের)
সকাল ৮.৩০ এর দিকে বন্ধু Mostafizur কে বের হই বাসা থেকে। ৯ টায় শহিদ মিনারে সমবেত হওয়ার কথা। আপডেট পেলাম সেখানে পুলিশ গু'লি চালিয়েছে, বহুলোক হতাহত।
এরপরে প্ল্যান ছিলো শাহবাগে কেন্দ্রীয়ভাবে সমাবেশ করার। আমরা রিক্সা নিয়ে শাহবাগের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা দেই। পলাশী হয়ে নীলক্ষেত হয়ে যাচ্ছি। রাস্তায় মানুষজন তেমন নেই বললেই চলে। স্পটে স্পটে বিজিবি, পুলিশ, সেনাবাহিনীর আনাগোনা। চেক পয়েন্ট বসানো। সোজা পথে ক্যাম্পাস হয়ে শাহবাগ যাওয়ার জো নেই। ভাবলাম কাটাবন মোড় হয়ে শাহবাগ যাই। কিন্তু নীলক্ষেত হয়ে যে কাটাবন যাব তাও পারছি না, পুলিশী টহলের কারণে। পরে নিউমার্কেট হয়ে সাইন্সল্যাবের সামনে থেকে কাটাবন আসি। মেইন রোড হয়ে না, গলিপথ ধরে। কাটাবনে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট, কড়া চেকিং হচ্ছে৷ শাহবাগের দিকে কাউকে যেতে দিচ্ছে না৷ রিকশা ছেড়ে দিয়ে একজন একজন করে মসজিদ এরিয়ার ভেতর থেকে ঢুকে সিগন্যাল পার হয়ে শাহবাগ পৌঁছাই।
গিয়ে দেখি থমথমে পরিস্থিতি। শাহবাগ মোড়ে রোডের চারিদিকে কয়েক প্লাটুন সেনাবাহিনীর সশ'স্ত্র সতর্ক অবস্থান। আছেন একঝাক সাংবাদিক। আর কেউ নাই কোথাও! রাফি কে ফোন দিয়ে আসতে বললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছোটভাই আরিফকে নিয়ে চলে আসে রাফি।
আসিফ ভাই, নাহিদ ভাইদের খোঁজ নাই, ফোনে কল ঢুকছে না। মাহিন ভাইকেও ফোন দিয়ে পেলাম না। কারো কোনো খবর নাই! পরে ফোন দিলাম Md Abu Shadik ভাইকে যে ভাই কী করা যায়? আমরা তো ঘোষণা দিয়েছিলাম কোটি মানুষের উপরে জমায়েত হবে। মানুষজন কি আসবে না? ভাই বললেন থাকো, আমাদের লোকজন যাচ্ছে। ভরসা পেলাম ওনার কথায়।
অবস্থান নিলাম পিজি সংলগ্ন মেট্রোর নিচে। কোটি মানুষের সমাবেশ হওয়ার কথা, অথচ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কেউ আসতে পারছে না৷ কি করি! আরিফকে বললাম সাংবাদিকদের জড়ো কর। ব্রিফিং করবো আমি। ও সাংবাদিকদের ডেকে আনলে আমি ব্রিফিং করি, "আজ যেভাবেই হোক সমাবেশ হবে শাহবাগে৷ এখান থেকেই গণভবনে যাত্রা করবো আমরা। দেশবাসীকে ভয় উপেক্ষা করে চলে আসতে বললাম। বললাম যে কম হলেও ৫০ লক্ষ মানুষ শাহবাগে আসছে। সেনাবাহিনীকে অনুরোধ জানাই জনতার কাতারে নেমে আসার। আর নাহলে যেন নিরপেক্ষ থাকে।
এর মধ্যেই সেনাবাহিনীর জওয়ানরা কয়েকবার ব'ন্দুক উচিয়ে চলে যাওয়ার ওয়ার্নিং দিয়ে গেল। তাদের ভাষ্য হচ্ছে এখন কারফিউ চলে, বাসায় চলে যান। নাহলে গু'লি করবো। আমরা একটু পিছিয়ে আসি। এসে পিজির গলির মুখে অবস্থান নেই।
ইতিমধ্যেই একজন দুজন করে লোকজন আসতে শুরু করে। আমরা তাদেরকে শান্ত করে পিজির গলির ভেতরে রাখি৷ এর মধ্যে একটা ছেলে আসে জুম্মান নামে। ছেলেটা পুরো যাত্রায় আমাকে ভালোই সাপোর্ট দিয়েছে সাথে থেকে। পরে জানতে পেরেছি সে ছাত্রদল কর্মী।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে লোকজন আসতে শুরু করে। উত্তেজিত জনতা! চায় স্লোগান দিতে, আন্দোলন করতে। কিন্তু একটু আওয়াজ করলেই সেনাবাহিনী এসে শাসিয়ে যায়। আমরা সেনাবাহিনীর সাথে কয়েক দফায় আলোচনা করি। বলি যে আমি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। এখানে যারা আছেন তারা কোনো বিশৃঙ্খলা করবে না এটা আমার দায়িত্ব। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন। তারা শর্ত দেয় কোনো শব্দ করা যাবে না এবং রাস্তায় আসা যাবে না। আমি তাদের কথা মেনে নেই৷ ধীরে ধীরে লোকবল বাড়তে থাকে। বিচ্ছিন্নভাবে যারা আসছিলেন সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করে পিজির গলিতে রাখতে থাকি আমরা।
কিন্তু জনগণ উত্তেজিত, তারা শান্ত থাকতে নারাজ। আমরা তাদেরকে জড়ো করে দুই দফায় বক্তব্য দেই। তাদেরকে আশ্বস্ত করি যে, শাহবাগ আমরা দখল করবোই করবো। কিন্তু এখনই পারবো না। আমাদেরকে একটু কৌশলী হতে হবে৷ কিছুক্ষণ ধৈর্য্য ধরুন, লোক আসছে আরো। তারা আসলেই আমরা একত্রে গিয়ে শাহবাগ চত্বরের দখল নিয়ে নিব।
সাদিক কাইউম ভাই আর S M Farhad ভাইর সাথে যোগাযোগ হয় আমার। ওনারা আশ্বস্ত করলেন যে কিছুক্ষণের মধ্যেই মিছিল যাবে শাহবাগে।
এরমধ্যে সেনাবাহিনীর ওখানকার এক কমান্ডার ডেকে নেয় আমাকে৷ বলে তোমার সামনে দুটো পথ, হয়তো গলি খালি করে দাও নাহলে পিছিয়ে যাও। একদম হাসপাতালের গেট পর্যন্ত পিছাতে হবে৷ নাহলে আমরা কিন্তু গু'লি করতে বাধ্য হব, কারফিউ চলছে এখন৷ আমি তাকে কথা দেই লোকজন পিছিয়ে নিব।
কিন্তু পিছিয়ে গেলে একটা ভয় ছিলো যে কোনো এক্সিট পয়েন্ট থাকবে না আর। সামনে তো সেনাবাহিনী আছেই, পেছন থেকে অন্য কেউ এসে আটকে দিলেই ভেতরে আমরা স্যান্ডউইচ হয়ে যাই। এদিক-সেদিক মুভ করার আর সুযোগ থাকবে না। যাইহোক ওখানেই অবস্থান করি।
ফরহাদ ভাইকে বললাম ভাই কী করবো? এই এই অবস্থা। ভাই বললেন আর একটু সবর করতে হবে। মিছিল রওয়ানা হয়ে গেছে। পারলে একটা মাইকের ব্যবস্থা কর। কিন্তু এই সময়ে মাইক পাব কই! সব দোকানপাট বন্ধ। মাইক আর পাইনি।
যাইহোক এসব করতে করতেই জোহরের আজান দেয়। সিদ্ধান্ত নিলাম রাস্তায়-ই নামাজ পড়বো। দুই লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম পিজির গলিতে। চার রাকাত ফরজ নামাজ শেষ করে জুতার ফিতা বাধছি। এরমধ্যেই সাদিক ভাই ফোন দিলেন যে যারা আছে তাদের নিয়ে শাহবাগ চত্বরের দিকে আগাও। মিছিল প্রায় পৌঁছে গেছে।
দূর থেকে আবছাভাবে দেখতে পেলাম ধুলি উড়িয়ে মিছিল আসছে রমনার দিক থেকে। শব্দও কানে আসতে শুরু করলো। এক দুই তিন চার - খু'নি হাসিনা গদি ছাড়। সেনাবাহিনীও ওদিকে ফিরে অবস্থান নিল দেখলাম। রাফিকে বললাম কী করবো? বলে আল্লাহ ভরসা, আমরাও আগাই। আল্লাহর উপর ভরসা করে চিৎকার দিয়ে স্লোগান তুললাম। নারায়ে তাকবীর। পিজির গলিতে আমাদের সাথে তখন প্রায় পাঁচ-সাতশত মানুষ। সম্মিলিত কণ্ঠে জবাব ভেসে আসলো "আল্লাহু আকবার"।
এরপরের মুহুর্তগুলো ঘটে গেলো চোখের পলকেই। মিছিল নিয়ে এক দৌড় দিয়ে শাহবাগ চত্বরের দখল নিয়ে নিলাম আমরা। সেনাবাহিনী উভয় দিকেই মিছিল দেখে কী করবে বুঝতে না পেরে এক সাইডে চেপে আসে৷ মুহুর্তেই শাহবাগের চিত্র পাল্টে যায়। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় শাহবাগ৷ সবার মধ্যেই বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস।
লোকজন গিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়ি ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে শুরু করে৷ জাওয়ানরা হ্যান্ডমাইকে বারবার সবাইকে শান্ত থাকতে বলেও ব্যর্থ হয়৷ সামলাতে না পেরে একজনকে পাঠিয়ে আমাকে ডেকে নেয়৷ আমার হাতে মাইক দিয়ে সবাইকে শান্ত করতে বলে। আমাকে আশ্বস্ত করে তারা আমাদেরকে বাধা দিবে না৷ সহায়তা করবে৷
আমি আস্তে করে মাইকটা নিয়ে চলে আসি ভেতরের দিকে। রাফি, জুম্মানরা ধরে আমাকে তুলে দেয় থানার দিকের একটা রোড ডিভাইডারের উচু জায়গায়। আমি সবাইকে আহবান করি৷ ভাইয়েরা আমার কথা আপনারা শুনুন, সেনাবাহিনির সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ কইরেন না এখন।
শুরু করি আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠে স্লোগান - এক দফা এক দাবি - হাসিনা তুই কবে যাবি! ইতিমধ্যেই আমার সাথে এসে যোগ দেয় আমাদের সহযোদ্ধা Musaddiq। মিলেমিশে শাহবাগ জমিয়ে তুলি আমরা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি শাহবাগ থানা থেকে পুলিশ বের হয়ে আসছে। গু'লি চালাবে এমন ইনটেনশন! সেনাবাহিনীর অফিসারকে ডেকে বলি পুলিশ সামলান৷ একটা গু'লিও যেন শাহবাগে না চলে৷ এর খেসারত আপনাদের দিতে হবে কিন্তু। পরে সেনাবাহিনীই পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয় এবং শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয়৷ যাতে জনতা থানায় আক্রমণ না করে।
শাহবাগ তখন হাজারো জনতার ভীড়ে তিল পরিমাণ খালি জায়গা শূন্য। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর অফিসার আমাকে বলে কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনীর প্রধান জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দিবেন৷ আমার মনে একটু খটকা লাগলো। হাসিনা তো এখনো রিজাইন করে নাই। সে থাকতে সেনাবাহিনীর প্রধান কেন এই মুহূর্তে ভাষণ দিবে! আবার কিছুক্ষণ পরে দেখি মোবাইলের ইন্টারনেটও চলে আসছে! সকাল থেকে নেট ছিলো না।
ঘটনা কী! এরমধ্যেই একজন ফোন দিলো ভাই ঈদ মোবারক। খু'নীটা হেলিকপ্টার নিয়ে ভাগসে! আল্লাহু আকবর!
এই ঘোষণা শাহবাগে দিতেই জনতার মধ্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়৷ সকলের চোখেমুখে কি আনন্দের ঝলক। ঈদ মোবারক বলে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করছে৷ কেউ বা বোতলের পানি গোলাপজলের মতো ছিটিয়ে প্রকাশ করছে আনন্দ। লোকজন এসে আমাদের জড়িয়ে ধরছে। চুমু দিচ্ছে, ছবি তুলছে! আহ এইদিন আমি জীবনেও ভুলবো না।
ছাত্রদলের আবিদ ভাই এসে আমার মুখে একটা খেজুর তুলে দেয়। বলে মিষ্টি তো এখন পেলাম না, আপাতত খেজুর খা। পরে ওনাদের দলের কিছু লোকজন আসে তারা ওখানে দাড়িয়ে ছবি টবি তুলে। আর আমরা নিচে নেমে আসি জনতার কাতারে।
একটু পরে দেখি উমামা ফাতেমা আপু আসছে৷ জনতার সাথে মিলে উদযাপন করছে৷ নাহিদ ভাই আর আসিফ ভাইও আসে তখন রিক্সা নিয়ে। ভীড় ঠেলে চলে যায় সম্ভবত গণভবনের দিকে।
আমি একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বসে পড়ি মেট্রোর নিচে রাস্তার উপর। সাথে দেখি মোস্তাফিজ, জুম্মান আর আরিফও আছে। ওরাও বসে পড়ে আমার সাথেই। ভীড়ের মধ্যে রাফি আর মোসাদ্দেক যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে।
বসে বসে ভাবি কি করবো? শরীরে তো কুলাচ্ছে না আর। বাসায় ফিরে যাব কিনা৷ আরিফ জেদ ধরছে সে গণভবনে যাবেই। জুম্মান আর মোস্তাফিজও গণভবনে যাওয়ার পক্ষে। অগত্যা হাটা দিলাম গণভবনের পথে৷
রাস্তায় তিল ধারণের ঠাই নাই। পিপড়ার সারির মতো মানুষ। পথে পথে যত আওয়ামী স্থাপনা পাচ্ছে মানুষ সব ভেঙে দিচ্ছে৷ হুলস্থুল একটা অবস্থা।
পথে এক বাসায় একটু থেমে ওয়াইফাই কানেক্ট করে একটা ভিডিও আপলোড দেই। মানুষকে সতর্ক করে যে কেউ যেন সরকারি কোনো স্থাপনার ক্ষতি না করে৷
তারপর হাটতে হাটতে গণভবনে পৌঁছাই। গেটে প্রচন্ড ভীড়৷ আমরা দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকি। ভেতরে দেখি মানুষজন আনন্দে দিগবিদিক ছোটাছুটি করছে। কেউ গণভবনের পুকুরে গোসল করছে কেউ স্মৃতি হিসেবে আসবাবপত্র নেয়ার পায়তারা করছে৷ বলতে গেলে একপ্রকার লুটপাট শুরু হয়ে যায়। অনেকে আবার এদেরকে নিবৃত্ত করছে৷ আমরাও কয়েকজনকে নিষেধ করি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! যে যা পারছে নিয়ে যাচ্ছে৷
আমরা গণভবনের পুকুরে নামি, সাতার কাটি। মোস্তাফিজ আমার কাছে মোবাইল মানিব্যাগ দিয়ে ওও নামে। পরে উঠতে গিয়ে ও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওরে আর খোজাখুজি করেও পেলাম না৷
যাইহোক, জুম্মান আর আরিফ ঘোরাঘুরি করতে লাগলো। আর আমি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আসরের নামাজ পড়লাম গণভবনের সামনের মাঠে। আশপাশে হাজারো নারী-পুরুষ শোকরানা সিজদাহ দিচ্ছে। সে এক অন্যরকম দৃশ্য!
মোস্তাফিজকে খুঁজতে বের হলাম। অনেক খুঁজেও পেলাম না। এদিকে আমার ভেজা ড্রেস শরীরেই শুকিয়ে গেছে!
পথিমধ্যে বর্তমান বাগছাস নেতা আরিফ ভাইর সাথে দেখা। তার সাথে হাটতে হাটতে সংসদ ভবনে ঘুরলাম। সেখানেও একই চিত্র, মানুষ যে যা পারছে নিয়ে যাচ্ছে! একজন দেখলাম পুড়িয়ে ফেলা একটা গাড়ির নাটবল্টুও খুলে নিয়ে যাচ্ছে। গণলুটপাট চলছে টাইপ অফ!
প্রচুর মানুষ! আনন্দ করছে হাসছে ছোটাছুটি করছে। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে বের হয়ে আসলাম আমরা। গেটের দিকে অত্যাধিক ভীড়! দেয়াল টপকে বের হলাম।
এবার ক্যাম্পাসে ফেরার পালা। কিন্তু রাস্তাজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ! কোনো গাড়ি নাই। এদিকে তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ! উপায়ান্তর না পেয়ে হাটা শুরু করলাম। কিছুদূর পরপর আগুন! বিভিন্ন স্থাপনা, গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে লোকজন।
পথিমধ্যে এক হুজুর দেখলাম মানুষকে পানি খাওয়াচ্ছে। বড়ো ড্রাম ভরা পানি, গ্লাসে করে খাওয়াচ্ছে। আমরাও খেলাম মন ভরে। হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসে চলে আসি৷ ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
দেখি রাজুর সামনে প্রচুর মানুষ। মেট্রোর পিলারে আকা হাসিনার ছবিতে গণজু'তা মারতেছে। একজন উপরে উঠে সমানে ঝাড়ু দিয়ে পে'টাচ্ছে শুয়োরটার মুখের উপর!
কেউ বাজি ফোটাচ্ছে! আতশবাজি! সবমিলিয়ে যেন উৎসব চলছে! আমার পা আর চলে না। চোখদুটোও চায় বন্ধ হয়ে আসতে! সারাদিনের ক্লান্তি!
আরিফ ভাই যাবে চানখারপুল। তার সাথে আবার হাটা শুরু করলাম। হাটতে হাটতে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার পর্যন্ত এসে ভাইকে বিদায় দিয়ে দিলাম। দিয়ে আমি রাস্তার পাশেই বসে পড়লাম! শরীর আর চলে না! একটু বিশ্রাম নিয়ে নেই।
এরমধ্যেই ফরহাদ ভাইয়ের ফোন। তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঘোষণা দিতে হবে যে আমরা ৭.৩০ এ শহিদ মিনারে আমাদের শহিদদের গায়েবানা জানাজা পড়বো।
তাকিয়ে দেখলাম ঘড়ির কাটায় ৬.৫০ বাজে। মোবাইলের ইন্টারনেটও কাজ করছে না মানুষের ভীড়ে! একমাত্র উপায় ওয়াইফাই। সময়ও নাই হাতে! ক্লান্তি ভুলে উঠে দৌড় শুরু করলাম।
গন্তব্য লালবাগ, মোস্তাফিজের বাসায় গিয়ে ওয়াইফাই কানেক্ট করে ঘোষণা দিব জানাজার। এসএম হল পর্যন্ত এসে আর দৌড়ানোর ক্যালোরি নাই।
দেখলাম রাস্তার পাশে মোটর সাইকেল নিয়ে বসে আছে একজন। বসে বসে আরেকজনের সাথে কথা বলছে৷ কাছে গিয়ে দেখলাম যার সাথে কথা বলছে তারে চিনি আমি। এক ছাত্রদল নেতা। নামধাম জানি না, ফেস চিনি। তারে বললাম আমাকে একটু আর্জেন্ট লিফট দিন। পরিচিত সেই ছাত্রদল নেতার কথায় রাজি হলেন উনি।
পরে উনি নিয়ে গেলেন আমাকে বাইকে করে। পথিমধ্যে খোঁজখবর নিলেন আন্দোলনের। বললেন পোস্ট করে আবার একটু বের হতে। জরুরি কথা আছে। আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বললেন আমি দাঁড়াচ্ছি, তুমি একটু আসো।
কি আর করার! গিয়ে পোস্ট দিয়ে আবার আসি তার কাছে। বললেন বাইকে উঠো। জোরাজোরি করলেন, অগত্যা উঠলাম। উনি মূলত আমাকে মিষ্টি খাওয়াবেন। ওনার আন্তরিকতা দেখে আমিও আর না করতে পারিনি। কিন্তু এই রাতের বেলা মিষ্টি কোথায় পাবেন! সব দোকানপাট বন্ধ আন্দোলনের কারণে! বহু জায়গায় খোজাখুজি করেও মিষ্টি পাওয়া গেল না৷ পরে এক গলির ভেতরে একটা কেকের দোকান পাওয়া গেল। সেখান থেকে কেক, জুস, হাবিজাবি খাওয়ালেন৷ কিছু পার্সেল করে দিলেন এবং জোর করে আমার হাতে হাজার তিনেক টাকা গুঁজে দিলেন৷
আমি নিব না, ধমক দিলেন তিনি। আমি তোমার ভার্সিটির বড়ো ভাই। বড়ো ভাইদের কথা শুনতে হয়। কি আর করার! পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন জোর করে। তার বাসায় যেতেও সাধাসাধি করলেন অনেক। আমি আর যাইনি। পরে উনি আমাকে মোস্তাফিজের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। জানতে পারলাম উনিও ছাত্রদল করতেন।
বাসায় ঢুকে গোসল করলাম। সারাদিনের ক্লান্তি জেকে বসলো আবার! গোসল, নামাজ সারতে সারতে দেখি মোস্তাফিজ কই থেকে আস্ত একটা মুরগী ভুনা জোগাড় করেছে। সাথে মোজো! খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে একটু ফেসবুকে ঢু মারলাম। ভিডিও বার্তা দিলাম একটা! কোনো একজনের সাথে কথা বললাম ক্ষাণিক! তারপর ঘুমের রাজ্যে!