
জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। পরে স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা দেওয়া শুরু করে দেশটি। তবে এখনো ভ্রমণ ভিসা ইস্যু করছে না ভারত। ফলে বাংলাদেশিরা না যাওয়ায় শুধু কলকাতার মিনি বাংলাদেশ খ্যাত এলাকারই অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার কোটি রুপির বেশি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ খবর জানা গেছে।
বর্তমানে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ খ্যাত ওই এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ধাক্কা থেকে এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ওই অঞ্চল।
এক সময় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য জমজমাট নিউমার্কেট এলাকা এখন পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। সেখানকার হোটেল, রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য ব্যবসার ওপর এই পর্যটক খরার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার কোটি রুপি।
সেখানকার কয়েকটি ব্যবসায়ী সমিতির ধারণা, এক বছরে ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি রুপিরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। অনেকে বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
কলকাতার নিউমার্কেটের পাশে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিট ঘেরা ‘মিনি বাংলাদেশ’ খ্যাত ওই এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য ছিল। সাশ্রয়ী হোটেল, ওপার বাংলার খাবার, কাছাকাছি রেল ও বাস টার্মিনাল আর উন্নত চিকিৎসা সুবিধার জন্য পরিচিত এলাকাটি। এক বছর আগেও মিনি বাংলাদেশের যেসব গলি বাংলাদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখর ছিল, আজ সেখানে কেবল সুনসান নীরবতা।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান বলেন, কেবল মিনি বাংলাদেশ এলাকায় হোটেল, খাবারের দোকান, খুচরা পণ্যসামগ্রীর দোকান, ট্রাভেল এজেন্সি, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা ও পরিবহন খাত মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হতো। নিউ মার্কেট ও বুররাবাজারের ক্ষতি ধরলে এই অঙ্ক ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
এলাকার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয় বন্ধ হয়ে গেছে অথবা স্থানীয় ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে। মারকুইস স্ট্রিটের একটি ট্র্যাভেল কোম্পানির ম্যানেজার প্রবীর বিশ্বাস বলেন, ‘এক বছর আগেও একই সময়ে একাধিক বাস ভর্তি পর্যটক আসতেন, যার ফলে পার্কিং করা কঠিন হয়ে যেত। আর এখন, কোনো কোনো দিন একজনও আসে না।’
বাংলাদেশি টাকা লেনদেনকারী মুদ্রা বিনিময় ব্যবসাগুলোও এখন প্রায় অচল। কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন, মারকুইস স্ট্রিটের সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার বলেন, ‘আমরা টিকে থাকার জন্য লড়াই করছি। আমরা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।’ বড় ব্যবসা ছাড়াও, পর্যটননির্ভর অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি, যেমন ঘরে তৈরি খাবার সরবরাহকারী, হোমস্টে অপারেটর, ট্যুর গাইড, এসব ব্যবসাও ভেঙে পড়েছে।