
Ibrahim Khalil Shawon (ইব্রাহিম খলিল শাওন)
হাসিনা পালানোর পর প্রথমে ঢুকেছিলাম সংসদ ভবনে। সেখানে অনেকক্ষণ থাকার পর তারপর রওনা দিলাম গণভবনের দিকে।
গণভবনের দিকে রওনা হবার পর দেখা হয় একটা ছেলের সাথে। তখন একসাথে বিজয় স্লোগান দিচ্ছিলাম সবাই।
হাঁটতে হাঁটতে অনেকক্ষণ কথাও হয় ছেলেটার সাথে।
ছেলেটা কলেজের স্টুডেন্ট। বাড়ি রাজশাহী।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'এতদূর থেকে আসলে কিভাবে? প্রত্যেক পয়েন্টে তো পুলিশ, সেনাবাহিনী থাকার কথা।'
ছেলেটা বলল, 'ভাই লং মার্চের তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় আমরা দুই বন্ধু মিলে তাড়াহুড়ো করে রওনা দিছি। পরে যদি আবার না আসতে পারি।'
আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'পুলিশ কোথাও আটকায় নি?'
ছেলেটা উত্তর দিল, 'অনেককেই আটকাইছে। আসতে দেয় নাই। লীগের পোলাপান কয়েকজনকে কোপাইছেও। এজন্যে আমরা অন্য একটা ব্যবস্থা করেই আসছি।
মোবাইলে শেখ মুজিব আর হাসিনার অনেকগুলো ছবি ডাউনলোড করে রাখছি। পুলিশ ধরলে বলতাম আমরা ছাত্রলীগের পোলাপান।' বলেই ছেলে দুইটা একসাথে হাসি দিল।
তারপর আবার বলতে শুরু করল, 'আর পড়ে আসছি সবচেয়ে পুরাতন গেঞ্জি আর প্যান্ট টা। দেখলে যাতে মনে হয় কোন এতিম গরীব ছেলে। তাইলে আটকাইবো না।
যেভাবেই হোক আসতেই হইব এই শপথ নিয়াই রওনা দিসি। সরাসরি আসতে পারি নাই অনেকবার গাড়ি চেঞ্জ করে ভেঙে ভেঙে আসতে হইছে।'
তারপর আমি ছেলেটার মোবাইলের ওয়ালপেপারে দেখলাম - নাম, বাবার নাম, কলেজের নাম, নাম্বার লেখা একটা ছবি। যাতে মারা গেলেও কেউ চিনতে পারে এজন্যে এই ব্যবস্থা। ওর বন্ধুর মোবাইলেও একই।
আমি ওয়ালপেপার টা লক্ষ্য করতেছি দেখে ও আমাকে আরেকটা জিনিস দেখাল। গেঞ্জির ভেতরের সাইডে একটা ছোট কাগজে নাম, ঠিকানা লিখে পিন দিয়ে আটকে রাখা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'মোবাইলে থাকার পরও আবার এখানে লাগানো কেন? তাও আবার গেঞ্জির ভেতর।'
ছেলেটা বলল, 'এটা আমার মায়ের বুদ্ধি। মা ই আসার সময় এটা লাগাই দিসে। যাতে ভিড়ের মধ্যে যদি
মোবাইল টা হারাইয়াও যায় আর আমি মারা যাই তাইলে যেন গেঞ্জির ভিতরের ঠিকানা টা দেইখা লাশটা মায়ের কাছে পাঠাইতে পারে।'
কথাগুলো বলতে বলতে ওরা চলে গেল গণভবনের সামনের রাস্তার দিকে। আমি কিছুক্ষণের জন্যে স্তম্ভিত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
যেই মা জীবিত ছেলেকে মিছিলে পাঠিয়ে লাশের জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে পারে এমন সাহসী মায়ের মুখটা বারবার মনে করার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পারছিলাম না!
৫ই আগস্ট, ২০২৪